Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

গুমোট ঘরবন্দির মধ্যে হালকা হাওয়ার ঝলক, কিন্তু সংশয় রইল কিছু

মিউনিসিপ্যালিটির সীমার বাইরে যে সব শিল্প আছে তারাই অধিকার পেয়েছে কারখানার চাকা ঘোরানোর। কিন্তু উৎপাদন চালাতে হবে সামাজিক দূরত্ববিধি মেনেই।

ক্ষীণ হলেও আশার আলো। ছবি— এএফপি।

ক্ষীণ হলেও আশার আলো। ছবি— এএফপি।

সুপর্ণ পাঠক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২০ ১৮:০৪
Share: Save:

অবশেষে জল্পনার অবসান। আর মাত্র কয়েকটা দিন। তার পর গড়াতে চলেছে উৎপাদনের চাকা। খুবই আস্তে। তবে এটাই তো ভাবা হয়েছিল। কিছুটা হলেও এই গুমোটের মধ্যে একটা হাল্কা হাওয়ার ঝলক তো বটেই।

আর এই হাওয়া কিন্তু শহরকে এড়িয়েই। মিউনিসিপ্যালিটির সীমার বাইরে যে সব শিল্প আছে তারাই অধিকার পেয়েছে কারখানার চাকা ঘোরানোর। কিন্তু উৎপাদন চালাতে হবে সামাজিক দূরত্ববিধি মেনেই। শুধু তাই নয়। শিফ্ট বদলের সময় যাতে ঘেঁষাঘেষি না হয়, তা দেখতে দুই শিফ্টের মাঝে এক ঘণ্টার ব্যবধান নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

একই ভাবে সেই সব কারখানাকেই চালু করা যাবে, যেগুলো শিল্পাঞ্চল অথবা এসইজেডের মধ্যে। অর্থাৎ মোদ্দা কথাটা হল— বাজারের চাকা না ঘোরালে মুশকিল, কিন্তু চলবে তারই চাকা যার কর্মীদের বাকি সমাজের থেকে দুরত্বে রাখা যাবে। এটাই এই নীতির মোদ্দা কথা।

আরও পড়ুন: রাজস্থান ৩৫ হাজার, পশ্চিমবঙ্গ ৩১০০, কোন রাজ্যে করোনা টেস্ট কত

খুলে যাচ্ছে কৃষি ও কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় শিল্পের চাকাও। তা না হলে দেশ খেতে পাবে না। চিকিৎসা, বিশেষ করে করোনা এড়াতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সরঞ্জাম তৈরির কারখানাও চালু হয়ে যাবে পুরো দমেই। সরকারের প্রয়োজনে ও আপত্কালীন প্রয়োজনের জন্য নির্দিষ্ট কল-সেন্টারগুলোও খোলা থাকবে। আর্থিক ক্ষেত্রেও চালু থাকবে লেনদেন। আছে আরও কিছু নির্দেশ, বিভিন্ন শিল্প ঘিরে যার মোদ্দা কথাটাই হল, ভিড় এড়িয়ে বাজারকে আস্তে আস্তে সচল করে তোলা।

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরেই কিছু সংশয়ের কথা আলোচনা করেছিলাম। যেমন, পণ্য তৈরি করতে গেলে লাগবে কাঁচা মাল। তার জন্য জরুরি সচল পরিবহণ। এই নির্দেশিকায় তার স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে। পণ্য চলাচলের জন্য আন্তঃরাজ্য পরিবহণ ব্যবস্থা খুলে দেওয়া হয়েছে। যাতে কাঁচা মালের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত না হয়।

ছবি— এএফপি।

জোগানের শৃঙ্খলে দুটি অংশ— উৎপাদন ও ক্রেতার হাতে সেই উৎপাদন পৌঁছে দেওয়া। যাঁরা ব্যবসার কারণেই বড় ক্রেতা, তাঁদের জন্য তো ট্রাক চালু হল। আমার আপনার জন্য? আমি বা আপনি কিন্তু গাড়ি নিয়ে চিকিৎসার কারণ ছাড়া ঘর ছেড়ে বেড়তে পারব না। স্থানীয় বাজার চালু থাকবে, কিন্তু সব যদি স্থানীয় বাজারে পাওয়া না যায়?

নতুন নিয়মে তাই জোর দেওয়া হয়েছে এমনকি পাড়ার দোকানের সঙ্গেও সেই সব সংস্থার যোগাযোগের উপর, যারা নাকি রেস্টুরেন্ট থেকে আপনার চাহিদা মতো খাবার এনে দিয়েছে এতদিন।

আবারও বলি, এই নীতির মোদ্দা আধারই হল বাজার চলুক, কিন্তু তা চলুক এতদিন ধরে চালু নিভৃতবাসের নিয়ম মেনেই। করোনার অভিঘাত কমাতে এই নীতিকে না-মেনে উপায় নেই। কিন্তু এই লেখাটি লেখা পর্যন্ত কতগুলি সংশয় থেকেই গেল। নতুন ব্যবস্থায় আপনার বাড়িতে যাঁরা ইলেক্ট্রিকের বা কলের বা কাঠের কাজ করেন, তাঁরা কাজ করতে পারবেন। কিন্তু তাঁদের তো পাড়ার দোকান থেকেই বাল্ব বা স্ক্রু বা পাইপ আনতে হবে। নীতির চার নম্বর ধারায় কী কী দোকান খোলা থাকবে তার তালিকায় এই জাতীয় দোকানের উল্লেখ নেই। তা হলে কাজটা হবে কী করে? আশা করা যায় এর উত্তর পাওয়া যাবে খুবই তাড়াতাড়ি।

আরও কতগুলি জায়গা নিয়ে সংশয় থেকেই গেল। গতকালের মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই বলি। বর্তমান পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ব্যাখ্যা কী? চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম উৎপাদন যাতে অব্যাহত থাকে, তার জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচা মালের উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয়, তাও নাকি দেখা হবে। কোভিড চিকিৎসায় স্বাস্থ্যকর্মীর দেহবর্ম তৈরি করতে ইলাস্টিক লাগলে তার উৎপাদন কী ভাবে হবে? তার মানে কি ধরেই নেওয়া হচ্ছে যে— এই সব পণ্য শহরাঞ্চলের বাইরেই তৈরি হয়ে থাকে?

ছবি— এএফপি।

আর একটা প্রশ্ন মাথায় এল। রঘুরাম রাজন সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে অনেক প্রশ্নের মধ্যে একটি তুলেছিলেন কল-সেন্টার নিয়ে। রাতারাতি লকডাউন ঘোষণা করায়, মার্কিন ব্যাঙ্কগুলি সমস্যায় পড়েছে। কারণ, মার্কিন অনলাইন ব্যাঙ্কিং, যা করোনা আক্রান্ত বিশ্বে আর্থিক লেনদেন চালু রাখার অন্তম উপায়, ভারতের উপর নির্ভরশীল। আর এই লকডাউনের ফলে এই সেন্টারগুলিও রাতারাতি অথর্ব হয়ে পড়ে।

সবাই বলছে কোভিড উত্তর বিশ্বে সব দেশই চাইবে ঘরের প্রয়োজনের একটা বড় অংশ যেন ঘরেই তৈরি হয়। লকডাউনের ফলে বিদেশি ব্যাঙ্কগুলির ভারতের কলসেন্টারগুলি নিয়ে এই অভিজ্ঞতা নতুন করে ভাবাচ্ছে নিশ্চয়ই। নির্দেশিকার চার নম্বর ধারায় এই অংশটিকেও কি চালু করা যেত না? আগামীতে কাজ হারানোর ভয়ে সিঁটিয়ে আছে চাকুরিজীবীরা। তথ্যপ্রযুক্তিতে এঁদের একটা বড় অংশ নিয়োজিত। এঁদের কথা কি আর একটু গভীরে ভাবা যায় না?

আরও পড়ুন: লকডাউনে কোথায় ছাড়, কোথায় নয়, দেখে নিন

এটাও ঠিক পরিস্থিতি অভূতপূর্ব। বিশ্বের কোনও নীতি-নির্ধারকই অন্ধকারে হাতড়াচ্ছেন কোভিডের বিষের রোষ কী ভাবে কমানো যায়। আমরাও ব্যতিক্রম নই। এই পর্বে তাই আঁধার কাটানোর পথ একটাই— প্রশ্নের অধিকার। একমাত্র এই পথেই আমরা অভিজ্ঞতা অভাবকে পুষিয়ে সমস্যা মেটানোর দিকে আরও একটু দ্রুত হাঁটতে পারি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE