Advertisement
E-Paper

বোধনের ঠিক আগেই হওয়া এই বিসর্জন কিন্তু বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ

সে দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে ছিলেন যিনি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবচেয়ে শক্তিশালী সৈনিকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন যিনি, এ বারের বোধনের ঠিক আগেই তাঁর বিসর্জন হয়ে গেল। তাঁর নাম মুকুল রায়।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:৫৪
মুকুল রায়। ছবি: পিটিআই।

মুকুল রায়। ছবি: পিটিআই।

আজ মহাষষ্ঠী। সকলকে শুভেচ্ছা।

শাস্ত্রীয় মতে আজই দেবীর বোধন। বেশ কয়েক বছর আগে এই রকম একটা বোধনের ঠিক আগেই একটা বিসর্জন দেখেছিল বাংলা— শিল্পায়ন সম্ভাবনার বিসর্জন। সিঙ্গুর থেকে বিদায় নিয়েছিল টাটা। বিদায়ের ক্ষণে যাঁর দিকে বন্দুকের নলটা তাক করে ট্রিগার টিপেছিলেন রতন টাটা, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে ছিলেন যিনি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবচেয়ে শক্তিশালী সৈনিকদের অন্যতম ছিলেন যিনি, এ বারের বোধনের ঠিক আগেই তাঁর বিসর্জন হয়ে গেল। তিনি মুকুল রায়।

জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূলের সঙ্গে থাকা মুকুল রায় ছ’বছরের জন্য সাসপেন্ড হয়েছেন দল থেকে। দলের সঙ্গে সম্পর্ক যে ভাল যাচ্ছিল না ইদানীং, মুকুল রায় নিজেও সে ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। নেতৃত্বের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে নেওয়া, বার বার দিল্লি যাতায়াত, বিজেপি ঘনিষ্ঠতা সংক্রান্ত জল্পনা নস্যাৎ করার কোনও চেষ্টাই না করা— মুকুল রায়ের নানা আচরণে স্পষ্ট হচ্ছিল তাঁর বেসুর। চতুর্থী এবং পঞ্চমীতে দলের প্রতি অনীহা আরও স্পষ্ট করে ব্যক্ত করেন। অবধারিত ভাবে দল তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপও করে। তবে দলের তরফেও মুকুল রায়ের প্রতি অনীহার ইঙ্গিত দেওয়া শুরু হয়েছিল কিছু দিন আগে থেকেই। দলের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া বা তাঁর উপর নজর রাখা হচ্ছে বলে জানানোর মাধ্যমে তৃণমূলও বুঝিয়ে দিচ্ছিল, বিচ্ছেদই কাম্য মুকুল রায়ের সঙ্গে। সেই বিচ্ছেদ হয়েও গেল। কিন্তু এ বার কি? মুকুল রায় কি বিজেপিতে যাচ্ছেন? নাকি আলাদা দল গড়ছেন? যদি আলাদা দল গড়েন, তা হলে সে দল কি জোট বাঁধবে বিজেপির সঙ্গে? এমন হরেক প্রশ্ন এ বার উঁকি দিতে শুরু করেছে রাজনীতির উঠোনের চারপাশ থেকে।

আরও পড়ুন:তৃণমূল ছাড়লেন মুকুল রায়

প্রশ্ন আরও আছে। বিজেপিতে সরাসরি যোগ দিন, বা দল গড়ে বিজেপির সঙ্গী হন, মুকুল রায় কি আদৌ কোনও ফারাক গড়তে পারবেন এ বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে? এই প্রশ্নও চর্চায় এখন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল থেকে এই প্রথম কারও বিসর্জন হল, এমন তো নয়। আগেও হয়েছে একাধিক। কেউই কি পরিস্থিতিটা খুব কঠিন করে তুলতে পেরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য? তৃণমূলের পিছনে যে ভিড়, তা যে মূলত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই টানে, এ কথা অনস্বীকার্য। মুকুল রায়ের নিজস্ব জনভিত্তি রয়েছে বলে কোনও দিন শোনা বা দেখা যায়নি। মুকুল রায় সম্ভবত নিজেও জানেন যে, তাঁর ডাকে কোনও জনসভায় সাতজন লোক হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তা হলে মুকুলের যোগে বা বিয়োগে পরিস্থিতির বদল ঘটার প্রশ্ন উঠছে কেন? প্রশ্নটা উঠছে, কারণ তাঁর নিজস্ব জনভিত্তি বলে যে কিছু নেই, তা মুকুল রায় নিজেও অত্যন্ত ভাল করে জানেন এবং জানেন বলেই অন্যতর এক রাজনৈতিক গুণ মুকুল রায় নিজের মধ্যে সমন্বিত করেছেন। মুকুল রায় দলের একেবারে ভিতরের লোক, মুকুল রায় দলের অন্দরমহলের সব খবর জানেন, মুকুল রায় তৃণমূলের অন্ধি-সন্ধি চেনেন— দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রাপথে মুকুল রায় এই সত্যকে খুব যত্ন নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন। দলের অন্তরতম কক্ষের সেই সব তথ্য মুকুল রায় যদি এখন প্রয়োজন মতো তুলে দিতে শুরু করেন বিজেপির হাতে, তা হলে কী হবে? সেই সব তথ্যকে কাজে লাগিয়ে কি বিজেপি এ রাজ্যে নিজেদের অগ্রগতির পথটাকে চওড়া করে নিতে পারবে? এই প্রশ্নকে ঘিরে জল্পনা এখন বাড়ছে।

আরও পড়ুন:মুখে গুরুত্বহীন,ক্ষত তবু বিঁধছে দলের ভিতরে

পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা দখল করার আগে হোক বা পরে, অনেক রকম রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিই হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিন নানা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে পেরেছেন বলেই তিনি পর পর দু’টি মেয়াদে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী পদে। এ বারের চ্যালেঞ্জেও মমতা উতরে যাবেন না, এমনটা জোর দিয়ে বলবেন না কোনও রাজনৈতিক বিশ্লেষকই। উতরে যদি যেতে পারেন তিনি এ বারও, তা হলে ভবিষ্যৎ অনেক দূর পর্যন্ত মসৃণ পথ নিয়ে অপেক্ষায় থাকবে। কিন্তু মুকুল রায়ের সঙ্গে তৃণমূলের বিচ্ছেদ যদি লাভের কড়ি জমা করতে শুরু করে বিজেপির ঝুলিতে, যদি এ রাজ্যের রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে কোনও বদল ঘটাতে পারে বিজেপি, তা হলে সামনের দিনগুলো খুব স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে অনেকের জন্যই।

মুকুল রায়ের বিসর্জনটা অতএব খুব সাধারণ ঘটনা নয়। এই বিসর্জনের পরে জল্পনা এবং গুঞ্জন যে ভাবে মাতিয়ে তুলছে বাংলার রাজনীতির উঠোনটাকে, তাতে স্বীকার করতেই হবে, রাজনৈতিক তাৎপর্যে এই বিসর্জন অন্যগুলোর চেয়ে অনেকটাই আলাদা।

Mukul Roy tmc Suspension Resignation Mamata Banerjee মুকুল রায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy