Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Social Media

দ্বৈরথ

কিন্তু সাম্প্রতিক কালে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক সমাজমাধ্যম অপব্যবহারেরই বিস্তর উদাহরণ মিলিবে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২১ ০৪:৫১
Share: Save:

কেন্দ্রীয় সরকারের সহিত সমাজমাধ্যম সংস্থাগুলির ঠোকাঠুকি লাগিয়াছে, নূতন অন্তর্বর্তী বিধি মানা লইয়া। ফেব্রুয়ারিতেই প্রস্তুত বিধি মানিয়া লইতে সংস্থাগুলিকে তিন মাস সময় দেওয়া হইয়াছিল। সম্প্রতি সেই সময়সীমা ফুরাইলে দেখা গেল, হোয়াটসঅ্যাপ সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়াছে, টুইটার জড়াইয়াছে বাদানুবাদে। নয়া বিধি অনুযায়ী বৃহৎ সমাজমাধ্যম সংস্থাগুলি তাহাদের প্রকাশিত বার্তার উৎস, এমনকি বিষয়বস্তুও সরকারকে জানাইতে বাধ্য; আপত্তিকর বার্তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মুছিতেও বাধ্য। সরকারি বিধির খুঁটিনাটি লইয়া আলোচনা বা তর্ক হইতেই পারে, হওয়া দরকারও— তবে সর্বাগ্রে মনে রাখা প্রয়োজন, ভারতে ব্যবসা করিতে হইলে দেশের আইন মানিতেই হইবে। বিদেশি সংস্থাগুলি যে নিজেদের খেয়ালখুশি অনুসারে চলিতে পারে না, ভারতের বিভিন্ন আদালতও পূর্বে তাহা সংস্থাগুলিকে বলিয়াছে। প্রথাগত মিডিয়া সংস্থাগুলির জন্য যে নিয়ম প্রযোজ্য, তাহাদের জন্য দায়বদ্ধতার যে মাপকাঠি, সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলির জন্যও তাহাই প্রযোজ্য হওয়া বিধেয়। সমাজমাধ্যম সংস্থাগুলি এত কাল কার্যত বিনা নজরদারিতে ব্যবসা করিতেছিল। আইনে বাঁধা পড়িতে এত আপত্তি সেই কারণেই।

তবে, নিয়ম যাঁহারা বাঁধিতেছেন, তাঁহাদের লইয়া প্রশ্ন অনেক। সমাজমাধ্যম মারফত যাহাতে সমাজের শান্তি ও স্থিতি বিঘ্নিত না হয়, দৃশ্যত তাহা নিশ্চিত করিতেই এই আইন। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক সমাজমাধ্যম অপব্যবহারেরই বিস্তর উদাহরণ মিলিবে। ভারতে ফেসবুকের নীতি-বিষয়ক প্রধান আঁখি দাসের পদত্যাগের কথা মনে পড়িতে পারে, এক বিজেপি নেতার মুসলমান-বিদ্বেষী মন্তব্য ফেসবুক হইতে মুছিবার বিরুদ্ধে যিনি সংস্থার কর্মীদের এই যুক্তি দিয়াছিলেন বলিয়া অভিযোগ: বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে গেলে ভারতে ফেসবুকের ব্যবসা ধাক্কা খাইবে। বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচনের আগে-পরে বিজেপির আইটি সেল-এর বিরুদ্ধে ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপে ধর্ম-জাতপাত বিষয়ক উস্কানি, বিদ্বেষমূলক বার্তা, ভুল তথ্য, ভুয়া ছবি ও ভিডিয়ো ছড়াইবার দৃষ্টান্ত ভূরি ভূরি। নূতন বিধি মানিবার প্রশ্নে সংস্থাগুলি বলিয়াছে গ্রাহক তথা নাগরিকের বাক্‌স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার অধিকার রক্ষার কথা, এবং দুর্ভাগ্যজনক হইলেও সত্য, বিজেপি ও তাহার সরকারের বিরুদ্ধে নাগরিকের এই দুই অধিকার ভঙ্গ বা তাহাতে হস্তক্ষেপের অভিযোগ বিস্তর। সমাজমাধ্যমে প্রকাশিত বার্তাবিশেষের শিকড় বা নাড়িনক্ষত্র চাহিলেই সরকারের হাতে তুলিয়া দিতে হইবে, এই নিদানে নাগরিকের ব্যক্তিগত ও সমাজমাধ্যমগত গোপনীয়তায় উঁকির প্রবণতাও ধরা পড়ে না কি?

সমাজমাধ্যম সংস্থা বা সরকার, কেহই নিষ্কলুষ নহে। শুধু ভারতে নহে, গোটা দুনিয়াতেই সমাজমাধ্যম সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে নৈতিকতার গণ্ডি অতিক্রম করিবার অভিযোগ। আবার সরকারকেও বুঝিতে হইবে, নূতন নিয়ম যেন কেবল ক্ষমতা দেখাইবার, ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থসিদ্ধির অস্ত্র না হইয়া দাঁড়ায়। নয়া বিধি প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলিয়াছেন, ইহাতে সমাজমাধ্যমের সহজ স্বাভাবিকতা টাল খাইবে না, বিধির ব্যবহার হইবে শুধু গুরুতর অপরাধের তদন্ত ও শাস্তিদানের ক্ষেত্রে। নাগরিকের অধিকার যেন সর্বাবস্থায় রক্ষিত হয়, দেখিতে হইবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Social Media Central Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE