আমার জন্ম কলকাতার বাগুইআটিতে। গত এক বছর ধরে গবেষণার সূত্রে আমি নরওয়েতে থাকি। গ্রিমস্টাড, দক্ষিণ নরওয়ের একটি অপরূপ পাহাড় ও সমুদ্র ঘেরা ছোট শহর। নরওয়ে সম্বন্ধে মানুষের ধারণা— ছ’মাস দিন ও ছ’মাস রাত থাকে। , নিশীথ সূর্যের দেশ। অরোরা, হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা, বরফপাত ও এক নিঃসঙ্গ পুরী। কিন্তু দক্ষিণ প্রান্তে থাকার সুবাদে অরোরা এখান থেকে দেখা না গেলেও ঠান্ডা অন্য প্রান্তের থেকে তুলনামূলক অনেকটা কম এবং গরমের মরশুমও বেশ মনোরম। শীতকালে সকাল ৮ টার পর সূর্য উঁকি দিতে শুরু করে এবং বেলা ৩ টের পরেই সূর্যাস্ত। গরমকালে সূর্যাস্ত অবশ্য মাত্র ২-৩ ঘন্টার জন্য।
নরওয়ের জনঘনত্ব খুব কম এবং মোট জনসংখ্যা প্রায় ৫০ লক্ষের মতো। এই নিঃসঙ্গ পুরীতে আমার সঙ্গী আমার স্ত্রী নিবেদিতা। তিনিও এখানে একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত। এখানে শীতকালে তিন বার বরফ পড়ে। বৃষ্টি শীতকালের নিত্যদিনের সঙ্গী। শীতের শেষে এপ্রিলে কাঙ্খিত গ্রীষ্মের আবির্ভাব। সমুদ্রের ধারে সবুজ ঘাসের গালিচায় দল বেঁধে আড্ডা, পিকনিক। আমাদের সারা বছরের একটা পরিকল্পনা থাকে ওই সময়টা কি করব, কোথায় ঘুরব ইত্যাদি ইত্যাদি।
এ বারে আমাদের পরিকল্পনা ছিল ইস্টারের ছুটিতে আরও দুটো বাঙালি পরিবারের সাথে ক্রোয়েশিয়ার জাগরীব-এ ছুটি কাটাব। সেই সঙ্গে আমাদের ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের পরিকল্পনা ছিল, মার্চ এর শেষে দল বেঁধে হোলি উৎসব। কিন্তু সে গুড়ে বালি! কথা নেই, বার্তা নেই, দুম করে সমস্ত বিশ্বজুড়ে নতুন অতিথির আবির্ভাব- ‘করোনা’। সব পরিকল্পনা দুমড়ে, মুচড়ে একাকার।