বল বিকৃতি কান্ডের পর পেনকে অধিনায়ক করা হয়েছিল ২০১৮ সালের মার্চে। পেন বলেছেন, তিনি ২০১৭ সালেই নিজের এই কুকীর্তির কথা সঙ্গে সঙ্গে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে জানিয়েছিলেন। অর্থাৎ পেনকে অধিনায়ক করার সময় অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড বিষয়টি জানত। তারপরেও ‘নতুন সংস্কৃতি’ তৈরির লক্ষ্যে পেনের উপর দেশের ক্রিকেটের গুরুদায়িত্ব দেয় তারা।
পেনও গুরুদায়িত্ব লুফে নেন। সাড়ে তিন বছর ধরে ঘাপটি মেরে পড়ে থাকেন। যখন দেখেন, তাঁর ‘দায়িত্ব পালন’ করার মার্ক শিট প্রকাশ্যে আসা সময়ের অপেক্ষা, তখন চোখের জল ফেলে সরে গেলেন। একেবারে পকেট থেকে লেখা কাগজ বার করে তিনি জনিয়েছেন ‘ওই ঘটনার সময়ই স্ত্রী এবং পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। আমরা ভেবেছিলাম, বিষয়টি মিটে গিয়েছে। ফলে গত তিন-চার বছর ধরে আমি সম্পূর্ণ ভাবে ক্রিকেটে মন দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন দেখলাম বিষয়টি আর গোপন নেই, জনসমক্ষে এসেছে।’
অর্থাৎ, পেনের সরে যাওয়ার একমাত্র কারণ বিষয়টি জানাজানি হয়ে গিয়েছে। কেউ কিছু না জানলে তিনি ঘাপটি মেরেই পড়ে থাকতেন। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে রুট-কোহলীদের যথেচ্ছ স্লেজিং করে যেতেন, হয়ত সুযোগ পেলেই পকেট থেকে সিরিস কাগজ বার করে বলের চামড়া তুলতেন, হয়ত ঋষভ-রাবাডাদের বর্ণবৈষম্যের চোখে দেখতেন। হয়ত আরও কত কী। এগুলো সবই যে অস্ট্রেলিয়ার চিরকালের ‘নতুন সংস্কৃতি’।
একই বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, আগামী অ্যাশেজে তিনি খেলবেন, ‘সামনেই অ্যাশেজ সিরিজ আছে। অস্ট্রেলিয়া দলের একজন সদস্য হিসেবে নিজের পুরোটা দেব।’ আরও হয়ত ‘সংস্কৃতির’ জন্ম হবে তাঁর হাত ধরে।
বিবৃতির তৃতীয় অনুচ্ছেদে পেন লিখেছেন, ‘ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার তদন্তে প্রমাণ হয়েছিল, আমি কোনও ভাবেই ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার আচরণবিধি লঙ্ঘন করিনি।’ সত্যিই পেনদের বাড়াবাড়িগুলো এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাঁদের জন্য এ বার আচরণবিধির সহজপাঠ, বর্ণপরিচয় লিখতে হবে। সেখানে বলে দিতে হবে, ‘বাবা, মহিলাদের সবসময় সম্মান করতে হয়। তা না হলে অন্যায় হয়। বাছা, মহিলাদের অশ্লীল কথা বলতে নেই, দুষ্টু ছবি পাঠাতে নেই।’ এ বার হয়ত ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া তাদের আচরণবিধির পরবর্তী সংস্করণে ‘মহিলাদের সম্মানরক্ষা’-র অধ্যায়টি অন্তর্ভুক্ত করবে।
তার পরের লাইনে তিনি লিখেছেন, ‘যদিও নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছিলাম, সেই ঘটনার জন্য তখনও আমার তীব্র অনুশোচনা ছিল, এখনও আছে।’ ঠিকই, ‘নির্দোষ’ পেনের অনুশোচনা তখনও ছিল, এখনও আছে।
তখনকার অনুতপ্ত পেন ধবধবে সাদা জামা পরে হাসতে হাসতে মাঠে নেমেছেন, স্লেজিং করেছেন। আর জনৈক মহিলার অসম্মান করার সাড়ে তিন বছর পরে অনুতপ্ত পেন এখন কাঁদছেন।