E-Paper

অহেতুক

করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিদের দাহকাজের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার বাইরে একটি জায়গা নির্দিষ্ট করা হয়েছিল, যেখানে স্বাস্থ্যকর্মী এবং পুরকর্মীদের তত্ত্বাবধানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হত।

শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:৪৪

ঘড়ির কাঁটা আর ক্যালেন্ডারের পাতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সামনে এগিয়ে চলাই নিয়ম। কেউ যদি তার পরিবর্তে নিজের পুরনো অবস্থানটিকেই আঁকড়ে ধরে থাকে এবং নিজ কর্ণ ও চক্ষুদ্বয়কেও সজোরে বন্ধ রাখে, তবে তাকে কাণ্ডজ্ঞানরহিত মনে করাই উচিত। করোনায় মৃতদের সৎকারের ক্ষেত্রে কলকাতা পুর প্রশাসনের রকমসকম দেখে তেমনটাই মনে হয় বটে। সম্প্রতি জানা গেল যে, এ শহরে এখনও কোভিডে মৃতদের ক্ষেত্রে শেষকৃত্যের জন্য পুরসভার ধাপাকেই বেছে নেওয়া হয়। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে উত্তর কলকাতার এক বাসিন্দার মৃত্যুর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁর পরিজনদের হাতে দেহ তুলে দিতে রাজি হয়নি। জানানো হয়েছিল, করোনায় মৃতের ক্ষেত্রে নিয়মের কোনও বদল হয়নি। তাই পুরসভার হাতেই দেহ তুলে দেওয়া হবে। অতঃপর পুরসভার তত্ত্বাবধানেই ধাপায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

কোভিডকালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিদের দাহকাজের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার বাইরে একটি জায়গা নির্দিষ্ট করা হয়েছিল, যেখানে স্বাস্থ্যকর্মী এবং পুরকর্মীদের তত্ত্বাবধানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হত। এই উদ্যোগ অহেতুক ছিল না। করোনাভাইরাসের চরিত্র তখনও অনেকাংশেই ছিল অজানা। অজানা ছিল তার সংক্রমণ ছড়ানোর পদ্ধতিটিও। তা ছাড়া তখনও প্রতিষেধকের পূর্ণ প্রয়োগ হয়নি। ফলে, সেই সময় বাড়তি সতর্কতার প্রয়োজন ছিল। বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কোভিড নিয়ে সেই আতঙ্কের আবহ আর নেই। করোনাভাইরাস পূর্বের তীব্রতা অনেকাংশে হারিয়েছে। যে কোনও রোগের মতোই তাকে দৈনন্দিনতায় মিশিয়ে এগিয়ে চলার পরামর্শও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আগামী দিনের সংক্রমণ নিয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। কিন্তু একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, সেই সতর্কতা যেন অবাস্তব, অবৈজ্ঞানিক, অন্তঃসারশূন্য আড়ম্বর হয়ে না ওঠে। সর্বত্র পূর্ণোদ্যমে কর্মকাণ্ড শুরু হওয়ার পরও যদি শুধুমাত্র মৃত্যুর ক্ষেত্রে পুরনো প্রথাকেই আঁকড়ে ধরে থাকা হয়, তবে সেই কাজ বাস্তবোচিত নয়। প্রশাসন স্বয়ং সেই কাজে যুক্ত থাকলে তা বিরক্তিকর ঠেকে।

তবে পুরসভার এই নিয়ম না-বদলের সিদ্ধান্তের মধ্যে আরও একটি দিক স্পষ্ট— উদ্যোগের অভাব। যা চলছে, তাকে পরিবর্তন করতে হলে কিছু তরতাজা ভাবনাচিন্তার প্রয়োজন হয়। সেই সময় এবং গুরুত্ব দানের মানসিকতা এ ক্ষেত্রে অনুপস্থিত। স্বাস্থ্য দফতর এবং পুরসভার দায় চাপানোর ভঙ্গিটিতেও তা স্পষ্ট। পুরসভার দাবি, স্বাস্থ্য দফতরের তরফে অন্য শ্মশানে দাহকাজের অনুমতি মেলেনি, আর স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, অন্য শ্মশানে তা চালুর জন্য কোনও আবেদনই করেনি পুর কর্তৃপক্ষ। যা চলছে, কেন চলছে, বর্তমানে তার আর প্রাসঙ্গিকতা আছে কি না— সেই প্রশ্নটুকুও কেউ তোলেননি। অথচ, এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন তোলা জরুরি ছিল। কোভিডকালে করোনায় মৃতদের গাদাগাদি করে রাখা, পরিজনহীন মৃতদেহকে সৎকারের গাড়িতে ছুড়ে ফেলার যে দৃশ্যগুলি নানা মাধ্যমে ফুটে উঠেছিল, তা দেখে আঁতকে উঠেছিলেন দেশবাসী। সেই অ-মানবিকতা থেকে সরে এসে মৃতদেহের প্রতি, তিনি করোনা আক্রান্ত হলেও, শ্রদ্ধা প্রদর্শনের স্বাভাবিক অভ্যাসে দ্রুত ফিরে আসা প্রয়োজন। আশঙ্কা, পুরনো নিয়ম আঁকড়ে রাখা সেই মানবিক চর্চাকেও পিছিয়ে দেবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

KMC Corona Death

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy