Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Pregnancy

অ-সুবিধার মাতৃত্ব

এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসি। নির্মলা সীতারামনকে লেখা চিঠিতে তারা নির্দেশিকাটিকে খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানিয়েছে।

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২২ ০৫:৪০
Share: Save:

বারো সপ্তাহ বা তার অধিক সময় পার হয়ে যাওয়ার পর চাকরিপ্রার্থী গর্ভবতী মহিলা কর্মক্ষেত্রে যোগদানের পক্ষে শারীরিক দিক থেকে সাময়িক ভাবে সক্ষম নন— একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নিয়োগ সংক্রান্ত নির্দেশিকায় এমন ইঙ্গিতই পাওয়া গিয়েছে। ব্যাঙ্কটি চাকরিতে যোগদানের জন্য শারীরিক সক্ষমতার যে শর্তাবলি স্থির করেছে, তাতে বারো সপ্তাহের অধিক গর্ভাবস্থাকে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে এক সাময়িক অযোগ্যতা বলে ধরা হয়েছে। এই ভয়ঙ্কর বৈষম্যের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসি। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে লেখা চিঠিতে এই সংগঠন ব্যাঙ্কের নির্দেশিকাটিকে খতিয়ে দেখতে এবং সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ করার অনুরোধ জানিয়েছে।

গর্ভাবস্থাকে অসুখ মনে করা এবং সেই অজুহাতে মেয়েদের নিয়োগ না করার মানসিকতাটি অবশ্য নতুন নয়। কিছু মাস পূর্বে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়াও অনেকটা একই ধরনের নির্দেশিকা জারি করেছিল। বিষয়টি সংসদে উঠলে এবং দিল্লির মহিলা কমিশন নোটিস পাঠালে ব্যাঙ্কের তরফ থেকে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। কিন্তু গর্ভবতী মেয়েদের শারীরিক ভাবে অক্ষম প্রতিপন্ন করা এবং সেই হেতু কর্মক্ষেত্রে তাঁদের নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়ার ধারাটির বিশেষ পরিবর্তন ঘটেনি। কর্পোরেট ভারতের একটি অংশ যখন সচেতন ভাবে মাতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থা, কর্মরতা মা-র কাজের সময়ের ক্ষেত্রে নমনীয়তা প্রদর্শন বা ক্রেশ-সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছে, তখন অন্য বড় অংশটি এখনও সেই সুবিধাগুলি প্রদানে অনিচ্ছুক। কিছু বছর পূর্বে মুম্বইয়ের এক সংস্থার বিরুদ্ধে মাতৃত্বকালীন ছুটি দিতে অস্বীকার করে কর্মীকে বরখাস্ত করার অভিযোগ উঠেছিল, যদিও ‘মেটারনিটি বেনিফিট অ্যাক্ট’ অনুযায়ী, এই ধরনের কাজ বেআইনি। অনেক ক্ষেত্রেই ধরে নেওয়া হয়, মা হওয়ার পর সেই কর্মীর পক্ষে সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বহন করার মতো মানসিক ও শারীরিক অবস্থা থাকে না। এবং অনেক সংস্থাই মহিলাদের চাকরিতে প্রবেশের পূর্বে তিনি বিবাহিত কি না, এবং পরিবার পরিকল্পনা সংক্রান্ত নানাবিধ প্রশ্ন করে থাকে, যা পুরুষ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে কখনও দেখা যায় না।

অথচ, ‘মেটারনিটি বেনিফিট (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট, ২০১৭’ অনুযায়ী, সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটি ১২ সপ্তাহ থেকে বৃদ্ধি করে ২৬ সপ্তাহ করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে, এই আইনই মেয়েদের নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে উঠেছে। সর্বোপরি, প্রাপ্য ছুটি না দেওয়া, পদোন্নতি আটকে দেওয়া-সহ নানাবিধ হেনস্থার কারণে সদ্যজননীরা প্রায়শই চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। অসংগঠিত ক্ষেত্রের অবস্থাটি আরও ভয়াবহ। ঠিকাকর্মী যাঁরা, এমনকি সরকারি ক্ষেত্রেও, তাঁরা মাতৃত্বকালীন সুবিধা থেকে অনেকাংশে বঞ্চিত হন। গ্রামীণ ভারতে মা-শিশুর দায়িত্বপ্রাপ্ত আশাকর্মীদের অবস্থাও অনুরূপ। শিশুকে মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর পক্ষে তাঁরা প্রচার করেন, অথচ অতি স্বল্প সময়ের মাতৃত্বকালীন ছুটিতে তাঁরা নিজের সন্তানেরই দেখাশোনা করতে পারেন না। এই পরিস্থিতির অবিলম্বে পরিবর্তন দরকার। সরকারি, বেসরকারি— সমস্ত ক্ষেত্রেই যাতে মেয়েরা মাতৃত্বকালীন সুবিধাগুলি পান, তার জন্য নজরদারি প্রয়োজন। মাতৃত্ব গৌরবের, তা অযোগ্যতার প্রমাণ নয়। সেই গৌরব রক্ষা করার দায়িত্বটিও সরকারকেই নিতে হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

Pregnancy Job
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE