Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: দায়মুক্ত নন গাঁধীও

বড়লাটের যুক্তিতে অভিভূত হয়ে অন্য নেতাদেরও পটেল দেশভাগের অপরিহার্যতা বোঝাতে শুরু করেছেন। ‘আয়রনম্যান’ পটেল তখন গলে জল।

শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৮ ০০:০৪

সুগত বসুর রচনা ‘ধ্বংসের সামনে একা’ (৩০-৯) শীর্ষক নিবন্ধ পড়লাম। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার আছে। যে ধ্বংসের সামনে মহাত্মা গাঁধীকে একাকী দণ্ডায়মান থাকতে দেখা যায়, তার আবাহনে গাঁধীর ভূমিকাও নগণ্য নয়। এই বিষয়ে মুসলিম লিগের জিন্না, কংগ্রেসের পণ্ডিত নেহরু, সর্দার পটেলের মতো গাঁধীও দায়মুক্ত হতে পারেন না। প্রথম দিকে দেশভাগের বিরুদ্ধে গাঁধীজি কট্টর, আশাব্যঞ্জক অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন। দেশভাগের বিরুদ্ধে দৃঢ় অভিমত ব্যক্ত করেছেন তিনি।

কিন্তু এই অবস্থানে শেষ পর্যন্ত অবিচল থাকতে পারলেন না তিনি। যদি পারতেন, সন্দেহ নেই, স্বাধীন ভারতের ইতিহাস অন্য ভাবে লেখা হত। পঞ্জাবের ভয়াবহ দাঙ্গায় উদ্বিগ্ন হয়ে শান্তির আশায় সেই রাজ্যকে ভাগ করার প্রস্তাব গ্রহণ করে ফেললেন নেহরু এবং পটেল। এই প্রস্তাব এমন সময় নেওয়া হল, যখন গাঁধীজি বিহারে শান্তি মিশনে ব্যস্ত। উদ্দেশ্য, দেশভাগের বিরোধী গাঁধীজি যাতে এ সব না জানতে পারেন। অনেক পরে গাঁধীজি জানতে পেরে চরম ক্ষুব্ধ হন, আর আবুল কালাম আজাদ ভীষণ উদ্বিগ্ন হন। তিনি এর মধ্যে ভবিষ্যতের অশনি সঙ্কেতের ইঙ্গিত পেয়ে গাঁধীজিকে প্রশ্ন করেন: কংগ্রেস ভারতের ক্ষেত্রে বিভাজনের প্রস্তাব নিলে তিনি কী করবেন। গাঁধী তাঁকে আশ্বাস দেন, দেশভাগ করতে হবে তাঁর মৃতদেহের ওপর। জীবিত অবস্থায় তিনি এটা ঠেকাবেনই।

কিন্তু সর্দার পটেল বা পণ্ডিত নেহরু— সে দিন কেউ বসে ছিলেন না। বড়লাটের যুক্তিতে অভিভূত হয়ে অন্য নেতাদেরও পটেল দেশভাগের অপরিহার্যতা বোঝাতে শুরু করেছেন। ‘আয়রনম্যান’ পটেল তখন গলে জল। মৌলানা আজাদ তাঁর বিখ্যাত ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম গ্রন্থে লিখছেন— বড়লাটের সঙ্গে বৈঠক করার পর, পটেল গাঁধীর সঙ্গেও এক রুদ্ধদ্বার কক্ষে দু’ঘণ্টা বৈঠক করেন। এই বৈঠকের পর, আজাদের জীবনে এক চরম অপ্রত্যাশিত আঘাত নেমে এল। এই বৈঠকের পর, তিনি শুনতে পেয়েছেন গাঁধীর কণ্ঠে পটেলের ভাষণের প্রতিধ্বনি, গাঁধীর কণ্ঠে পটেলের যুক্তি। পণ্ডিত নেহরুও বড়লাটের পাতা ফাঁদে ধরা দিয়েছেন।

ঠিক, এ রকম অবস্থায় আবুল কালাম আজাদ নিঃসঙ্গ ও অসহায় বোধ করেন। তবু তিনি হাল ছাড়েননি, তিনি বার বার গাঁধীর কাছে গিয়েছেন, যাতে তিনি পণ্ডিত নেহরু ও সর্দার পটেলকে বোঝান—তিনিই পারেন এই সর্বনাশ থেকে দেশকে বাঁচাতে। সব চেষ্টা যখন বিফল হল, দেশভাগ যখন হচ্ছেই, তখন ভগ্নহৃদয়, আশাহত আজাদ বড়লাটকে একটি অনুরোধ করলেন। দেশভাগ যখন আটকানো গেল না, তখন দু’দেশের ছিন্নমূল মানুষ ছুটবেন প্রাণের দায়ে, ভয় থেকে অভয়ের দিকে। তাঁদের নিরাপত্তার জন্য বড়লাট যেন মিলিটারি বাহিনী নামান। দুঃখের বিষয়, সেটাও হয়নি।

আজ ভারতের অখণ্ডতা বজায় রাখায় ব্রতী আবুল কালাম আজাদের নাম তেমন শোনা যায় না। তাঁকে নিয়ে তেমন আলোচনার খবর পাই না। ঘুরে ফিরে মহাত্মা গাঁধী (ছবিতে মাঝে), পণ্ডিত নেহরু (বাঁ দিকে), সর্দার পটেলদের (ডান দিকে) নামই আলোচিত হয়।

উজ্জ্বল কুমার মণ্ডল

শেওড়াফুলি, হুগলি

রাশ টানতে হবে

সম্পাদকীয় ‘ধ্বংসের মুখোমুখি’ (৫-১০) প্রসঙ্গে এই চিঠি। পরিকাঠামো বিনিয়োগের গুরুত্বপূ্র্ণ প্রতিষ্ঠান আইএলএফসি ও তার সহযোগী শতাধিক কোম্পানির চরম আর্থিক বিপর্যয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের মোটা তহবিলপুষ্ট এলআইসি-র ওপর চাপিয়ে দেওয়া হল কোটি কোটি বিমাকারীর প্রিমিয়ামের টাকা দিয়ে তাঁদের বাঁচানোর দায়! এই ভাবে একের পর এক অপুষ্ট সংস্থাকে বাঁচাতে গিয়ে পুষ্ট তহবিলের এলআইসিকে কি রুগ্ণতার দিকে ঠেলা হচ্ছে না? হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগে রুগ্ণতা নির্ণয়ের জন্য সরকারের হাতে রয়েছে বহু আইন ও নিয়ামক প্রতিষ্ঠান, এদের অপদার্থতার ধারা সরকারনির্বিশেষে বহু দশক ধরে চলে আসছে। আইএলএফসির বিরুদ্ধে অভিযোগ, বহু বছর ধরে ভুল তথ্য দিয়ে তারা ভয়াবহ আর্থিক দুরবস্থাকে চেপে গিয়েছে। ব্যালান্স শিটের উইন্ডো ড্রেসিং ধরতে কোম্পানি আইন সমেত আছে একগুচ্ছ আইন ও অনুসন্ধান ব্যবস্থা। এ ছাড়াও রয়েছে ভারতে হিসাবরক্ষণ ব্যবস্থার নিয়ামক দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব ইন্ডিয়া-র সদস্য অডিটরদের জন্য গাইডলাইন, ও একাধিক অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড আর পিয়ার রিভিউ। একটা বড় সরকারি প্রতিষ্ঠানের অর্থ দফতরে কাজ করার সুবাদে দেখেছি, প্রথমেই অডিটররা পরীক্ষা করার জন্য চেয়ে নিতেন ব্যাঙ্ক রিকনসিলিয়েশন স্টেটমেন্ট আর ব্যাঙ্ক থেকে ইসু করা ব্যালান্স সার্টিফিকেট। কোম্পানির ব্যাঙ্ক ব্যালান্স ফাঁপিয়ে দেখানো আর ভুয়ো লেনদেন চিহ্নিতকরণের এটি এক প্রাথমিক অথচ গুরুত্বপূর্ণ নিরীক্ষণ। এক দশক আগে সত্যম কম্পিউটার থেকে আজকের আইএলএফসি, মাঝখানে একগুচ্ছ ব্যাঙ্ক আর নন-ব্যাঙ্কিং অর্থসংস্থার অডিটররা অনেক গাফিলতির সঙ্গে ভুয়ো লেনদেন চিহ্নিতকরণের এই প্রাথমিক কাজটাও করেননি। প্রায় দেউলিয়া হয়ে যাওয়া আইএলএফসির হিসাবের ফরেনসিক অডিটের পর গাফিলতির ক্ষেত্রগুলো হয়তো প্রকাশ পাবে, কিন্তু যত দিন না সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন করে ব্যালান্স শিট উইন্ডো ড্রেসিং-এর ওপর রাশ টানা যাচ্ছে, এ রকম হিসাব-স্বেচ্ছাচার চলতেই থাকবে। ফলভোগ করবেন সাধারণ মানুষ।

বুদ্ধদেব চট্টোপাধ্যায়

কুলটি, পশ্চিম বর্ধমান

বড় হাতের লেখা

‘হাতের লেখা অপাঠ্য, জরিমানা তিন ডাক্তারের’ (৫-১০) শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদসূত্রে এই পত্র। হাতের লেখা পড়া যায় না এই অভিযোগে উত্তরপ্রদেশের তিন চিকিৎসকের পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দিয়েছে ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। বস্তুত চিকিৎসকদের দুর্বোধ্য হস্তাক্ষর অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসা বিভ্রাটের কারণ হয়েছে। দুর্বোধ্য ব্যবস্থাপত্র চিকিৎসকের যশ ও ব্যস্ততার সূচক। পরিচ্ছন্ন হাতের লেখা মানে ডাক্তারের অঢেল সময়, তাতে শেষ বিচারে রোগীর সংখ্যা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা। চিকিৎসকের হাতের লেখা কেবল ওষুধের দোকানে বসা কর্মচারীটি বুঝতে পারেন— এই অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। নবপরিণীতা বধূটি তাঁর প্রবাসী ডাক্তার স্বামীর পাঠানো চিঠির মর্মোদ্ধার করতে না পেরে লজ্জার মাথা খেয়ে ওষুধের দোকানের শরণাপন্ন হওয়ায়, দোকানের কর্মী চিঠি পড়ে কাফ সিরাপ ও অ্যান্টাসিড ধরিয়ে দিয়েছিল— চালু রসিকতা সোশ্যাল মিডিয়ায়। বেশ কিছু ব্র্যান্ডেড ওষুধের শব্দোচ্চারণ কাছাকাছি হওয়ায় বিপদের মাত্রা বহুগুণ বলে মত প্রকাশ করেছিলেন গোয়া মেডিক্যাল কলেজের ফার্মাকোলজির অধ্যাপক পদ্মনাভ রতাবলী। মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী জেলার ১০৪৬টি প্রেসক্রিপশন অডিট করে তিনি দেখিয়েছিলেন, সরকারি-অসরকারি মিলিয়ে ৩৬ শতাংশ ব্যবস্থাপত্রের হস্তাক্ষর দুর্বোধ্য। ক্যাপিটাল লেটারের ওষুধের নাম লেখার জন্য এমসিআই-এর কাছে প্রস্তাব রাখা হয়েছিল। তা না হলে অপাঠ্য হাতের লেখার কারণে Azoo (অ্যান্টিবায়োটিক) ও Azox (টেনশন কমানোর ওষুধ), Celin (ভিটামিন সি) ও Celib (বাতের ওষুধ), Erix (যৌন রোগের) ও Erox (অ্যান্টিবায়োটিক) ইত্যাদি প্রায়-সমোচ্চারিত ওষুধের ভুল প্রয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। ইলাহাবাদ হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ সকল স্তরের মানুষকে সচেতন করে তুলুক। সরকার এমন বিল প্রণয়ন করুন, যেখানে সারা দেশের ডাক্তারেরা কেবল ক্যাপিটাল লেটারে জেনেরিক ওষুধের নাম ব্যবস্থাপত্রে লিখবেন।

সরিৎশেখর দাস

চন্দনপুকুর, ব্যারাকপুর

খারাপ রাস্তা

দমদম চিড়িয়া মোড় থেকে কাশীপুর বিবিবাজার মোড় অবধি দূরত্ব এক কিলোমিটারেরও কম। এর মধ্যে চিৎপুর রেল ইয়ার্ডও কিছুটা স্থান অধিকার করে আছে৷ গত কয়েক মাস ধরেই এই রাস্তা যাতায়াতের অযোগ্য৷ দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিকরা নজর দিলে ভাল হয়৷

দেবাশিস মণ্ডল

বিরাটি

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

India Freedom Partition Mahatma Gandhi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy