Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Coronavirus

লকডাউনের শিক্ষা

বর্তমান প্রজন্মের স্বল্পবিত্ত মানুষদেরও এমন চরিতার্থতার সন্ধান মিলিয়াছে যাহা ছিল পূর্বপ্রজন্মের নিকট অকল্পনীয় ছিল।

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২০ ০০:২৭
Share: Save:

নির্মল হইয়াছে শহরের বাতাস। সংক্রমণ ঠেকাইতে বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ জনতাই গৃহবন্দি। দেশজোড়া লকডাউন চলিতেছে ভারতেও। কলকারখানা, যানবাহন চলাচল বন্ধ। ফলত, বড় শহরগুলিতে দূষণের মাত্রা ক্রমহ্রাসমান। শুধুমাত্র দূষণই কমে নাই, অত্যাশ্চর্য নানা ঘটনার সাক্ষী হইতেছেন নাগরিকরা। মুম্বইয়ের রাস্তায় ময়ূর ঘুরিয়া বেড়াইতেছে, উত্তরাখণ্ডের জনপদে দেখা মিলিয়াছে হরিণের। ওড়িশার সমুদ্রতীরে নির্ভয়ে ডিম পাড়িতেছে বিলুপ্তপ্রায় কচ্ছপের প্রজাতি, তটে খেলা করিতেছে ডলফিন। আকাশ নির্মল হইবার জন্য পঞ্জাবের জলন্ধর হইতে দেখা মিলিতেছে ধৌলাধার পর্বতশ্রেণির। এমনকি দূষণমুক্ত আকাশে নূতন তারাদেরও খোঁজ পাইয়াছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। মানবসমাজের নিত্য-সহচর যে সকল সরীসৃপ, উভচর প্রভৃতি পশুপক্ষী নগরজীবন হইতে প্রায় অদৃশ্য হইয়াছিল, সেই ভাম, সাপ, টুনটুনি পাখিদের পুনরাবির্ভাব ঘটিতেছে। প্রকৃতিকে ফের আবিষ্কার করিতেছে মানুষ।

সেই আবিষ্কারের অনেকটা জুড়িয়া আছে আত্মবঞ্চনার অনুশোচনা। মানুষের নব নব উন্মেষশালী প্রতিভা গতি-বৈচিত্র-বিনোদনে সমৃদ্ধ এক সমাজজীবন নির্মাণ করিয়াছে। বর্তমান প্রজন্মের স্বল্পবিত্ত মানুষদেরও এমন চরিতার্থতার সন্ধান মিলিয়াছে যাহা ছিল পূর্বপ্রজন্মের নিকট অকল্পনীয় ছিল। সেই সার্থকতার উন্মাদনায় প্রযুক্তি যে প্রকৃতির পরিপূরক হইবার পথ হইতে ভ্রষ্ট হইয়া ক্রমে প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের উপায় হইয়া উঠিয়াছে, তাহা বুঝিয়াও অবুঝ, অবশ হইয়া দিন কাটাইতেছিল মানবসমাজ। যে ব্যাঘ্রের পৃষ্ঠে সে বসিয়াছিল, তাহা হইতে অবতারণের উপায় খুঁজিয়া পায় নাই। এক অতিমারি তাহাকে থমকাইয়া ফের ভাবিতে বাধ্য করিল। মানুষ ফের বুঝিল, ধূম্রাচ্ছাদিত আকাশ, প্রাণীবৈচিত্রহীন বাস্তুভুবন কেবল পরিবেশদূষণের সমস্যা নহে, আত্মপরিচয় বিস্মৃতির দুঃখ।

সম্মুখে কঠিন কর্তব্য। পরিবেশ বাঁচাইতে আর্থিক কর্মকাণ্ড কমাইবার চিন্তা বাতুলতা। অতিমারি-জনিত মন্দা কাটাইয়া উৎপাদনশীলতা বাড়াইতে হইবে, সকলকে জীবিকার সন্ধান দিতে হইবে। আবার পরিবেশের প্রতি উপেক্ষার মনোভাবে ফিরিবার প্রবণতাও প্রতিহত করিতে হইবে। কাজটি অসম্ভব নহে। বিশেষজ্ঞদের মতে, লকডাউন-পরবর্তী সময়ে বাতাসে নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ হ্রাসের প্রধান কারণ শহরে ডিজ়েলচালিত যানবাহনের সংখ্যা হ্রাস। এই তথ্যকে গুরুত্ব দিয়া আগামী দিনে ডিজ়েলের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ জরুরি। জোর দিতে হইবে বাসে সিএনজি-র মতো পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহারে। দিল্লি তাহা পারিলে কলিকাতাই বা পারিবে না কেন? গণপরিবহণে ট্রাম, ট্রেন এবং ইলেকট্রিক বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি, সাইকেলের ব্যবহারকে উৎসাহিত করিবার জন্য পৃথক রাস্তা, স্ট্যান্ড তৈরির প্রস্তাব এ বার কার্যকর করিতে হইবে। দিল্লির দূষণ নিয়ন্ত্রণে যে জোড়-বিজোড় নীতি লওয়া হয়, তাহাকে আরও কার্যকর ভাবে প্রয়োগের পদ্ধতি লইয়াও আলোচনা চলিতে পারে। নিষিদ্ধ হইতে পারে শহরের কেন্দ্রে গাড়ির প্রবেশও। দূষণ হইতে দেশকে বাঁচাইতে চাহিলে শিল্প ও অর্থনীতির সর্বনাশ হইবে, এই অপরিণামদর্শী মনোভাব হইতে বাহির হইয়া বিচক্ষণতা ও বিবেচনার সহিত পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রয়োজন। লকডাউন তাহার পুরস্কারটি দেখাইয়া দিল।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE