—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
দেশে শিক্ষার বেহাল পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে গেলে সাধারণত প্রথমেই আসে দুর্নীতির কথা। স্বাভাবিক, কেননা রন্ধ্রে-রন্ধ্রে দুর্নীতি ভারতের শিক্ষাজগৎকে এক বিরাট বিপদের মধ্যে এনে ফেলেছে। কিন্তু এও ঠিক, যে দেশের কিছু কাল আগেও উচ্চশিক্ষার জন্য রীতিমতো আন্তর্জাতিক সুনাম ছিল, আজ তার উচ্চশিক্ষাক্ষেত্রের অত্যন্ত মলিন দশার কারণ কেবল দুর্নীতি নয়— নীতিও বটে! নীতি, এক অন্য অর্থে, প্রশাসনিক অর্থে। জাতীয় শিক্ষা নীতির বিবিধ আশ্চর্য সংশোধনে ও প্রয়োগে উচ্চশিক্ষার অঙ্গনে যে কত রকমের পঙ্কিল আবর্ত তৈরি করা হয়েছে, তা এখনও গুরুত্বসহকারে আলোচিত হচ্ছে না। কিছু তথ্য ও সমীক্ষায় কেবল সেই কৃষ্ণশৈলের চূড়াটুকু দৃশ্যমান। তেমনই কিছু তথ্য বলছে— দেশের অগ্রগণ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে গবেষকদের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের দ্বারা স্বীকৃত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশনাল র্যাঙ্কিং ফ্রেমওয়ার্ক বা এনআইআরএফ-এর তথ্য অনুয়ায়ী— ২০১৬-১৭ সালের তুলনায় ২০২২-২৩ সালে পূর্ণ সময়ের পিএইচ ডি কোর্সের জন্য ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। প্রধানত জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটি, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব হায়দরাবাদ, বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি এবং যাদবপুর ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি স্থানেই পিএইচ ডি গবেষকদের সংখ্যা বেশ ভাল রকম কমেছে।
কেন এই সঙ্কোচন? কেননা, পর পর একাধিক নীতি পরিবর্তনের ফলে পাল্টে গিয়েছে গবেষণা করাতে সক্ষম অধ্যাপকদের সংখ্যা। কত জনকে একই সময়ে গবেষণা করানো যায়, সেই সংখ্যাটি বেঁধে দেওয়া হয়েছে প্রতি স্তরে, অর্থাৎ সহকারী, সহযোগী ও পূর্ণ অধ্যাপকের স্তরে। এও বলে দেওয়া হয়েছে, যে অধ্যাপকের নিজের পিএইচ ডি ডিগ্রি নেই, তিনি কারও গবেষণা উপদেশক হতে পারবেন না। এই নীতিও নেওয়া হয়েছে যে প্রারম্ভিক স্তরে সহকারী অধ্যাপক হতে গেলে পিএইচ ডি না থাকলেও চলবে। ফলে বহু সহকারী অধ্যাপকই এখন আছেন যাঁরা পিএইচ ডি না করেই পড়াতে এসেছেন, ফলত পিএইচ ডি করাতে অক্ষম। সব মিলিয়ে, গবেষক ছাত্রদের সংখ্যাই যাচ্ছে কমে। জেএনইউ-এর কথাই যদি ধরা যায়, ২০১৬-১৭ সালে মোট ছাত্রছাত্রীর ৬২ শতাংশ ছিলেন গবেষক, যেখানে ২০২২-২৩ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৪৩ শতাংশ।
কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, গবেষকের সংখ্যা কমলে সমস্যা কোথায়? উত্তরটি দুই ভাবে দেওয়া সম্ভব। এক, তা কমানোই কি বর্তমান শিক্ষানীতির লক্ষ্য? যদি তা হয়, তবে আলাদা কথা। কিন্তু ঘটনা হল, ইউজিসি-র কোনও নীতি নির্দেশিকায় এ কথা নেই। সে ক্ষেত্রে বিষয়টিকে প্রত্যাশিত পরিবর্তনের বদলে আপতিক বা ঘটনাচক্র হিসাবে দেখতে হবে। অর্থাৎ তা হলে এটি সরকারি উচ্চশিক্ষানীতির ব্যর্থতা। আরও অনেক মনস্ক নীতি প্রবর্তন জরুরি, নয়তো এমন অবাঞ্ছিত ঘটনা আরও ঘটতে পারে। দুই, প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, সারস্বত ভাবনাকে ক্রমশ আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, উৎকর্ষের দিকে চালিত করা। অকারণে সে পথে ব্যাঘাত ঘটলে দেশের সার্বিক শিক্ষামান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ভবিষ্যৎ উৎকর্ষের পথে নিতান্ত অকারণ বাধা তৈরি হয়। শিক্ষাপ্রশাসকরা কি তা-ই চান? তাঁরা কি আদৌ অবগত যে তাঁদের এলোমেলো নীতির ফলে কত রকম সঙ্কট তৈরি হয়ে উঠছে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy