Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Street hawkers

ফুটপাত চুরি

বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে প্রাথমিক ভাবে ১৯ জন হকারের নাম চূড়ান্ত করে শংসাপত্র দেওয়ার দিন নির্দিষ্ট করা হলেও সেই পরিকল্পনা বাতিল হয়েছে।

Picture of the Hawkers.

নতুন বছরের দেড় মাস কেটে গেলেও কোনও হকারই সরকারি শংসাপত্র পাননি। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৫:২৬
Share: Save:

কলকাতার ফুটপাতকে দখলমুক্ত করার প্রচেষ্টা শুরু হয়েও সবই কেন অকালে গতি হারায়, তার কোনও সদুত্তর প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে আছে কি? ইতিপূর্বে বহু বারই তা দেখা গিয়েছে। এ বার অন্তত আশা করা গিয়েছিল, সেই ধারায় পরিবর্তন আসবে— ফুটপাত মেপে এক-তৃতীয়াংশ জায়গা হকারদের জন্য বরাদ্দ করে বাকি অংশ দখলমুক্ত করা হবে। আশার কারণ, গত নভেম্বরের গোড়ার দিকে পুলিশকে সঙ্গে নিয়েই পুরকর্তারা গড়িয়াহাটে হকার সমীক্ষা শুরু করেন। ফিতে ফেলে এক-তৃতীয়াংশ মাপা হয়। চক দিয়ে দাগ টেনে নির্দিষ্টও করে দেওয়া হয় সীমানা। জানানো হয়, গড়িয়াহাটের পর হাতিবাগান এবং নিউ মার্কেটেও এই সমীক্ষা করা হবে। এবং সমীক্ষা-অন্তে হকার শংসাপত্র বা ভেন্ডিং সার্টিফিকেট দেওয়ার কাজ শুরু হবে। মাঝ-ফেব্রুয়ারি অতিক্রান্ত। এখনও পর্যন্ত কোনও হকার সরকারি শংসাপত্র হাতে পাননি। বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে প্রাথমিক ভাবে ১৯ জন হকারের নাম চূড়ান্ত করে শংসাপত্র দেওয়ার দিন নির্দিষ্ট করা হলেও সেই পরিকল্পনা বাতিল হয়েছে। অর্থাৎ, ফের দখলমুক্তির উদ্যোগের আকাশে ঘনঘটা।

পথচারীর হাঁটার অধিকার খর্ব করে ফুটপাত দখল এ শহরের ঐতিহ্য। কোনও সভ্য শহরে এমন ব্যবস্থা চলতে দেওয়া যায় কি? গড়িয়াহাট, হাতিবাগান, নিউ মার্কেট চত্বর তো বটেই, নবগঠিত নিউ টাউনও ক্রমশ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সেখানেও বিভিন্ন জায়গায় কয়লার উনুন জ্বালিয়ে রান্না, ফুটপাত দখল করে বাঁশ ও লোহার কাঠামো গড়ে ওঠার অভিযোগ উঠেছে। ফুটপাতে আদৌ হকার বসবে কেন? ফুটপাত তৈরির মূল উদ্দেশ্য, দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমিয়ে পথচারীদের নিরাপদে হাঁটার সুবন্দোবস্ত করা। কিন্তু ফুটপাতের একাংশে বিকিকিনি চললে হাঁটার জন্য যথেষ্ট পরিসর থাকতে পারে কি? বাধ্য হয়ে পথচারী রাস্তায় নামলে যানজট বৃদ্ধি পায়, দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বাড়ে বহু গুণ। সমস্যা অন্যত্রও। হকারদের অস্থায়ী প্লাস্টিকের ছাউনি এবং দাহ্য বস্তু মজুত রাখার প্রবণতা অগ্নিকাণ্ডের সম্ভাবনাও বৃদ্ধি করে। বছরচারেক আগে গড়িয়াহাটের অগ্নিকাণ্ডের কথা স্মর্তব্য। সুতরাং, ফুটপাতকে জবরদখল হতে দেওয়া যাবে না। অভিজ্ঞতা বলে, এক-তৃতীয়াংশের যুক্তি দীর্ঘমেয়াদে খাটে না। সুতরাং, স্থায়ী-অস্থায়ী দোকানের জন্য অন্য জায়গা চিহ্নিত হোক। ফুটপাত থাকুক পথচারীর জন্য। সম্পূর্ণ ভাবেই।

কিন্তু এই রাজ্যের রাজনীতি কি সেই তত্ত্বে সায় দেবে? কয়েক মাস আগে মেয়র ফিরহাদ হাকিম শহরে অনিয়ন্ত্রিত হকার-রাজ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, স্থানীয় পুলিশের মদত না থাকলে রাস্তার উপর হকার বসতে পারে না। হক কথা। কিন্তু, রোগের কারণ যখন জানা, লক্ষণ স্পষ্ট, তখন সঠিক ওষুধ প্রয়োগে এমন বিলম্ব কেন? আজ পর্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশদের ক’জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করা হয়েছে? কলকাতা পুর আইন, ১৯৮০-র ৩৭১ নম্বর ধারায় বলা হয়েছিল রাস্তা এবং ফুটপাতে বাধা সৃষ্টিকারী স্থায়ী বা অস্থায়ী যে কোনও কাঠামোয় নিষেধাজ্ঞা জারি এবং প্রয়োজনে তা ভেঙে দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা পুর কমিশনারকে দেওয়া হয়েছে। সেই আইনের প্রয়োগ হয়েছে কি? ফুটপাত মুক্ত করে নাগরিক অধিকার রক্ষা করতে হলে অবিলম্বে হকার-রাজের সঙ্গে রাজনীতির যোগটি ছিন্ন করা প্রয়োজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Street hawkers Kolkata KMC certificate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE