Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Netaji Subhash Chandra Bose

সম্পাদক সমীপেষু: পরাক্রমী তকমা

সম্ভবত ‘দেশনায়ক’ বিশেষণটি বীর সাভারকরের জন্য সুরক্ষিত রেখে সুভাষের উপর ‘পরাক্রমী’ ভাবমূর্তি চাপানো হচ্ছে।

শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৪৬
Share: Save:

‘স্বপ্নদর্শী’ (সম্পাদকীয়, ২৩-১) স্পষ্ট করেছে, কী নির্লজ্জ প্রক্রিয়ায় আধিপত্যবাদী সংস্কৃতি ভোটের তাগিদে ইতিহাস বিকৃত করছে। সঙ্ঘ পরিবারের বৃত্তিভোগী বুদ্ধিজীবীকুল সম্ভবত বিজেপি নেতৃত্বকে বুঝিয়েছেন, শ্যামাপ্রসাদের নামে চিঁড়ে ভিজবে না। তাই বিবেকানন্দ-সুভাষচন্দ্রদের নিয়ে রাজ্যবাসীর আবেগ ঘুলিয়ে ঘোলা জলে মাছ ধরতে হবে। না হলে সুভাষচন্দ্রের সেনানায়কের ভূমিকাকে কেন প্রধান করা হচ্ছে? সম্ভবত ‘দেশনায়ক’ বিশেষণটি বীর সাভারকরের জন্য সুরক্ষিত রেখে সুভাষের উপর ‘পরাক্রমী’ ভাবমূর্তি চাপানো হচ্ছে।

নেতাজির মহানিষ্ক্রমণের পর সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের সঙ্কটকে কাজে লাগিয়ে যখন দেশে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছিল, প্রবাসে নেতাজি সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন সাভারকর ঔপনিবেশিক শাসকদের সমর্থনে হিন্দুত্ববাদী নাগরিকদের সামরিকীকরণের জন্য উঠে-পড়ে লেগেছিলেন। ১৯৪১ সালে হিন্দু মহাসভার ২৩তম অধিবেশনে তিনি ভাগলপুর ভাষণে বলছেন, “যুদ্ধ যেমন বিপদ ডেকে এনেছে, তেমনই অভূতপূর্ব সুযোগ এসেছে প্রতিটি গ্রাম-শহরে হিন্দু মহাসভার নেতৃত্বে দেশবাসীর সামরিকীকরণের পথ বেছে নেওয়ার। হিন্দু জনগণকে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীতে যোগ দিতে প্রেরণা দিতে হবে। ভারতের প্রতিরক্ষার কাজে হিন্দুরা ব্রিটিশ শাসকদের পূর্ণ সহযোগিতা করবে।... অসম এবং বাংলার হিন্দু মহাসভার কর্মীদের এক মিনিটও দেরি না করে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করতে হবে এবং সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হবে। এ ভাবে হিন্দু রাষ্ট্র ক্রমশ শক্তিশালী হলে যুদ্ধ শেষে অতুলনীয় শক্তি অর্জন করবে।” সেই হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র ভাবনা থেকে সঞ্জাত জাতীয়তাবাদের ধারণা ও সংখ্যাগুরুর ‘পরাক্রম’ তথা আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ট্র্যাডিশনই বিজেপির সম্পদ। তাই সুভাষচন্দ্রকে ‘পরাক্রমী’ বলে তুলে ধরার আগ্রহ।

পার্থসারথি দাশগুপ্ত

রহড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

নন্দ ঘোষ শিক্ষক

“সত্যিকারের শিক্ষক তাঁরাই, যাঁরা আমাদের ভাবতে সাহায্য করেন”, বলেছিলেন সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণন। পুঁথিগত শিক্ষা দেওয়াই এক জন শিক্ষকের প্রধান কর্তব্য নয়, এটা সকলে না মেনে চললেও জানি। আজকাল প্রযুক্তির কল্যাণে পড়াশোনার বিষয়ে যাবতীয় তথ্য ইন্টারনেটের দুনিয়ায় সহজলভ্য। এর ফলে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার দিন দিন কমছে। স্কুলছুট পড়ুয়াদের সংখ্যা বাড়ছে, মহাবিদ্যালয়-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘ক্লাস বাঙ্ক’ করা যেন পড়ুয়াদের মৌলিক অধিকার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। নেশা, জুয়ার নিরাপদ বিনোদনস্থল হয়ে উঠছে অনেক কলেজের প্রাঙ্গণ। শিক্ষকদের সেই সম্মান আজ কোথায়? ব্যতিক্রম যদিও আছে, তবু নিজের পাঁচ বছরের অধ্যাপক জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি— বেসরকারি কিছু কলেজে অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের বেতনভুক দাস ভেবে সেই রকম মন্দ আচরণ করা হয়। কলেজে পড়ুয়া ভর্তি না হলে, পরিকাঠামো না গড়া হলে, অলস-বেয়াদব পড়ুয়া পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে, ক্যাম্পাসিং-এ চাকরি না পেলে, দোষ হয় শিক্ষকের। উদাসীন, অর্থলোলুপ কর্তৃপক্ষ কিংবা ফাঁকিবাজ পড়ুয়াদের দোষ নেই। ঠিকমতো অর্থব্যয় করব না, এ দিকে পরিকাঠামো উন্নত করতে হবে, এবং শিক্ষক-অধ্যাপকদেরই সেটা করতে হবে। কী করে সম্ভব? শিক্ষকতা হয়েছে গৌণ, ব্যবসায়ের জন্য ‘মার্কেটিং’-ই প্রধান, এবং সেটাও শিক্ষকদেরই করা উচিত, এই হল কর্তৃপক্ষের মনোভাব। বেতন দেওয়া হচ্ছে, করতেই হবে। অগত্যা পেটের দায়ে সংসার-চাকরি বাঁচাতে তা-ই করছেন নিরুপায় শিক্ষক সম্প্রদায়।

আগেকার দিনে স্কুল-পাঠশালায় দুষ্টুমি করলে ছাত্রছাত্রীদের শাসন করতেন শিক্ষক, অভিভাবকরা। এ ভাবেই এক জন পড়ুয়া পেত নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা, মানবিকতার মূল্যবান পাঠ। এখন শিক্ষকরাই শাসন-শোষণের শিকার। ফলে সেই দায়িত্ববোধ, পিতৃসুলভ বা মাতৃসুলভ ব্যবহার খুব একটা আর দেখি না। কী দরকার ঝুটঝামেলার! মাস গেলে মাইনেটা পেলেই শান্তি! যদিও বা কেউ দায়িত্ব নিয়ে, যত্ন নিয়ে শিক্ষকতা করতে যান, কলেজ বা স্কুলের পারিপার্শ্বিক অসুস্থ পরিবেশ-পরিস্থিতি তাঁকে বাধ্য করে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে।

কিছু দিন আগে এই ব্যাপারে এক শিক্ষিকা দিদি বলেছিলেন, “যে সব শিক্ষক-শিক্ষিকা নতুন কিছু প্রয়োগ করতে যান, ছাত্রছাত্রীদের মঙ্গল করতে চান বা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রবল চক্রান্ত চলে স্কুলের অন্দরে ও বাইরে। এমনকি কোন শিক্ষক কী ভাবে পড়াবেন, সেই বিষয়ে নির্দেশনামা জারি করে আর এক দল ফাঁকিবাজ, সুবিধাবাদী শিক্ষক-শিক্ষিকা। তা অমান্য করলে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই হেনস্থার শিকার হতে হয়।”

এই সমস্ত কুরুচিকর রাজনীতির জন্য নিষ্পাপ শিশুদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে। পরীক্ষার প্রশ্ন আজকাল সহজেই অনুমেয়। ভাল নম্বর পাওয়া সহজ হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা যদি যেন তেন প্রকারেণ ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষায় ভাল নম্বর পাওয়াতে পারেন, সবাই খুশি। বাঁধা গতের পড়াশোনায় যা শেখানো হচ্ছে, মুখস্থবিদ্যায় সেটা আওড়াতে বা লিখতে পারলেই মেলে ঝুড়ি ঝুড়ি নম্বর। অথচ, এতে ছাত্রছাত্রীর নিজস্ব ভাবনার বিন্দুমাত্র বিকাশ ঘটছে না। শুধুমাত্র পরীক্ষাকেন্দ্রিক পড়াশোনা করলে কী করে তার ভাবনা-মনন-চেতনার বিকাশ হবে?

বর্তমান যুগের প্রতিযোগিতায় ভাবার অবকাশ নেই, ফলে শৈশবে বিকাশের পথটাই অবরুদ্ধ। ছাত্রছাত্রীরা আজকাল তো প্রশ্ন করতেই ভুলে যাচ্ছে। যদি কেউ করে, কোনও না কোনও অজুহাতে আবার তাকে বইমুখী করে দেওয়া হয়। বইয়ের পাহাড় আর টিউশনের বোঝায় খেলাধুলো-লৌকিকতাও প্রায় বন্ধ। এ ভাবেই শিশুর সার্বিক বিকাশের পথ প্রায় অবরুদ্ধ। অথচ, যত দেখা যাবে, যত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে, শিক্ষার ভিত ততই শক্ত হবে। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম বলেছিলেন, “ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যে বৈশিষ্ট্যটি থাকা দরকার, তা হল প্রশ্ন করার ক্ষমতা, তাদের প্রশ্ন করতে দিন।”

দীপন বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা-১০৫

টাকায় আগুন

কালীঘাটে পুড়ল বস্তা ভরা টাকা (‘গঙ্গার ঘাটে বস্তাবন্দি পোড়া টাকা...’, ২৫-১)। যে দেশের মানুষ অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটায়, যে দেশের মানুষ আর্ত, পীড়িত, অসহায়, নিরন্ন, গৃহহারা, যারা দু’বেলা দুটো খাবারের জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, তারা পায় না টাকার দেখা। অথচ বস্তায় পুড়ছে কালো টাকা। যদি বস্তায় আগুন না ধরিয়ে টাকাগুলো রাস্তায় ফেলে যেত, তা হলেও তো গরিব মানুষ কিছু টাকা হাতে পেত।

স্বপন আদিত্য কুমার

অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

পান্নালাল

পান্নালাল ভট্টাচার্য সম্বন্ধে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুলিখিত ও তথ্যসমৃদ্ধ নিবন্ধটি (‘ভাবের খেলা দিয়ে’, পত্রিকা, ২-১) যেন প্রাণে সুধাবারি সিঞ্চন করল। শ্রীকান্ত আচার্য এক বার বলেছিলেন যে, গানের মধ্যে শ্যামাসঙ্গীত তাঁর বেশি ভাল লাগে, কারণ এ গানের আর্তি ও আবেগ তাঁকে টানে। এই আবেগের নাম পান্নালাল ভট্টাচার্য। তাঁর গানে মূর্ত হয়ে ওঠা আকুতি, অভিমান যেন ছেলে তার মা’কে জানাচ্ছে। ‘মাগো, মুছিয়ে দে মোর এ দু’টি নয়ন, মুছিয়ে দে স্নেহভরে...’ গানে তিনি যখন গান, ‘তোর পাদপদ্ম হতে যে মা সুধাবিন্দু ঝরে, সেই করুণা পাই যদি মা, মা...’ এই যে শেষে ‘মা’ ডাক, তা যেন বাঙালির হৃদয় মথিত করে মনের টানের শেষ সীমায় পৌঁছোয়। ‘শ্যামা মা কি আমার কালো?’ গানে তিনি যখন বলেন, ‘মায়ের সে ভাব ভাবিয়া কমলাকান্ত সহজে পাগল হল রে’ তখন সেই আবেগে কমলাকান্ত না পান্নালাল, কে পাগল হন, বলা মুশকিল। সঙ্গে শ্রোতারাও পাগল হন।

শিখা সেনগুপ্ত

কলকাতা-৫১

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE