Advertisement
E-Paper

মানবাধিকার লঙ্ঘন

অভিযুক্তের গোপনীয়তার অধিকার রক্ষা করা পুলিশের প্রাথমিক কর্তব্য। সংশ্লিষ্ট সারজেন্ট তাহা ভুলিয়াছেন।

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৫৯

নাগরিকতার পাঠ বলিবে, নিজের হাতে আইন তুলিয়া লইতে নাই। পুলিশের দ্বারস্থ হওয়াই বিধেয়। কিন্তু, সেই পুলিশই যদি নিজের হাতে আইন তুলিয়া লয়? আদালতের বিচারের তোয়াক্কা না করিয়াই যদি কাহাকে ‘অপরাধী’ ঘোষণা করিয়া দেয়, তাহার শাস্তিবিধানের ব্যবস্থা করে? সাম্প্রতিক কালে এই প্রশ্নটি এত বার উঠিয়াছে, এত রকম প্রেক্ষিতে উঠিয়াছে যে সমস্যাটির গভীরতা ও ব্যাপ্তি অস্বীকার করিবার কোনও প্রশ্নই নাই। কলিকাতার শোভাবাজার অঞ্চলের ঘটনাটিও সেই প্রবণতারই অংশ। এক পথচারীর বিরুদ্ধে দুই মহিলা ছিনতাইয়ের অভিযোগ করিয়াছিলেন। কর্তব্যরত পুলিশ সারজেন্ট শুধু অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মারিতে মারিতে লইয়া যান নাই, মোবাইল ফোনে তাঁহার ছবি তুলিয়া ছড়াইয়া দিয়াছেন বলিয়া অভিযোগ। ভদ্রলোকের অভিযোগ, তিনি ছবি তুলিতে বারণ করিলেও সারজেন্ট শোনেন নাই।

অভিযুক্তের গোপনীয়তার অধিকার রক্ষা করা পুলিশের প্রাথমিক কর্তব্য। সংশ্লিষ্ট সারজেন্ট তাহা ভুলিয়াছেন। কিন্তু, সেই দোষের কত শতাংশ তাঁহার? কলিকাতা পুলিশ ইদানীং সোশ্যাল নেটওয়ার্কে দড় হইয়াছে। পুলিশের ফেসবুক পেজে জনসংযোগ চলিতেছে। তাহার একটি প্রধান উপাদান হইল, বিভিন্ন সাম্প্রতিক ঘটনায় অভিযুক্তের নাম-ছবি প্রকাশ করিয়া সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মীদের গুণকীর্তন। তাহাতে নাকি কর্মীদের মনোবল বৃদ্ধি পায়। ফেসবুকে নাম কিনিলে তাঁহারা আর শাসক দলের বাহুবলীদের ভয়ে টেবিলের তলায় লুকাইবেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর সময়ে মিলিবে। কিন্তু, আদালতে অপরাধ প্রমাণ হইবার পূর্বেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কে অভিযুক্তের ছবি প্রকাশ করিয়া দেওয়ার অর্থ, পুলিশ আর তাঁহার বিচারের অপেক্ষা করিল না— নিজেই ‘অভিযুক্ত’কে ‘অপরাধী’ বানাইয়া দিল। ছবির সঙ্গে বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণের ন্যায় ‘অভিযুক্ত’ কথাটি লিখিলেও যে পুলিশের দায় ফুরায় না, তাহা কর্তারা বিলক্ষণ জানিবেন। কিন্তু, তাৎক্ষণিক হাততালির লোভ এমনই যে প্রতি দিন কার্যত বে-এখতিয়ার হইতেও কর্তারা দ্বিধা করেন না। শোভাবাজারের কর্তব্যরত ট্রাফিক সারজেন্ট সেই কর্তাদেরই অনুসরণ করিয়াছেন মাত্র। কর্তারা তাঁহাকে অভিযুক্তের ছবি তুলিতে শিখাইয়াছেন, তাঁহার গোপনীয়তার অধিকারের গুরুত্বের কথা নহে।

কর্তারা বহুবিধ তর্ক সাজাইতেই পারেন। কিন্তু, কোনও তর্কেই এই সত্যটি ঢাকা পড়িবে না যে, তাঁহারা মানবাধিকার ভঙ্গ করাকে বাহিনীর নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করিয়াছেন। মানবাধিকার আন্দোলনের সহিত যুক্ত একাধিক দল এই প্রবণতাটির প্রতিবাদ করিয়াছে, কিন্তু পুলিশের অভ্যাস বদলায় নাই। এখানেই নিয়মের গুরুত্ব। বাহিনীর প্রতিটি কর্মী মানবাধিকার, গোপনীয়তার অধিকার ইত্যাদির দার্শনিক মাহাত্ম্য বুঝিবেন, প্রতি পদে ন্যায্যতার বিচার করিবেন, এমন আশা করিবার কোনও কারণ নাই। কিন্তু, একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর প্রতিটি কর্মী নিয়ম মানিয়া চলিবেন, তাহা প্রত্যাশিত। অভিযুক্তের গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘিত হয়, এমন কাজ করা বেআইনি। ফলে, তাহার জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মগুলিও পুলিশের জানা। প্রয়োজন ছিল শুধু সেই নিয়ম মানিয়া চলিবার অভ্যাসের। হাততালির দুর্মর লোভে অভ্যাস ভাসিয়া গিয়াছে। পড়িয়া আছে মানবাধিকার লঙ্ঘন।

Accused confidentiality
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy