Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ASHA Workers

কাজের মর্যাদা

এখন আশাকর্মীদের রোজগার কমিয়াছে। তাঁহাদের পারিশ্রমিকের একটি বড় অংশ কমিশন-ভিত্তিক।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২০ ০২:২০
Share: Save:

পদটির নাম গালভরা, ‘অ্যাক্রেডিটেড সোশ্যাল হেলথ অ্যাক্টিভিস্ট,’ সংক্ষেপে ‘আশা’। কাজের তালিকাও দীর্ঘ— মাতা ও শিশুর প্রতিষেধক ও পরিষেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রচার, সংক্রামক রোগের তথ্য সংগ্রহ ইত্যাদি। তৎসত্ত্বেও এই গ্রামীণ মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীরা উপেক্ষিত। অতিমারির সঙ্কটে সেই বঞ্চনা আরও প্রকট। আশাকর্মীরা তাঁহাদের নানা অভিযোগের প্রতিকার না পাইয়া অবশেষে ধর্মঘটের পথে হাঁটিবেন বলিয়া ঘোষণা করিয়াছেন। দেশের এমন আপৎকালে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কর্মবিরতি নিতান্ত অনভিপ্রেত। কিন্তু আশাকর্মীদের সহিত আলোচনায় বসিতে, দাবিগুলি বিবেচনা করিতে সরকারের এই অনাগ্রহের কারণই বা কী? কোভিড-১৯ অতিমারির মোকাবিলায় প্রথম হইতেই আশাকর্মীদের নিয়োগ করিয়াছিল সরকার। তাঁহারা গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়া রোগলক্ষণ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করিয়াছেন, ভিন্রাজ্য হইতে প্রত্যাগতদের সন্ধান করিয়াছেন, রোগ সম্পর্কে মানুষকে সচেতনও করিয়াছেন। কিন্তু এই সকল কাজের ঝুঁকি তাঁহাদেরই বহন করিতে হইয়াছে। প্রায় কোনও রাজ্যেই স্বাস্থ্য দফতর অথবা স্থানীয় প্রশাসন হইতে আশাকর্মীদের মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার প্রভৃতি সুরক্ষা-সরঞ্জাম যথেষ্ট পরিমাণে, নিয়মিত মেলে নাই। আশাকর্মীরা হয় যথাযথ সুরক্ষা না লইয়াই কাজ করিয়াছেন— এমনকি, ‘কন্টেনমেন্ট’ এলাকাগুলিতেও— বা নিজেদের অর্থে ক্রয় করিয়াছেন মাস্ক, টুপি, দস্তানা।

যে কোনও সময়েই ইহা অন্যায়, কিন্তু লকডাউনে ইহার অন্যায্যতা অধিকতর। এখন আশাকর্মীদের রোজগার কমিয়াছে। তাঁহাদের পারিশ্রমিকের একটি বড় অংশ কমিশন-ভিত্তিক। মাতা ও শিশুর প্রতিষেধক প্রদান প্রভৃতি নিয়মিত পরিষেবা লকডাউনের মাসগুলিতে স্থগিত থাকিবার ফলে সেই কমিশনে টান পড়িয়াছে। বাড়ি বাড়ি কোভিড তথ্য সংগ্রহের কাজের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকার নানা সময়ে বাড়তি অনুদানের ঘোষণা করিয়াছে। কিন্তু আশাকর্মীদের অভিযোগ, সেই সকল ঘোষিত অনুদানের অঙ্ক সামান্য। তাহাও কখনও অনিয়মিত মিলিয়াছে, কখনও বা হাতে কিছুই আসে নাই। উপরন্তু আশাকর্মীদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি চিকিৎসক বা হাসপাতালের কর্মীদের তুলনায় কম না হইলেও, তাঁহাদের নিয়মিত পরীক্ষা, বিচ্ছিন্নবাস, কিছুরই বিধিসম্মত ব্যবস্থা হয় নাই। এত দিনে পশ্চিমবঙ্গে শতাধিক আশাকর্মী কোভিড-এ আক্রান্ত হইয়াছেন। অভিযোগ, তাঁহারা অধিকাংশই জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনের নিকট যথাযথ সহায়তা পান নাই। সরকারি কাজে নিযুক্ত হইলেও, স্বাস্থ্যবিমা-সহ অন্য সামাজিক সুরক্ষা হইতে তাঁহারা বঞ্চিত, ফলে তাঁহাদের ঝুঁকি অধিক।

আশাকর্মীদের কাজের ঝুঁকি, এবং তাঁহাদের কাজের গুরুত্ব যে সরকার স্বীকার করে না, এমন নহে। কোভিড-যোদ্ধা বলিয়া নানা প্রকারে আশাকর্মীদের সম্মান করিয়াছে রাজ্য। কিন্তু তাঁহাদের মৌলিক চাহিদাগুলির স্বীকৃতি মেলে নাই। কোন দাবি কতটা মেটানো সম্ভব, তাহা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত। কিন্তু অতিমারির আবহে রোগ প্রতিরোধের কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুস্বাস্থ্য হইতে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, সকল বিষয়েই আশাকর্মীদের কাজের গুরুত্ব বাড়িবে বই কমিবে না। অতএব তাঁহাদের আর্থ-সামাজিক সুরক্ষা এবং মর্যাদা প্রতিষ্ঠার কাজটি গুরুত্ব দাবি করে বইকি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ASHA Workers Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE