Advertisement
E-Paper

সঙ্কটের বীজ

ক্ষুদ্র চাষির সহিত বৃহৎ বহুজাতিকের এই সংঘাত বিলক্ষণ শোরগোল তুলিয়াছে। চাষিদের যুক্তি, উদ্ভিদ বৈচিত্র সংরক্ষণ ও কৃষক অধিকার সুরক্ষা আইন (২০০১) অনুসারে চাষি যে কোনও ফসল বা বীজ বিক্রয় করিতে পারেন।

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৯ ০০:২৪

চাষিদের উপর মাথাপিছু এক কোটি টাকা দাবি হইতে নামিয়া ইতিমধ্যেই আদালতের বাহিরে নিষ্পত্তির কথা বলিয়াছে আলুর চিপস্ প্রস্তুতকারক বহুজাতিক সংস্থা। তবে, সংস্থার দিক হইতে দাবির পরিবর্তন হইলেও, আদালতের দিক হইতে জুন মাসের বারো তারিখে পরবর্তী শুনানি অবধি চাষিদের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা জারি রাখিবার নির্দেশ আগের মতোই বলবৎ রহিল। অর্থাৎ ওই সময় পর্যন্ত আলুর বিতর্কিত বীজ হইতে ফলন কিংবা সেই ফলনের বিক্রয় আইনত নিষিদ্ধ রহিল। প্রসঙ্গত, সংস্থাটি চাষিদের দুইটি নির্দিষ্ট প্রজাতির আলুবীজ শর্তাধীন ভাবে সরবরাহ করিয়া থাকে। শর্তগুলি স্পষ্ট। বীজ-নির্গত ফসল কেবল ওই সংস্থাকেই বিক্রয় করিতে হইবে। বিশেষ প্রজাতির ওই বীজের মেধাস্বত্ব কেবল ওই সংস্থার। তাই বীজ পাইবার পর স্বাধীন ভাবে তাহার চাষ করিবার, কিংবা তাহা হইতে উদ্গত আলু বাজারে বিক্রয় করিবার অধিকার থাকিবে না। সংস্থার পক্ষ হইতে অভিযোগ— ওই চাষিরা শর্ত অমান্য করিয়াছিলেন। সুতরাং মামলা।

ক্ষুদ্র চাষির সহিত বৃহৎ বহুজাতিকের এই সংঘাত বিলক্ষণ শোরগোল তুলিয়াছে। চাষিদের যুক্তি, উদ্ভিদ বৈচিত্র সংরক্ষণ ও কৃষক অধিকার সুরক্ষা আইন (২০০১) অনুসারে চাষি যে কোনও ফসল বা বীজ বিক্রয় করিতে পারেন। কেবল কোনও ‘ব্র্যান্ড’ দিয়া বীজ বিক্রয় করিবার উপর নিষেধাজ্ঞা রহিয়াছে। অপর দিকে বহুজাতিক সংস্থাটিও ওই আইনেরই অধীনে তাহাদের আলুবীজের মেধাস্বত্বের অনুমোদন লইয়াছে। একই আইনের দু’টি ভিন্ন ধারা দেখাইয়া দুই পক্ষ আপাতত যুযুধান। আদালতের বাহিরে নিষ্পত্তির মধ্যেও যে শর্ত রহিয়াছে, তাহা সমস্যাজনক। চাষিকে যদি ওই সংস্থার বীজ স্বাধীন ভাবে ব্যবহার না করিবার হলফনামায় স্বাক্ষর করিতে হয়, তবে চাষির বিপন্নতার সম্ভাবনাটি রহিয়াই গেল। বহুজাতিক সংস্থাগুলি বিবিধ শস্য ও সব্জির মেধাস্বত্ব দখল করিলে বিপাকে পড়িবেন চাষি, এমন একটি আশঙ্কা বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠন (ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজ়েশন) সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হইবার পর হইতেই মাথা চাড়া দিয়াছিল। কৃষক সংগঠনগুলি বিচলিত। তাহাদের আশঙ্কা, এখনই এই বিষয়ে চাষির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠিত না হইলে অন্যান্য ফসলের ক্ষেত্রে একই সঙ্কট দেখা দিবে। গুজরাতের কৃষক সংগঠনগুলি দাবি করিয়াছে, চাষির পক্ষ লইয়া আদালতে সওয়াল করিতে হইবে সরকারকে।

সরকার কিংবা রাজনীতির ভূমিকা এই ক্ষেত্রে কী হইতে পারে, তাহা একটি বিশেষ বিবেচনার বিষয়। সাধারণত বাম-ভাবাপন্ন কৃষক সংগঠন এবং অসরকারি গোষ্ঠীগুলি একযোগে বহুজাতিক চুক্তিচাষের বিরোধিতা করিয়া থাকে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাহারা ইতিমধ্যেই সুর চড়াইতে শুরু করিয়াছে। অথচ ভারতীয় কৃষি-অর্থনীতিতে যদি এখন চুক্তিচাষ জোর করিয়া বন্ধ করিয়া দেওয়া হয়, তাহা হইলে বিপন্ন হইবেন চাষিরাই। বরং চুক্তিচাষের মাধ্যমে চাষিকে কী ভাবে ক্ষতি হইতে বাঁচানো যায়, কিংবা, আরও গুরুত্বপূর্ণ, কী ভাবে লাভের অঙ্ক চাষিদের ঘরে তোলা যায়, ইহাই সরকার, অ-সরকারি রাজনীতি ও কৃষক-রাজনীতির লক্ষ্য হওয়া উচিত। যাহাতে সংস্থা-প্রদত্ত বীজের ফলন বাতিল না হইয়া যায়, যাহাতে তাহা চোরাপথে বাজারে চলিয়া না আসে, যাহাতে পাশাপাশি সরকারি অনুমোদন-প্রাপ্ত বীজ ব্যবহার করা সহজ হয়, এই সবই সেই রাজনীতির অংশ হইবার কথা। বহুজাতিক সংস্থার চুক্তিচাষে ‘চুক্তি’ থাকিবেই, এবং সেই চুক্তির শর্তে আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকিবেই। যে রাজনীতি সেই আইন আটকাইয়া ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট বা মেধাস্বত্ব বস্তুটিকে অমান্য করিতে চাহে, তাহা শেষ পর্যন্ত বাজারকেই সঙ্কুচিত করিবে, ফলত চাষিকে ক্ষতিগ্রস্ত করিবে। সে দিক দিয়া দেখিলে, এই মামলাটির ফলাফল কী দাঁড়ায়, তাহার গুরুত্ব অপরিসীম।

Potato Farmers PepsiCo
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy