E-Paper

ওজনদার

ভারতে বর্তমানে অন্তত দেড় কোটি শিশু মাত্রাতিরিক্ত ওজন আর স্থূলত্বের সমস্যায় ভুগছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৯৭ সালেই ওবেসিটি-কে ‘অসুখ’ হিসাবে চিহ্নিত করেছিল।

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৫ ০৭:০৯

এ এক আশ্চর্য উলটপুরাণ। পরিসংখ্যান বলছে, বছর পঁচিশ আগে বিশ্ব জুড়ে ১৩ শতাংশ শিশুই ছিল কম ওজনের বা অপুষ্টিতে ভোগা। সেই চিত্র সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এই পরিবর্তন স্বস্তির বদলে অন্য এক বিপদের ইঙ্গিতবাহী হয়ে দেখা দিয়েছে। ইউনিসেফ-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট জানাচ্ছে, ২০২২ সালে গোটা বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ শিশু ভুগছে স্থূলত্ব বা অতিরিক্ত ওজনের কারণে। প্রতি পাঁচটি শিশু পিছু এক জন অতিরিক্ত ওজনের শিকার— এই তথ্য প্রকৃতপক্ষে এক বিপজ্জনক জীবনযাত্রার ধরনের প্রতিফলন, যেখানে পুষ্টিকর খাবারকে সরিয়ে জায়গা করে নেয় অতিরিক্ত তেলমশলাযুক্ত মুখরোচক খাবার, এবং শারীরিক পরিশ্রম ক্রমশ কমিয়ে শিশু অলসযাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। অবস্থা এমনই জটিল যে, বিশ্ব জুড়ে শিশুদের মধ্যে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির প্রবণতাকে ‘মহামারি’ আখ্যা দেওয়া হচ্ছে।

ভারতে বর্তমানে অন্তত দেড় কোটি শিশু মাত্রাতিরিক্ত ওজন আর স্থূলত্বের সমস্যায় ভুগছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৯৭ সালেই ওবেসিটি-কে ‘অসুখ’ হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। কিন্তু ভারত এখনও সেই পথে ভাবতে শুরু করেনি। অথচ, শৈশবকালীন ওবেসিটি এমনই এক বিষয়, যেটি শুধুমাত্র ওজন বৃদ্ধিতেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং বৃদ্ধি করে হার্ট, কিডনি এবং লিভারের দীর্ঘস্থায়ী জটিল রোগ, এমনকি কিছু ধরনের ক্যানসারের সম্ভাবনাও, যা সংশ্লিষ্ট পরিবারে অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের আগামী দিনের শ্রমশক্তির পক্ষেও অশনিসঙ্কেত স্বরূপ। নিঃসন্দেহে শিশুদের বাড়তি ওজনের অন্যতম কারণ খাদ্যাভ্যাস। তারা বাড়ির রান্না করা খাবারের বদলে অর্থনৈতিক অবস্থা নির্বিশেষে ক্রমশ অভ্যস্ত হয়ে উঠছে বাইরের মুখরোচক খাবারে। শিশুর যথাযথ বৃদ্ধির জন্য পুষ্টিবিদরা সুষম খাদ্য গ্রহণের কথা বলেন। অর্থাৎ, খাওয়ার পাতে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, ফ্যাট— সব কিছুই চাই। তাজা আনাজপাতি, সময়ের ফল, টাটকা মাছ-মাংসের মধ্যে এ সবই পাওয়া যায়। কিন্তু কর্মব্যস্ত দুনিয়া এবং পরিবর্তিত খাদ্যরুচি সেই গণ্ডির বাইরে মানুষকে টেনে আনতে চায়। প্রাপ্তবয়স্কদের বিগড়ে যাওয়া খাদ্যাভ্যাস প্রভাব ফেলে শিশুদের মধ্যেও। বাইরের অধিকাংশ খাদ্য ও পানীয়তেই থাকে মাত্রাতিরিক্ত অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট, চিনি ও নুন। এ জাতীয় খাদ্য, পানীয়ে আসক্তি গড়ে ওঠা শিশুর শরীরের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যেরও অপূরণীয় ক্ষতি করে।

এই ক্ষতি রোখার জন্য প্রয়োজন সার্বিক সচেতনতা বৃদ্ধি। সম্প্রতি জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের উদ্যোগে সিবিএসই ও সিআইএসসিই বোর্ডের স্কুলগুলিতে ‘শুগার বোর্ড’ লাগানো হয়েছে। তাতে কোন খাবারে কতটা চিনি, তার মাপ ও ঝুঁকি বিষয়ে লেখার সঙ্গে স্বাস্থ্যসম্মত বিকল্পের হদিসও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ সবই এক সীমিত পরিসরের জন্য। দেশের সর্বস্তরের শিশুরা তার সুফল কত দূর ভোগ করবে, সে প্রশ্নের উত্তর নেই। একই ভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণে শরীরচর্চা খেলাধুলার উপর গুরুত্ব দিলেও আধুনিক ভারতে শিশুদের অত্যধিক গ্যাজেট-নির্ভরতা, মাঠের অভাব এবং মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণ সেই ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতা তৈরিতে সক্ষম। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতে শিশুদের স্থূলতা বৈশ্বিক বোঝার প্রায় ১১ শতাংশে দাঁড়াবে। অসুস্থ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দেশ তার কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি লাভ করবে কোন পথে?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

UNICEF Health

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy