Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: ভারত যা পারে

‘ধনতন্ত্রই দায়ী’ (সম্পাদক সমীপেষু, ২০-৯) এই শিরোনামে শিবাজী ভাদুড়ীর অসমের সাম্প্রতিক সমস্যায় স্তালিনের জাতি সমস্যা সমাধানের তত্ত্ব প্রয়োগের প্রস্তাব করে যে চিঠি প্রকাশিত হয়েছে, সে বিষয়ে কয়েকটি কথা না বললে যাঁরা সারা জীবন স্তালিনকে ভগবান মেনে এখন চুল ছেঁড়েন, তাঁদের প্রতি উদাসীনতা প্রদর্শন করা হয়।

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৮ ০০:০০

‘ধনতন্ত্রই দায়ী’ (সম্পাদক সমীপেষু, ২০-৯) এই শিরোনামে শিবাজী ভাদুড়ীর অসমের সাম্প্রতিক সমস্যায় স্তালিনের জাতি সমস্যা সমাধানের তত্ত্ব প্রয়োগের প্রস্তাব করে যে চিঠি প্রকাশিত হয়েছে, সে বিষয়ে কয়েকটি কথা না বললে যাঁরা সারা জীবন স্তালিনকে ভগবান মেনে এখন চুল ছেঁড়েন, তাঁদের প্রতি উদাসীনতা প্রদর্শন করা হয়। আমিও যে তাঁদেরই এক জন। স্তালিনের যে জাতি তত্ত্ব— এক ভাষা এক প্রাণ, যা শিবাজীবাবু চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, তার জবরদস্তি প্রয়োগে বিভিন্ন জাতিসত্তার পরিচিতি ভোলাতে গিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে বহু টুকরো হয়েছে। কারণ, এ তত্ত্ব একান্তই স্বৈরতন্ত্রী ও রাষ্ট্রতন্ত্রী। ভারতের মতো উদার স্বেচ্ছাতান্ত্রিক দেশে তা অচল। রাশিয়া থেকে আসা বহু বইয়ের সঙ্গে এই বইও আমরা পুজোর সময় পার্টির মার্ক্সবাদী বইয়ের স্টলে প্রায় শৈশব থেকে বিক্রি করেছি। বইটির নাম ‘জাতি সমস্যার সমাধান’। কঠোর ভাবে স্তালিনের তত্ত্ব প্রয়োগে সোভিয়েত ইউনিয়ন জাতিদাঙ্গায় ভেঙে যেতে লজ্জায় তা আর পার্টি বুকস্টলে রাখা হয় না। বইটি আমরা মুখস্থ করতাম। বাড়িতে ‘সোভিয়েত দেশ’ আসত। এতে বিভিন্ন জাতি, এশীয় ও একদা জ়ার ও পরে রুশ বলশেভিক সরকারের দখল করা দেশ— আজ়ারবাইজ়ান, কাজ়াখস্তান, কিরঘিজ়স্তান প্রভৃতি দেশের সুন্দরী, সুখী মুখের মেয়েদের সঙ্গে রুশি মেয়েদের ফোক আর ব্যালে নাচের ছবি থাকত। যেন দুধে–মধুতে মিশে গিয়েছে। পরে ৮০’র দশকের মাঝে সোভিয়েত ইউনিয়নে সঙ্কট, প্রদেশগুলিতে ভাঙন ঘনিয়ে আসতে ব্যাপারটি বোঝার জন্য আজারবাইজানের তেল শহর বাকু–তে পেট্রোলিয়াম টেকনলজি পড়া এখানকার সিপিআই পরিবারের কিছু ছেলের সঙ্গে কথা বলি। কারণ, বহু বার সমাজতন্ত্রের মক্কায় ঘুরে আসা সিপিআই, সিপিআইএম নেতারা ছিলেন স্পিকটি নট। কিন্তু ওই ছাত্ররা জানায়— আজ়রবাইজ়নিরা গোঁড়া মুসলমান। এঁদের বয়স্ক মানুষদের দুঃখ, তাঁরা হজে যেতে পারেন না— সোভিয়েত নিরীশ্বরবাদী দেশ, তাই। স্তালিনের আমল থেকে এই নিষেধ চালু আছে। তেল লুট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রদ্দিমার্কা রুশ জিনিস কিনতে হবে দাম দিয়ে। সে প্রদেশে সরকার বলে যেটি চলছে তা ওঁদের বানানো নয়, কমিউনিস্ট পার্টির নামে রাশিয়া থেকে চাপিয়ে দেওয়া। জেনেছিলাম সব থেকে বেশি দুঃখ আজ়ারবাইজ়ানের মানুষের পিতৃপরিচয় ভুলিয়ে দেওয়া। ওঁরা আরবি, ফারসি, তুর্ক মেশানো সেমেটিক মুসলমানি ভাষা বলেন, কিন্তু আরবি মুসলিম নাম রাখতে পারবেন না। বাপ–ঠাকুরদার কারও নাম যদি ‘আলি’ রাখা থাকে, রেজিস্ট্রি করতে হবে ‘আলিমভ’! (ভারত হিন্দু স্তালিনিস্ত হলে হত আলিশ্রী?) এমন নির্দয় ভাবে ইন্দো–ইউরোপীয় রুশিয়ান স্লাভ ভাষা জোর করে চাপিয়ে এক জাতি বানানো ওঁরা সহ্য করতে পারেননি। অপমানিত হয়েছেন। ওই ছাত্ররা বলেছিল—‘‘দেখবেন রুশ ট্যাঙ্ক যে দিন ফিরে যাবে, একটা রাশিয়ানও থাকবে না। থাকলে খুন হবে।’’ হলও তাই। রুশ ট্যাঙ্ক বাকু শহর ছাড়তে লেনিন-স্তালিনের মূর্তিগুলো সাধারণ মানুষ গুঁড়িয়ে দিয়ে সব সমাজতান্ত্রিক স্মৃতি মুছে দেয়।

অথচ জোর না খাটালে এ তো হওয়ার কথা ছিল না। জ্ঞান–বিজ্ঞান, আধুনিকতার বহু কিছু মধ্যযুগীয় মধ্য এশীয়রা সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার কাছ থেকে পেয়েছিলেন। শিবাজীবাবু স্মরণ করুন, একদা আমাদের উত্তর কলকাতা পাড়ায় বা সম ভাষা–সংস্কৃতির হাওড়ায় মস্তানরা হুমকি দিত, ‘মেরে বাপের নাম ভুলিয়ে দেব।’ বাম আমলে একই কাজের পলিটিকাল সংস্করণ আমরা দেখেছি— ‘আপনি কিন্তু কিছুই দেখেননি স্যর।’ ক্ষমতায় থাকা আদর্শবাদী রাজনৈতিক মস্তানি যেমনটা বরাবর হয়ে থাকে। যেমন, ফ্যাসিজ়ম, সোশ্যালিজ়ম। কারণ, মহান মতাদর্শ রক্ষার অছিলা এবং তা সাপেক্ষে রাস্তায় টহল দেওয়া ট্যাঙ্ক বাহিনী। মানুষের ভাল করার তাড়ায় মানুষের কষ্ট ওঁরা বুঝতেই পারেন না। ভারত কিন্তু ভাঙেনি। ‘স্বদেশের ঠাকুর’ ফেলে যাঁরা ‘বিদেশের কুকুর’ পুজো করেন তাঁরা হয়তো অবাক হবেন যে বলপ্রয়োগ ছাড়াই বহু জাতি-সমস্যায় ভারাক্রান্ত ভারত কিন্তু তা সমাধানে সোভিয়েত ইউনিয়ন অপেক্ষা বহু গুণে সফল। শিবাজীবাবুর উল্লিখিত একদা সামরিক বিচ্ছিন্নতাবাদে উত্তপ্ত উত্তর–পূর্বের মেঘালয়, মণিপুর, অসম— প্রতিটি রাজ্যে এখন সেখানকার মানুষ ভোট দিয়ে নিজেদের সরকার গড়েন। আগে ওখানে গেলে ওঁরা গায়ে পড়ে বলতেন— ‘আই অ্যাম নট ইন্ডিয়ান।’ আর এখন দিল্লি বা কলকাতার রাস্তায় কোনও মূঢ়মতি যদি ওঁদের জিজ্ঞাসা করে— তুমি চিনা না ভারতীয়, ওঁরা দুঃখ পান। যে তামিলরা হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলতেন, তাঁদের প্রতিনিধি রজনীকান্ত তামিল অ্যাকসেন্টে হিন্দি বলে গোটা ভারতের জনপ্রিয়তম স্টার। এটিই জাতি সমস্যা সমাধানের ভারতীয় পথ। অসমেও তাই পেতে হবে। স্তালিনবাদে লাভ হবে না।

গৌতম রায়

কলকাতা-৯১

যা চলছে

‘একই অঙ্গে এত রোগ’ শীর্ষক ধারবাহিক প্রতিবেদনে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান স্বাস্থ্যশিক্ষার মান নিয়ে খুব যুক্তিসঙ্গত প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কিছু পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রত্যাশী ভিনরাজ্যে পাড়ি দিতে বদ্ধপরিকর। হবু বনাম শিক্ষক-ডাক্তারদের পরস্পরবিরোধী মন্তব্য স্পষ্ট। সরকার পরিচালিত বারোটা মেডিক্যাল কলেজের ছ’টা কলকাতায় পানিহাটি সমেত, বাকি ছ’টা জেলায়, সরকারের নির্দিষ্ট বদলি নীতি না থাকায় বা থাকলেও পক্ষপাতমূলক হওয়ায়, শিক্ষক ডাক্তাররা অনেকেই অসন্তুষ্ট। এক দিকে কেন্দ্র-রাজ্য উভয় সরকারই চাইছে ডাক্তারের ঘাটতি মেটাতে মেডিক্যালে আসনবৃদ্ধি ও প্রতি জেলায় একটা করে মেডিক্যাল কলেজ খুলতে। উপযুক্ত পরিকাঠামো, পর্যাপ্ত শিক্ষক ছাড়া শুধু ডিগ্ৰি বিতরণ কেন্দ্র খুললে শিক্ষার মান কমতে বাধ্য। সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাপে পড়ুয়াদের মধ্যে ধারণা জন্মেছে, ক্লিনিক্যাল ট্রেনিংয়ে পারদর্শী হয়েও পোস্টগ্ৰ্যাজুয়েট ডিগ্ৰি ছাড়া শুধু পাড়ার ডাক্তার বা জেনারেল প্র্যাকটিশনার হয়ে থাকলে ‘নষ্ট জীবন’। তাই বর্তমান ট্রেন্ড হল, কোচিং সেন্টারের ট্রেনিং নিয়ে যে ভাবেই হোক একটা পোস্ট গ্ৰ্যাজুয়েট ডিগ্ৰি বা ডিপ্লোমা জোগাড় করে ‘বিশেষজ্ঞ’ তকমা লাগানো। পরিস্থিতির সুযোগে প্রাইভেট মেডিক্যাল শিক্ষার রমরমা ব্যবসা জাঁকিয়ে বসেছে। চিন, রাশিয়া, নেপাল ও বাংলাদেশের বেসরকারি মেডিক্যাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো মোটা টাকার বিনিময়ে ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের ডিগ্ৰি বিতরণ করে চলেছে। সেখানে ক্লিনিক্যাল ট্রেনিংয়ের হাল বিদেশি পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে আরও সীমিত। কাজের পরিবেশ, ক্রমবর্ধমান হামলাবাজি এবং রাজনৈতিক দাদাদের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে তিতিবিরক্ত হয়ে অনেকে কাজ ছাড়ছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের সার্বিক ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

বাসুদেব দত্ত

চৈতলপাড়া, শান্তিপুর

বায়োমেট্রিক

‘‘স্কুলে ‘শিক্ষকছুট’...ভাবনা” (২৬-৯) শিরোনামে যে ভাবনা ব্যক্ত হয়েছে সেটি যদি প্রতিটি সরকারি ও সরকার-পোষিত স্কুলে চালু করা যায়, তা অভিনন্দনযোগ্য। ২০১৪-১৫ সালে এক সরকারি সংস্থায় কাজ করার সময় এর সদ্ব্যবহার হতে দেখেছি। এক শ্রেণির শিক্ষকেরা স্কুলের সময় চুরি করে প্রাইভেট টিউশনিতে সময় দিচ্ছেন। ফলে বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলির দশা তলানিতে। ছাত্ররাও জানে প্রাইভেট টিউশনি পড়েই লাভ, কারণ নোটস আর সাজেশন দুইই মিলবে। অতএব স্কুলছুট ছাত্রের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। একটু ব্যয়সাধ্য হলেও বায়োমেট্রিক পদ্ধতি শুধু স্কুলগুলিতেই নয়, প্রত্যেকটি সরকারি সংস্থায় চালু

করা উচিত। এতে কর্মসংস্কৃতির উন্নতি হবে। তবে এতেও মাঝে কেউ সময় চুরি করতে চাইলে অনায়াসেই তা করতে পারবে। কারণ আসা-যাওয়ার ভেতরের সময় চুরি ধরার ব্যবস্থা নেই।

মৃণাল মুখোপাধ্যায়

কসবা, কলকাতা

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

Medical Health Biometry Stalin China CPIM Communist Russia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy