Advertisement
E-Paper

সাহসিনী

প্রশাসনের তরফে কলিকাতায় সম্প্রতি মহিলাদের একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ শিবির আয়োজিত হইল। আত্মরক্ষার কৌশল শিখিলেন বিভিন্ন বয়সের বেশ কয়েক জন মহিলা।

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৮ ০০:৪৪

তাহা হইলে রুখিয়া দাঁড়ানো যায়। সল্ট লেকের তরুণীর পর দমদমের তরুণীও প্রমাণ করিলেন, সাহসে ভর করিয়া রুখিয়া দাঁড়াইলে শায়েস্তা করা যায় হেনস্থাকারীকে। শহরের নাগরিকরাও প্রমাণ করিলেন, এখনও পার্শ্বে দাঁড়াইবার লোক আছে। এখনও কোনও তরুণী শহরের রাজপথে কোনও দুষ্কৃতীকে তাড়া করিলে তাঁহাকে সাহায্য করিবার জন্য কয়েকটি হাত জুটিয়াই যায়। চলন্ত বাসে কেহ বিকৃতমনস্ক যাত্রীর অশালীনতার প্রতিবাদ না করিলেও যে কিশোরী সেই ভিডিয়োটি জনমাধ্যমে ছড়াইয়া দিয়াছিলেন, তাঁহার সাহসও বিফল হয় নাই। অতি দ্রুত গ্রেফতার হইয়াছে সেই লোকটি। শহর কলিকাতা, এবং সামগ্রিক ভাবে গোটা রাজ্য, যখন মেয়েদের পক্ষে ক্রমে বিপজ্জনক হইয়া উঠিতেছে, তখন এই ব্যতিক্রমী ঘটনাগুলি সাহস জোগাইতে পারে। রুখিয়া দাঁড়ানোর সাহস, প্রতিবাদ করিবার সাহস। একটি কথা স্পষ্ট— যাহারা পথেঘাটে একাকী মেয়ে দেখিলে কুৎসিত মন্তব্য করে, অথবা ভিড় বাসে শরীরে হাত দেওয়ার অপচেষ্টা করে, তাহাদের অধিকাংশই অতি ভীরু। পাল্টা দিলে পলাইবার পথ খুঁজিয়া পায় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেয়েরা ভয় পাইয়া অপমান সহিয়া লহেন, প্রতিবাদ করেন না, এবং সেই ফাঁক গলিয়াই এই অসভ্য লোকগুলি নিস্তার পায়। পর পর কয়েকটি উদাহরণ ভরসা দেয়, হয়তো এই অন্ধকারের শেষ আছে। হয়তো দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়া গেলে মানুষ এই ভাবেই ঘুরিয়া দাঁড়ায়। এবং, হয়তো ভবিষ্যতেও সহনাগরিকরা সমমর্মী হইবেন, মুখ ফিরাইয়া লইবেন না।

প্রশাসনের তরফে কলিকাতায় সম্প্রতি মহিলাদের একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ শিবির আয়োজিত হইল। আত্মরক্ষার কৌশল শিখিলেন বিভিন্ন বয়সের বেশ কয়েক জন মহিলা। তাহাতে হয়তো সাহসিনীর সংখ্যা আরও কিছু বাড়িবে। তাঁহারা নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করিবার প্রথম ধাপটি অন্তত নিজেরাই সারিবেন। কিন্তু, এই মেয়েদের সাহসিকতায় প্রশাসনের দায়িত্ব কিন্তু ফুরাইয়া যায় না। প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রশাসনের কর্তব্য। কেহ নিজে রুখিয়া দাঁড়াইতে পারিলে ভাল। কিন্তু কেহ যদি তাহা না পারেন, তবুও যেন তাঁহার নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়, তাহা নিশ্চিত করাই সুশাসনের অভিজ্ঞান। সন্দেহ নাই, মহিলাদের হেনস্থা করিবার অভিযোগের ক্ষেত্রে কলিকাতা পুলিশ ইদানীং হয়তো কিছুটা সংবেদনশীল হইয়াছে। বহু ক্ষেত্রেই দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, পুলিশের হাতে আরও এক দফা হয়রান হওয়ার ঘটনাও কমিয়াছে। এই পরিবর্তনগুলি অতি জরুরি। কিন্তু, এখানেই থামিলে চলিবে না। বিশেষত, প্রত্যেক হেনস্থাকারীই যে ভীরু হইবে, সেই নিশ্চয়তা কোথায়? দাগি অপরাধীরা সহজে ভয় পায় না। ফলে, নজরদারির পরিমাণ বাড়াইতে হইবে। এই গোত্রের অপরাধ করিবার সম্ভাবনা যাহাদের ক্ষেত্রে বেশি, তাহাদের বিষয়ে সতর্ক থাকিতে হইবে। রাজনৈতিক রঙের প্রশ্নটিও উড়াইয়া দেওয়ার নহে। ক্ষমতাবানদের ঘনিষ্ঠ, অথবা শাসকের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা দুষ্কৃতীরাও যাহাতে কোনও ক্রমেই রেহাই না পায়, তাহা দেখিতে হইবে। এবং প্রয়োজন কঠোর শাস্তি। এমন শাস্তি, যাহা সম্ভাব্য অপরাধীদের মনে ভীতির সঞ্চার করে। রাজ্যটিকে মহিলাদের জন্য নিরাপদ করিতে যাহা প্রয়োজন, তাহার কোনওটিতেই যেন খামতি না থাকে।

Bravery Molestation Women
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy