E-Paper

খেলার পুতুল

বিজয় ও টিভিকে নেতারা তখন সভা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন, এত মানুষের মৃত্যুর পরেও দায়িত্ববোধের পরিচয় দেননি, অনুশোচনা দেখাননি।

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:১১
‘থালাপতি’ বিজয়ের নতুন রাজনৈতিক দল টিভিকে-র জনসভা।

‘থালাপতি’ বিজয়ের নতুন রাজনৈতিক দল টিভিকে-র জনসভা।

আদালতের ধমক না খেলে কেউ কোনও কাজ করবে না, এ-ই কি ‘নিয়ম’? তামিলনাড়ুর কারুরে চিত্রতারকা জোসেফ ‘থালাপতি’ বিজয়ের নতুন রাজনৈতিক দল টিভিকে-র জনসভায় চল্লিশেরও বেশি মানুষ পদপিষ্ট হয়ে মারা গেলেন, অথচ ‘সুপারস্টার’ অভিনেতা তড়িঘড়ি অকুস্থল থেকে চলে গেলেন, পরদিন ভিডিয়ো-বার্তায় দুঃখপ্রকাশ ও ক্ষতিপূরণের পোশাকি ঘোষণাটুকু সেরে উঠেই দোষ দিয়ে চলেছেন শাসক দল ডিএমকে-র সরকারকে— পুলিশ-প্রশাসনের অব্যবস্থাতেই নাকি এই দুর্ঘটনা। অথচ তারকা-নেতা নিজে এসেছেন ছ’ঘণ্টা দেরিতে, এর মধ্যে তাঁকে দেখতে ভিড় বেড়েছে ক্রমশ, খিদে তেষ্টা গরমে অধৈর্য মানুষের স্রোত শেষে রুপোলি পর্দার নায়কের দিকে এগোতেই বাঁধ ভেঙেছে, ঘটেছে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা। মাদ্রাজ হাই কোর্ট সম্প্রতি বিজয়কে অত্যন্ত ভর্ৎসনা করে বলেছে, যখন দরকার ছিল মানুষের প্রাণ বাঁচানোর, বিজয় ও টিভিকে নেতারা তখন সভা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন, এত মানুষের মৃত্যুর পরেও দায়িত্ববোধের পরিচয় দেননি, অনুশোচনা দেখাননি।

ভারতে রাজনীতি ও বিনোদন জগতের মধ্যে এক প্রকার মিথোজীবিতা আছে। তাতে উভয়েরই সুবিধা— এক পক্ষের মেলে দ্রুত ও বেশি জনসমর্থন, অন্য পক্ষের ব্যক্তিগত ও অর্থনৈতিক সিদ্ধিলাভ। ভারতের রাজনীতিতে চিত্রতারকা-নেতানেত্রীর ছড়াছড়ি তাই যেমন পরিচিত ঘটনা, ততটাই পরিচিত এই অভিযোগও: এঁরা আসলে রাজনীতি বা জনমন কোনওটাই বোঝেন না, রুপোলি পর্দার জনপ্রিয়তার জোরেই রাজনীতির ময়দান পেরোতে চান, এবং তারকাসুলভ দূরত্বের জন্য জনগণের সঙ্গে এঁদের প্রকৃত যোগাযোগটুকুও থাকে না, মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা দূরস্থান। বিরল ব্যতিক্রমটুকু ছাড়া এ-ই হল বর্তমান ভারতে জনবাদী রাজনীতির চিত্র: জনপ্রিয় বিনোদন-ব্যক্তিত্ব রাজনীতিতে আসবেন, ভোটের আগে কোনও দলের হাত শক্ত করবেন বা নিজেই নতুন দল গড়বেন, ভোটে জিতে সংসদ-বিধানসভা ইত্যাদি যাতায়াত করবেন এবং বেশির ভাগ দিনই যাবেন না কারণ তাঁর ‘অন্য কাজ’ আছে। যাঁদের দৌলতে তাঁদের এত নামডাক, সেই জনতাকে জানার, বোঝার, তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর কোনও দায় এঁদের নেই। বিজয়ের রাজনৈতিক দলটি এখনও মূলধারার রাজনীতিতেও ঢোকেনি। তবে যে দল তাদেরই আয়োজিত জনসভায় ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা প্রাণহানি এড়িয়ে নিজের গা বাঁচাতে তৎপর, তাদের হাতে মানুষের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা নিয়ে সন্দেহ হয়।

তারকার অমানবিক মূর্খামিকে তোল্লাই দেয় রাজনীতিই। তিনি যে দলের মুখ তারা এ-হেন অনৈতিক কাজও ক্রমাগত সমর্থন করবে, আর বিরোধীরা সুর চড়াবেন, এই হল বাঁধা ছক। তামিলনাড়ুর ঘটনাতেও তা-ই দেখা যাচ্ছে, বিজয় নিজে তো বটেই, রাজনৈতিক বিরোধী বিজেপিও দায় চাপিয়েছে শাসক দল ডিএমকে-র ঘাড়ে। পরের বছর বিধানসভা ভোট, এ আসলে সুযোগ বুঝে তামিল চিত্রতারকাকে কাছে টানার চেষ্টা— অন্ধ্রপ্রদেশে অভিনেতা-নেতা পবন কল্যাণের জনসেনা পার্টি-র সঙ্গে বিজেপি-জোটের উদাহরণ মনে পড়তে বাধ্য। ক্ষুদ্র স্বার্থের পাকেচক্রে হারিয়ে যায় আসল কথাটি: সাধারণ নাগরিক কী পেলেন? তাঁদের গতি সেই খেলার পুতুলের মতো, ভোটের আগে নাড়াচাড়া করে পরে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হবে যাদের, পদপিষ্ট হয়ে পড়ে থাকবে গণতন্ত্রের উঠোনে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Thalapathy Vijay Madras High Court

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy