Advertisement
E-Paper

শৌচালয়ের ব্যবহার এবং বায়োমেট্রিক লেনদেন একই সঙ্গে শিখতে হবে কিন্তু

দেহের শিরা-উপশিরা বেয়ে যে পরিমাণ রক্ত সঞ্চালিত হচ্ছিল, ডাক্তার আচমকা তার ৮৬ শতাংশ শরীর থেকে বার করে নিলেন। ‘রোগী’র নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়, চার দিকে গেল গেল রব! ডাক্তার বললেন, বদ রক্ত ছেঁকে আলাদা করতে হবে, এ ছাড়া আর উপায় ছিল না।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:০৪

দেহের শিরা-উপশিরা বেয়ে যে পরিমাণ রক্ত সঞ্চালিত হচ্ছিল, ডাক্তার আচমকা তার ৮৬ শতাংশ শরীর থেকে বার করে নিলেন। ‘রোগী’র নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়, চার দিকে গেল গেল রব! ডাক্তার বললেন, বদ রক্ত ছেঁকে আলাদা করতে হবে, এ ছাড়া আর উপায় ছিল না।

ছাঁকনিতে বদ রক্ত কতখানি আটকাল তা ডাক্তার এখনও জানাননি। কিন্তু বলেছেন, রক্ত ছাড়াই বাঁচতে শিখতে হবে।

রক্ত ছাড়া কী ভাবে বাঁচতে হবে, সে উপায় ডাক্তারই শিখিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু যুগ-যুগান্তরের অভ্যাস তো সহজে বদলায় না। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো একটু সময় চাইছে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য। ডাক্তারের সাঙ্গোপাঙ্গোদের তাতেও স্বস্তি নেই। তাঁরা এর মধ্যেই আলগোছে শুনিয়ে দিলেন, সময় একেবারেই নেই। কারণ এখন যে উপায়ে বাঁচতে শেখানো হচ্ছে, তার মেয়াদও বেশি ক্ষণের নয়। ‘তিন প্রহর’ কাটলেই আবার অন্য ভাবে বাঁচতে শিখতে হবে।

ভারতীয় অর্থনীতির ছবিটা এখন এই রকমই। বাজার থেকে মোট মুদ্রামূল্যের ৮৬ শতাংশ হঠাৎ উধাও। ডিজিটাল লেনদেন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ডে অভ্যস্ত হতে বলা হল দেশবাসীকে। নিরুপায় হয়ে এক বিশাল এবং অসহায় জনগোষ্ঠী যখন ডিজিটাল হওয়ার উপায় হাতড়াচ্ছে, তখন নীতি আয়োগের কর্তা জানাচ্ছেন, প্লাস্টিক মানি বা কার্ড লেনদেনও মাত্র আর বছর তিনেক। তার পর আরও আধুনিক ডিজিটাল লেনদেনে অভ্যস্ত হতে হবে— বায়োমেট্রিক লেনদেনে অভ্যস্ত হতে হবে।

ভারতকে ভাল ভাবে চেনেন তো এঁরা? সিয়াচেন থেকে সেতুসমুদ্রম পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকা বিস্তীর্ণ ভূভাগের কোন কোন প্রান্তে মানুষের জীবন ঠিক কী ভাবে রোজ কাটে, জানেন তো এঁরা?

দেশবাসীকে পরিচ্ছন্নতার পাঠ দিতে বিপুল সরকারি ব্যয়ে স্বচ্ছ ভারত অভিযান নামে এক সরকারি কর্মসূচি চলছে। জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশকে শৌচালয়ের প্রয়োজনীয়তা এবং ব্যবহার শেখাতে প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করতে হচ্ছে, ঢালাও বিজ্ঞাপন দিতে হচ্ছে। লক্ষ্যে পৌঁছনোর চূড়ান্ত সময়-ফলকটা বসানো হয়েছে ২০১৯ সালের প্রায় শেষ প্রান্তে। অর্থাৎ ২০২০-র মধ্যে ভারতের ঘরে ঘরে অন্তত শৌচালয়টুকু পৌঁছবে, সমগ্র জাতি অন্তত শৌচালয়ের ব্যবহারটুকু শিখবে— এমনই আশা ভারত সরকারের। সেই ২০২০ সালের মধ্যেই নাকি আবার সমগ্র জাতি বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনও শিখে যাবে, নগদ তো দূরের কথা, ডেবিট কার্ড-ক্রেডিট কার্ডও লাগবে না আর! এমনটাও আশা ভারত সরকারের।

জাতীয় জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ মানুষ গ্রামে থাকেন— সংখ্যাটা ৮৫ কোটির আশেপাশে। তাঁদের জন্য ব্যাঙ্ক শাখার সংখ্যা ৩১ হাজারের কিছু বেশি। অর্থাৎ, প্রায় ২৭ হাজার মানুষ পিছু একটা ব্যাঙ্ক শাখা গ্রামীণ ভারতে। এই গণিতও একটি গড় হিসেব মাত্র। প্রত্যন্ত প্রান্তগুলোতে পরিস্থিতি আরও দুঃসহ। সেই দেশের মানুষকে রাতারাতি ডিজিটাল হতে বলা হল। নগদের বদলে প্লাস্টিক মানিতে অভ্যস্ত হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হল। সেই প্লাস্টিক মানি কী বস্তু, তা ঠিক মতো বুঝে ওঠার আগেই, আরও একটা সময়-ফলক নির্দিষ্ট করে দেওয়া হল। সরকার বেশ প্রসন্ন বদনে প্রবাসী ভারতীয় সমাবেশে দাবি করল, ২০২০ সালের মধ্যেই এটিএম ব্যবস্থাও প্রায় উঠে যাবে দেশ থেকে। আরও আধুনিক আর্থিক লেনদেন শিখে নেবেন ভারতবাসী।

ওই একই সময়সীমার মধ্যেই যে দেশবাসীকে শৌচালয়ের ব্যবহারটাও ঠিক মতো শিখিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, সে কথা অবশ্য প্রবাসীদের জমায়েতে উচ্চারিত হয়নি।

Anjan Bandyopadhyay News Letter ATM Debit Card Credit Card Biometric
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy