Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: তবু আশার কথা

এ বার বাধ্য হয়ে, নিজেকে বাঁচাবার জন্য, মানুষ কিছু দিন মুখ ঢাকা দিয়েছে।

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২০ ০১:৪৫

ভেনিসের বিখ্যাত ক্যানালে, জল হয়ে গিয়েছে ঝকঝকে, ডলফিন খেলে বেড়াচ্ছে, কারণ ‘গন্ডোলা’ প্রায় চলছেই না, আর ট্যুরিস্টও নেই, যাঁরা গুচ্ছের জঞ্জাল রোজ জলে ফেলবেন। রাজহাঁস, মাছও ফিরে আসছে। গোটা ইটালি জুড়েই নাকি এই দৃশ্য, এমনকি রোমের ফোয়ারাগুলোয় আবার হাঁসও দেখা দিচ্ছে। চিনেও নাকি দূষণ এখন অনেকটা কমেছে, আকাশ কিছুটা পরিষ্কার হয়েছে। আসলে মানুষ যেই বাড়িতে বসে থাকছে, বাইরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে না, প্রকৃতিও একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচছে। প্রতিনিয়ত প্রকৃতির উপর এতটা নৃশংস অত্যাচার মানুষ ছাড়া কেউ তো করে না।

এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে কম বোঝানো হয়নি। কিন্তু মানুষকে যতই বোঝাও, যতই সচেতন করো, অধিকাংশেরই কিছুই এসে যায় না। নিজের সুবিধের জন্য, আনন্দের জন্য মানুষ নাগাড়ে পরিবেশ দূষণ করে চলে। গাছও কাটে, প্লাস্টিকও ব্যবহার করে, কার পুল-এ অফিস না গিয়ে নিজের বড়লোকি দেখানোর জন্য বিশাল গাড়িটাকে বার করে।

এ বার বাধ্য হয়ে, নিজেকে বাঁচাবার জন্য, মানুষ কিছু দিন মুখ ঢাকা দিয়েছে। তাতে আরও অনেকে বাঁচছে। মুখ বাড়াচ্ছে সেই নিরীহ প্রাণীগুলো, যারা বিপন্ন হয়ে কোনও মতে কোণঠাসা অবস্থায় বাঁচছিল। হ্যাঁ, তীব্র আর্থিক দুর্দিন হয়তো আসতে চলেছে মানুষের, কিন্তু তার বদলে সে আবার ফিরে পাচ্ছে তার বাতাস, আকাশ— এও একটা আশার কথা। এ থেকে আমরা শিক্ষা নেব কি?

তারকনাথ সেন

কলকাতা-৩৩

সম্রাট অশোক

গৌতম চক্রবর্তীর ‘এমনকি সম্রাট অশোকও’ (৭-৩) নিবন্ধে লেখা হয়েছে, অশোকের ১৩ নম্বর শিলালিপিতে আটবিকদের শিকার বন্ধের আদেশ জারি করা হয়েছিল। তা ঠিক নয়। ‘কালসী’ থেকে পাওয়া অশোকের ১৩ নম্বর শিলানুশাসনটির বিষয়বস্তু হল, রাজত্বের অষ্টম বর্ষে অশোকের কলিঙ্গ বিজয়, যুদ্ধের বিভীষিকায় তাঁর তীব্র অনুশোচনা এবং রাজ্যজয়নীতির পরিবর্তে তাঁর ধর্মবিজয়নীতি গ্রহণের সিদ্ধান্ত। এই শিলানুশাসনে অরণ্যবাসী জাতি আটবিকদের উল্লেখ আছে ঠিকই, কিন্তু সেখানে অশোক তাঁদের অনুনয় করছেন ও বিবেচনা করার অনুরোধ করছেন, তাঁরাও যাতে অন্যান্য রাজ্যবাসীর মতোই, কেউ কোনও অপকার করলে তাঁকে ক্ষমা করার চেষ্টা করেন। এখানে অরণ্যবাসীদের শিকার বন্ধ করার বিষয়টির কোনও উল্লেখ নেই। সম্রাট অশোক কিছু কিছু পশুহত্যা বন্ধে সর্বসাধারণের প্রতি কিছু নির্দেশ জারি করলেও, তাঁর কোনও শিলালিপিতে সরাসরি অরণ্যবাসীদের শিকার বন্ধের জন্য কোনও নির্দেশ জারি করা হয়নি। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে রাজাজ্ঞা ছিল দেশের সব প্রজার জন্য, নির্দিষ্ট কোনও শ্রেণি বা জনজাতির জন্য নয়।

নিবন্ধে বনবাসীদের উৎসবে মদ-মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করে দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। গিরনারে পাওয়া ১ নম্বর শিলানুশাসনে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ‘‘...সমাজ(ও) করা যাবে না।’’ এখানে ‘সমাজ’ বলতে বহু লোকের যোগদানে অনুষ্ঠিত মেলা উৎসবের কথা বলা হয়েছে (অশোকলিপি, ড. অমূল্যচন্দ্র সেন)। এই শিলানুশাসনে বনবাসী বা আটবিকদের উৎসবের বিষয়ে পৃথক ভাবে কোথাও কিছু উল্লেখ নেই। সর্বসাধারণ যে মেলা উৎসবে যোগদান করতেন, সেখানে নাচগান, নানা রকম জুয়া তামাশা, পশুপাখির লড়াই, দেদার মদ-মাংস খাওয়া চলত। অশোক সেই সব বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

লক্ষণীয়, এই নির্দেশিকার ঠিক পরের ছত্রেই তিনি আবার এই ধরনের কিছু উৎসবের (সমাজ) প্রশংসাও করেছেন। আসলে ‘সমাজ’ মাত্রই অশোকের কাছে দূষণীয় ছিল না। যে সকল ‘সমাজ’-এ নানা ধরনের অনাচার ঘটত, সেই সকল ‘সমাজ’কেই তিনি নিন্দনীয় হিসেবে দেখেছেন। আসলে জনগণের সার্বিক মঙ্গল চিন্তা করেই তিনি ‘সমাজ’কে নিষিদ্ধ করেছিলেন। জনজাতির মানুষ বা বনবাসীদের সঙ্গে মানসিক দূরত্ব তৈরি করার ভাবনা বা প্রয়াস অশোকের মধ্যে ছিল না।

বরং বলা যায়, সজীব তুষ পোড়ানো যাবে না, অহেতুক ভাবে বা প্রাণিহত্যার জন্য বনজঙ্গল পোড়ানো যাবে না (৫ নম্বর স্তম্ভানুশাসন)— এই নির্দেশের মাধ্যমে প্রকৃতি, পরিবেশ ও অরণ্যরক্ষায় অশোক যে কত সচেতন ও কঠোর ছিলেন, তার প্রমাণ পাওয়া যায়। বনবাসীদের জীবন-জীবিকা ও স্বার্থ রক্ষায় অশোকের এই পদক্ষেপ বিশেষ কার্যকর ছিল।

সম্রাট অশোক তাঁর রাজ্য জুড়ে সমস্ত দেশবাসীকে নিরামিষ খাওয়ানোর প্রয়াসী ছিলেন না। তিনি দেশবাসীদের আমিষাশী হওয়ার প্রতি সংযমী করে তুলতে চেয়েছিলেন। প্রাণিহত্যা যথাসম্ভব কমানোই তাঁর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। ৫ নম্বর স্তম্ভানুশাসনে পাওয়া যায়, সম্রাট অশোক আষাঢ়, কার্তিক ও ফাল্গুন, তৈষ্যা পূর্ণিমায়, অর্থাৎ পৌষ পূর্ণিমা, চতুর্দশী, পঞ্চদশী ও প্রতিপদ এবং অবশ্যই প্রতি উপবাস-দিনে, পশুহত্যা নিষিদ্ধ ও মাছ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। কিন্তু এই দিনগুলি ছাড়া অন্যান্য দিনে তা নিষিদ্ধ ছিল না। শুধু তা-ই নয়, বলা ছিল, ছাগী, ভেড়ি, শূকরী ইত্যাদি যে সকল প্রাণী গর্ভিণী বা শাবকদের দুধ খাওয়াচ্ছে, তারা অবধ্য। শাবকদের বয়স ছ’মাসের কম হলে তাদের হত্যা করা যাবে না। শিলালিপিতে উল্লিখিত বিষয়গুলি অনুধাবন করলে বোঝা যায়, এই শর্তগুলির বাইরে থাকলে ওই পশুদেরও হত্যা করায় কোনও নিষেধ ছিল না। বলাই বাহুল্য, নিষেধাজ্ঞা থাকলে তো এই শর্তগুলি উল্লেখের প্রয়োজন হত না।

তবে অশোক তাঁর প্রাসাদের সকলকে যে পর্যায়ক্রমে নিরামিষাশী করে তুলেছিলেন, সেই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ ১ নম্বর শিলানুশাসনে তিনি আদেশ দিচ্ছেন, প্রাসাদের রন্ধনশালায় প্রতি দিন প্রথমে দু’টি ময়ূর ও একটি হরিণ হত্যা করা যাবে। যদিও হরিণকে সব সময় হত্যা করা যাবে না। এবং কালক্রমে কোনও প্রাণীই আর হত্যা করা যাবে না।

রাহুল বড়ুয়া

কলকাতা-৭৪

দায় কার

রজত রায়ের ‘‘মেধা কি কেবল ‘ব্যক্তিগত” (১৪-২) শীর্ষক প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। ইদানীং বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে সরকারি সংরক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণা প্রচার করা হচ্ছে। যেমন, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সংরক্ষণের জন্য নাকি ভারত পিছিয়ে পড়ছে, বাংলাদেশে সংরক্ষণ না থাকার ফলে বাংলাদেশ ভারতের তুলনায় এগিয়ে যাচ্ছে। ভাবতে হবে, যে কোনও সংস্থায় যাঁরা চাকরিতে সংরক্ষণ নিয়ে ঢুকেছেন, তাঁদের বাদ দিয়ে যদি অসংরক্ষিত গোষ্ঠীর লোক নেওয়া হত, তবে কি ওই সংস্থার সমৃদ্ধি বাড়ত? সংরক্ষিত গোষ্ঠীর লোক তো সর্বাধিক ২২-২৭%। বাকি লোক তো অসংরক্ষিত গোষ্ঠীর, এমনকি সংস্থায় যাঁরা শীর্ষ ও উচ্চতর পদে আসীন তাঁরা তো সবাই অসংরক্ষিত গোষ্ঠীর। তাই সংস্থার ভালমন্দের দায় তো অসংরক্ষিত গোষ্ঠীর হওয়া উচিত।

যারা লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতির দ্বারা দেশের সম্পদ নষ্ট বা আত্মসাৎ করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে বা করছে, সেই ‘মহান’ লোকদের দলে ক’জন সংরক্ষিত গোষ্ঠীর? তখন গোষ্ঠীর বিচার হয় না কেন? তা ছাড়া দেশের যাঁরা নীতি নির্ধারণ করেন, তাঁরা তো প্রায় সবাই অসংরক্ষিত গোষ্ঠীর। দেশ পিছিয়ে পড়লে তখন তাঁদের দায় নয় কেন?

চঞ্চল বিশ্বাস

কৈলাশনগর, হৃদয়পুর

বিদ্রোহী

‘‘মাই লর্ড’ কেন!’’ (১৭-৩) খবর পড়ে অবাক হলাম। যখন আমাদের দেশের উচ্চ পদে আসীন লোকে রাজা-রাজড়ার মতো ব্যবহার করেন ও হাতে মাথা কাটেন, তখন কিনা আদালতে এক বিচারক বলছেন, তাঁকে ‘মাই লর্ড’ বলে সম্বোধন করার দরকার নেই! বিচারপতি মুরলীধর তো এই সময়ের এক উজ্জ্বল বিদ্রোহী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপিত করছেন!

শ্রেয়া সরকার

কলকাতা-২৯

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,

কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

Coronavirus Health
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy