আপাতত বলিউড খুশি। খুশি ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’ ছবির প্রযোজক-পরিচালক-শিল্পীরা। ছবিটির নিরাপদ মুক্তি নিশ্চিত করা গেল শনিবার। খুশি মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা এবং তাদেরই মতো উগ্র জাতীয়তাবাদের নাম করে গুন্ডামি চালানোর মানসিকতার ধ্বজাধারীরা। একটি বিরাট মুচলেকা আদায় করে নেওয়া গিয়েছে। বলিউড আর কোনও দিন পাকিস্তানি শিল্পীদের নিয়ে কোনও কাজ করবে না। উগ্র শিবিরে তাই এখন উল্লাস।
পরাজয়ের গ্লানি ভিন্ন শিবিরে। এই শনিবার ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে কালো দিন হিসাবে চিহ্নিত হল। এ দিন উগ্র প্রচণ্ডতার কাছে পরাজয় ঘটল সুস্থ চেতনার, হিংসাশ্রয়ী গুন্ডামির পরাক্রমের কাছে পরাজিত হল রাষ্ট্রীয় আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা, অসুস্থ আবেগের কাছে নতিস্বীকার করল স্বাভাবিক যুক্তি ও বিচারবোধ। সহজ প্রশ্নগুলো উত্থাপনের পরিসরও তৈরি করা সম্ভব হল না। পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গিরা আমাদের বাহিনীর উপর হামলা চালিয়েছে, তার সঙ্গে ফাওয়াদ খান অথবা পাকিস্তানি শিল্পীদের সম্পর্ক কোথায়? ভারত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করল, তাতে পাক শিল্পীদের বহিষ্কারের দাবি সঙ্গত হয়ে যায় কী ভাবে? পাকিস্তানের সঙ্গে রাষ্ট্রগত সম্পর্ক বন্ধ হয়নি, কূটনৈতিক দরজা খোলা, বাণিজ্যও অবারিত, সিন্ধুর জল প্রবাহিত হচ্ছে চুক্তি অনুযায়ীই, এবং ওয়াঘা সীমান্তে বিটিং রিট্রিটেও ছেদ পড়েনি এ পর্যন্ত। তবে কোপ কেন শুধু পাকিস্তানি শিল্পীদের উপরেই? সম্পর্কের এত উত্তেজনার মধ্যেও সংস্কৃতির যে স্রোতে দুই দেশের মনন-আবেগের মিলন ঘটছিল, সেখানেই এই ভাবে বাঁধ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ল কেন?
প্রশ্ন আরও অনেক। এহেন বৃহৎ ও ন্যক্কারজনক সিদ্ধান্ত রয়ে গেল, রাষ্ট্র রইল নীরব দর্শক হয়ে? দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন ফিল্মটির নির্বিঘ্ন মুক্তির, কোনও মুচলেকা ছাড়াই— যেমনটা প্রত্যাশিত গণতান্ত্রিক একটি রাষ্ট্রের কাছে। তার কোনও মূল্য রইল না? সেই আশ্বাসে কেন নিশ্চিন্ত হতে পারলেন না প্রযোজক-পরিচালকরা? আইন ও শৃঙ্খলা ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থার এই চূড়ান্ত ছবিটা কি দেশের জন্যও খুব মর্যাদার হল? শুধু-রাষ্ট্রই বা কেন, মূক রইল প্রায় গোটা সমাজ? কোনও রাজনৈতিক দল, কোনও সংগঠন, অধিকাংশ মানুষ আমরা মেনে নিলাম একটা বড় অন্যায়?
তার কারণ আছে। এখন উগ্রতার সময়। এখন চিনা পণ্য বয়কটের ডাক-দেওয়া সোশ্যাল মিডিয়ার সময়, এখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সম্পর্কিত যে কোনও কিছুর বিরুদ্ধে দ্বেষ উগরে দেওয়ার সময়। যুক্তির কথা এখন নিরর্থকই শুধু নয়, প্রয়োজনে তাকে দেশবিরোধী বলে অভিহিত করারও সময়। উগ্রতার এই সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতায় সবাই দৌড়চ্ছে। উগ্রতর হওয়ার বাসনায়।
যুক্তি? বিচারবুদ্ধি? রেস্ট ইন পিস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy