Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
National news

কঠোর বার্তা ছিল এটা, প্রত্যাঘাত কিন্তু আরও প্রবল হবে

ভারতীয় সেনা সূত্র বলছে, ভারত প্রত্যাঘাত করেনি, পাকিস্তানকে একটা কঠোর বার্তা দিয়েছে মাত্র। পরিস্থিতিটা ১৯৯৯ সালের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। প্রথমে এমনই মৈত্রী-মৈত্রী আবহ তৈরি হয়েছিল।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:২৩
Share: Save:

কুলভূষণ যাদবকে ঘিরে দীর্ঘ টানাপড়েন। তারপর হঠাৎ একদিন পরিবারের সঙ্গে তাঁকে দেখা করতে দিতে রাজি পাকিস্তান।

পাক সেনাপ্রধানের তরফ থেকেও বেশ সদর্থক বার্তা। পাকিস্তানের জাতীয় আইনসভায় দাঁড়িয়ে জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়া জোর দিলেন প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে পাকিস্তানের সুসম্পর্কের উপর, ভারত-পাক সম্পর্কের উন্নতি ঘটানোর প্রয়াসকে পাক সেনা সমর্থন করবে বলে তিনি বার্তা দিলেন।

নানা ভাবে যখন মৈত্রীর বার্তা আসছে ইসলামাবাদ থেকে, তখনই হানা দিল বিশ্বাসঘাতকতাও। নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করে হামলা চালাল পাক বাহিনী। শহিদ হলেন ভারতীয় বাহিনীর চার জন।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

৭২ ঘণ্টা কাটতে দিল না ভারত। পাল্টা পদক্ষেপ করল। নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকলেন ভারতীয় কম্যান্ডোরা। সরাসরি আঘাত হানলেন পাকিস্তানি সেনা চৌকিতে।

ভারতীয় সেনা সূত্র বলছে, ভারত প্রত্যাঘাত করেনি, পাকিস্তানকে একটা কঠোর বার্তা দিয়েছে মাত্র।

আরও পড়ুন: ‘ক্ষয়ক্ষতি আরও অনেক বেশি হয়েছে, স্বীকার করছে না পাকিস্তান’

পরিস্থিতিটা ১৯৯৯ সালের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। প্রথমে এমনই মৈত্রী-মৈত্রী আবহ তৈরি হয়েছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর দিকে বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত করেছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। দু’দেশের মধ্যে বাসযাত্রা শুরু হয়েছিল। কিন্তু অচিরেই জানা গিয়েছিল, বিশ্বাসঘাতকতা করেছে পাকিস্তান। নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে কার্গিলের পাহাড়ে ঢুকে পড়েছে পাক বাহিনী। সামরিক প্রত্যাঘাত ছাড়া আর কোনও পথ খোলা ছিল না ভারতের সামনে। তাই সামরিক প্রত্যাঘাতই হয়েছিল। বাকিটা আজ ইতিহাসে নথিবদ্ধ কার্গিল যুদ্ধ নামে। বাকিটা আজ ইতিহাসে নথিবদ্ধ ভারতীয় বাহিনীর বীরগাথা তথা অসামান্য সাফল্য হিসাবেও।

কার্গিলের পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়েছে ভারত। কার্গিল যুদ্ধে ভারতের জয় হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তার জন্য আত্মসন্তুষ্টিতে ভুগতে শেখেনি বাহিনী। বরং শিখেছে পাকিস্তানের প্রতিটি কার্যকলাপের দিকে আরও সতর্ক নজর রাখতে। পাকিস্তানকেও কিন্তু বুঝিয়ে দেওয়া হল সে কথা। কূটনৈতিক স্তরে আলাপ-আলোচনা চলবে, ভারত-পাক মৈত্রীর যে কোনও প্রয়াসকে মর্যাদা দেওয়া হবে, দ্বিপাক্ষিক সংযোগ বাড়িয়ে তোলার চেষ্টাও হবে। কিন্তু কার্গিলের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেওয়া হবে না। ক্রস বর্ডার রেড-এর মাধ্যমে আচম্বিতে পাক সেনা চৌকি গুঁড়িয়ে দিয়ে সেই বার্তাটাই স্পষ্ট করে ইসলামাবাদকে দিল নয়াদিল্লি।

যুদ্ধ বা সামরিক সঙ্ঘাত কোনও স্থায়ী সমাধান নয়। কূটনৈতিক পথেই শান্তিপূর্ণ এবং রক্তপাতহীন রফাসূত্রে পৌঁছনো সম্ভব। সে কথা আজকের বিশ্বে প্রায় সকলেরই জানা। কিন্তু তা সত্ত্বেও কূটনীতির বিকল্প পথ খুলে রাখার প্রয়োজন হয়, এও ঘোর বাস্তব। কূটনৈতিক পথে হোক বা বিকল্প কোনও পন্থায়, যে কোনও মূল্যে জাতীয় স্বার্থ এবং নিরাপত্তা অক্ষুণ্ণ রাখবে ভারত, এ কথা পাকিস্তানকে আরও একবার বুঝিয়ে দেওয়া হল।

যে কোনও দ্বিপাক্ষিক সংশয়ের নিরসনে সামরিক পথ বেছে নেওয়া সভ্য পৃথিবীর দস্তুর নয়। ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক সমস্যার নিরসনে সামরিক পথ বেছে নিতে ভারত খুব আগ্রহীও নয়। নিয়ন্ত্রিত এবং সীমাবদ্ধ সামরিক অভিযানের মাধ্যমে সেই বার্তাও ভারত দিয়ে দিল।

এ প্রসঙ্গেও আরও একবার উল্লেখ করতে হয় ভারতীয় সেনা সূত্রের সেই ব্যাখ্যা— ভারত কিন্তু প্রত্যাঘাত করেনি, পাকিস্তানকে একটা কঠোর বার্তা দিয়েছে মাত্র। এই ব্যাখ্যা কিন্তু যথার্থ। ভারত যে পুরোদস্তুর সামরিক প্রত্যাঘাত করেনি, করলে পরিস্থিতির প্রাবল্য যে আরও অনেক বেশি হত, ১৯৯৯ সাল তার সাক্ষী, কার্গিল যুদ্ধ তার সাক্ষী।

ভারতের এই বার্তাটা ঠিকমতোই পড়ে নিতে পারবে পাকিস্তান, এটুকু আশা নয়াদিল্লি রাখতেই পারে। মৈত্রী বা সুসম্পর্কের ইঙ্গিতের আড়ালে কোনও জঘন্য ষড়যন্ত্রকে ফের যদি রূপ দেওয়ার চেষ্টা হয়, তা হলে পরিণতি সুখকর হবে না, এ কথাই ইসলামাবাদকে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছে নয়াদিল্লি। এ ধরনের ষড়যন্ত্রের পরিণতি যে সুখকর হয় না, কার্গিলেই তার প্রমাণ হাতেনাতে পেয়েছিল পাকিস্তান। সে অভিজ্ঞতা থেকে পাকিস্তান শিক্ষা নিয়েছে কি না, তা খুব স্পষ্ট নয়। কিন্তু ভারত যে শিক্ষা নিয়েছে এবং আগের চেয়েও অনেক বেশি সতর্ক পদক্ষেপে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে, তা বেশ বোঝা গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE