Advertisement
০৫ মে ২০২৪
matches

সম্পাদক সমীপেষু: দেশলাই কাহিনি

চকমকি পাথর থেকে আগুন জ্বালানো ও শেষে ‘সেফটি ম্যাচ’ বা আজকের দেশলাই মানবসভ্যতার অগ্রগতির উল্লেখযোগ্য মাইলস্টোন।

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:৫৭
Share: Save:

প্রজিতবিহারী মুখোপাধ্যায়ের ‘বাঙালির দেশলাই’ (রবিবাসরীয়, ২৩-১) তথ্যবহুল লেখা। সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘দেশলাই কাঠি’ কবিতার লাইন ধরে বলি— “আমি একটা ছোট্ট দেশলাইয়ের কাঠি/ এত নগণ্য, হয়তো চোখেও পড়ি নাঃ”। কিন্তু দেশলাই এক দীর্ঘ ইতিহাস ধারণ করে। দেশলাইয়ের আগমন স্মরণীয় হয়ে আছে বাংলার এক বিখ্যাত কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দেশলাইয়ের স্তব’ কবিতায়— “নমামি গন্ধকবন্ধ মুন্ডটি গোল লো,/ সর্ব্বজাতি প্রিয় দেব গৃহ কর আলো,/ শান্ত সভ্য অতি ধীর-চাপে যতক্ষণ,/ ধাপে উঠে চটে লাল-গৌরাঙ্গ যেমন!”

চকমকি পাথর থেকে আগুন জ্বালানো ও শেষে ‘সেফটি ম্যাচ’ বা আজকের দেশলাই মানবসভ্যতার অগ্রগতির উল্লেখযোগ্য মাইলস্টোন। নিত্যব্যবহার্য এই প্রয়োজনীয় জিনিসটি হয়ে উঠেছিল বিজ্ঞাপনের এক পরিচিত মাধ্যম। আমাদের ছেলেবেলায় ওই দেশলাইয়ের বিভিন্ন লেবেল সংগ্রহ ছিল এক শখ। দেশলাইয়ের লেবেলে থাকত তাসের পাত্তি, জোকার, বিভিন্ন বলিউডি তারকা, যেমন— অমিতাভ বচ্চন, মিঠুন বা শ্রীদেবীর ছবি। পরে জেনেছি, দেশলাই লেবেল সংগ্রহকারীদের বলা হয় ‘ফিলুমেনিস্ট’। সরস্বতী পুজোয় ওই জমানো লেবেল, ডাকটিকিট দিয়ে প্রদর্শনী হত। এখন ছেলেরা আর দেশলাইয়ের লেবেল জমায় না। সেই সময় আমাদের নিজে হাতে দেশলাই কাঠি জ্বালানোর সুযোগ হত কালীপুজোয়, আতশবাজি হিসাবে। সেই কাঠি জ্বালালে লাল-নীল শিখা, সঙ্গে দমবন্ধ করা ধোঁয়া বার হত।

১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ওই বছরেরই ৭ অগস্ট কলকাতার টাউন হলে তৎকালীন জাতীয়তাবাদী নেতারা বিদেশি পণ্য বর্জন ও স্বদেশি পণ্য গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। রবীন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতি-তে দেখি— “স্বদেশে দিয়াশালাই প্রভৃতির কারখানা স্থাপন করা আমাদের সভার উদ্দেশ্যের মধ্যে একটা ছিল।” দেশলাই নির্মাণ শিল্পও এই আহ্বানে সাড়া দেয়। কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় জাপানি কারিগরির সহায়তায় হিন্দুস্থান ম্যাচ কোম্পানি, ঊষা ম্যাচ কোং বা বীরভূম ম্যাচ ওয়ার্কস প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তী কালে ‘উইমকো’ কোম্পানির টেক্কা, ঘোড়া, জাহাজ ও হোমলাইট-মার্কা দেশলাই খুব জনপ্রিয় হয়। স্বাধীন ভারতে এক নম্বর দেশলাই উৎপাদন কারখানার শিরোপা পায় ‘উইমকো’। তবে এখন ‘একটা দেশলাই কাঠি জ্বালাও’-এর জায়গা দখল করেছে রকমারি লাইটার।

দেবাশিস দাস

বোলপুর, বীরভূম

শিরে কালো টুপি

প্রজিতবিহারী মুখোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ প্রসঙ্গে আরও কিছু ঐতিহাসিক তথ্য সংযোজন করতে চাই। শ্ৰীম কথিত শ্ৰীশ্ৰীরামকৃষ্ণ কথামৃত-এর ১৪ ডিসেম্বর ১৮৮২ দিনলিপিতে দেখা যায় শ্ৰীরামকৃষ্ণ বলছেন— “বিষয়বুদ্ধির লেশমাত্র থাকলে তাঁকে দর্শন হয় না। দেশলাইয়ের কাঠি যদি ভিজে থাকে হাজার ঘসো, কোনরকমেই জ্বলবে না। কেবল একরাশ কাঠি লোকসান হয়— বিষয়াসক্ত মন ভিজে দেশলাই।” এ ছাড়াও স্বামী ব্রহ্মানন্দ সঙ্কলিত শ্ৰীশ্ৰীরামকৃষ্ণ উপদেশ-এ বলা আছে ঠাকুর বলেছেন, “হাজার বছরের অন্ধকার ঘরে একবার একটা দেশলাইয়ের কাঠি জ্বাললে, তখনি আলো হয়।” রবীন্দ্রনাথের স্বদেশিকতার চমৎকার অভিজ্ঞতার কথা জীবনস্মৃতি গ্রন্থে আছে— “অনেক পরীক্ষার পর বাক্স কয়েক দেশলাই তৈরি হইল। ভারত সন্তানদের উৎসাহের নিদর্শন বলিয়াই যে তাহা মূল্যবান তাহা নহে— আমাদের এক বাক্সে যে খরচ পড়িতে লাগিল তাহাতে একটি পল্লীর সম্বৎসরের চুলা ধরানো চলিতো।” কবি হেমচন্দ্র দেশলাইয়ের স্তব রচনা করেছেন ১৮৮৪ সালে— “নমামি বিলাতি অগ্নি— দেশলাই রূপী/ চাঁচাছোলা দেহখানি, শিরে কালো টুপি।” এ ছাড়াও সে সময়ের অন্য লেখকদের স্মৃতিকথায়, রচনা ও বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় দেশলাই সংক্রান্ত নানা লেখা ও খবর পাওয়া যায়।

অনেক বছর আগে কেনা আমার সংগ্রহে এমন একটি অতি বিরল দেশলাই বাক্স আছে, যাতে শ্ৰীরামকৃষ্ণ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি দু’পিঠে দেওয়া!

উৎপল সান্যাল

কলকাতা-৩০

চাহিদায় টান

‘বাঙালির দেশলাই’ প্রবন্ধটি পড়ে একটু অবাক হলাম। মনে হয়, লেখকের অগোচরে প্রবন্ধটি থেকে স্বামী বিবেকানন্দ এবং জামশেদজি টাটার নাম বাদ পড়ে গিয়েছে। স্বামী বিবেকানন্দ মনেপ্রাণে চাইতেন গরিব ভারতবাসীর ঐহিক উন্নতি হোক। এ দেশে কলকারখানা বসুক, সেখানে ভারতবাসী কাজ করুক এবং আর্থিক কষ্ট থেকে মুক্তি পাক। বিবেকানন্দের কনিষ্ঠ ভ্রাতা লিখেছেন— ১৮৯৩ সালে স্বামীজির যাত্রাপথে জাহাজে শিল্পপতি জামশেদজি টাটার সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে। স্বামীজি এ প্রসঙ্গে একটি পত্রে লেখেন যে, তিনি টাটাকে বলেছিলেন, জাপান থেকে দেশলাই নিয়ে দেশে বিক্রয় করে তিনি জাপানকে টাকা দিচ্ছেন কেন? জামশেদজি তো সামান্য কিছু দস্তুর পান মাত্র। এর চেয়ে দেশে দেশলাইয়ের কারখানা করলে তাঁরও লাভ হবে। দশটা লোকের প্রতিপালন হবে। দেশের টাকা দেশেই থাকবে।

এখন অবশ্য সবার পকেটে লাইটার। দেশলাইয়ের চাহিদা দিন দিন কমছে। নতুন প্রযুক্তি পুরাতন প্রযুক্তিকে শেষ না করে ক্ষান্ত হয় না।

সঞ্জয় চৌধুরী

খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

জীবনের অঙ্গ

‘বাঙালির দেশলাই’ এক অন্য ধরনের পাঠের স্বাদ এনে দেয়। দেশলাই বা দিয়াশলাই এমন একটি বস্তু, যা মানুষের জীবনে এক অতি প্রয়োজনীয় আবিষ্কার। প্রবন্ধ পড়ে দেশলাই সম্বন্ধে অনেক অজানা তথ্য জানলাম, যার মধ্যে দেশলাইয়ের সঙ্গে কলকাতার আত্মিক সম্পর্ক এক ঐতিহাসিক দিক উন্মোচন করে। কিন্তু দেশলাইয়ের নেতিবাচক দিক নিয়ে কোনও আলোকপাত দেখলাম না। দেশলাই কী রকম বিধ্বংসী, একটিমাত্র জ্বলন্ত কাঠির বারুদের স্তূপের সঙ্গে সামান্য সখ্যই তা প্রমাণ করে। প্রবন্ধে আলোচনা হয়নি রঙিন দেশলাই নিয়ে, যার উপস্থিতি ছাড়া দীপাবলি আলোহীন। যে না জ্বললে বাজির রোশনাই কী, জানা যায় না।

পরিশেষে বলি, সময়োচিত প্রতিবেদনে কালের নিয়মে হারিয়ে যেতে বসা এক নিত্যপ্রয়োজনীয় জনজীবনের অঙ্গের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। একটা সময়কে ধরতে চাওয়া হয়েছে, যা বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির কোপে স্মৃতি হতে বসেছে।

দেবাশিস চক্রবর্তী

মাহেশ, হুগলি

সাহিত্যে দেশলাই

দেশলাই নিয়ে শ্রদ্ধেয় লেখক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন ব্যোমকেশ বক্সীর বিখ্যাত কাহিনি ‘অগ্নিবাণ’। বাঙালি বিজ্ঞানী দেবকুমার সরকারের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার এক মারণবিষ, যা সারা বিশ্বে আলোড়ন ফেলতে পারে। কিন্তু তিনি জানতেন, তাঁর এই অনবদ্য আবিষ্কারের পেটেন্ট তিনি পাবেন না। অথচ, টাকার বিশেষ প্রয়োজন। তাই দিল্লিতে বিজ্ঞান সভায় অংশগ্রহণ করার আগে দেশলাই বাক্সে ওই বিষ মাখানো একটি কাঠি রেখে দেন, যাতে তাঁর স্ত্রী দেশলাই জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে। ফলে তিনি বিমার পঞ্চাশ হাজার টাকা সহজেই পেয়ে যাবেন। দুর্ভাগ্যবশত, মৃত্যু ঘটে তাঁর মেয়ে রেখা ও পরে ছেলে হাবুলের। সুতরাং, দেশলাই শুধুই নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তু নয়, তা সাহিত্যের বিষয়বস্তুও বটে।

স্নেহাশিস সামন্ত

দাশনগর, হাওড়া

উপকারী বকুল

বকুল গাছের কাঠ মজবুত হওয়ায় তা পাখির বাসা তৈরির পক্ষে উপযুক্ত। পাতা ঘন হওয়ায় রোদ, বৃষ্টি ও ঝড়ের হাত থেকে বাসাটি রক্ষা পায়। তা ছাড়া এই গাছের ফল পাখিদের খুব প্রিয়। এটি ছায়া প্রদানকারী বৃক্ষ। দুঃখের বিষয়, এই গাছের বৃদ্ধি খুব কম! সল্টলেকের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রেনিং ইনস্টিটিউট-এর ভিতর অসংখ্য বকুল গাছ আছে। অগণিত পাখির কলতানে চার পাশ মুখরিত হয়ে ওঠে! প্রতিটি গাছে কম করে দশ থেকে পনেরোটি করে বাসা লক্ষ করা যায়। বন দফতর, পরিবেশপ্রেমী সংগঠন, পক্ষিপ্রেমী সংগঠনের কাছে আবেদন, রাস্তা, রেললাইনের ধারে, নদী পাড়ে, পার্কে ও পতিত জমিতে যাতে বেশি করে এই গাছ লাগানো হয়, সেই উদ্যোগ করা হোক।

দিলীপ কুমার পাত্র

ময়না, পূর্ব মেদিনীপুর

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

matches
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE