E-Paper

অগ্নিগ্রাস

স্বস্তি পুর-প্রশাসনের প্রাপ্য নয়। তাদের তরফ থেকে নাগরিকদের বহু উত্তর পাওয়া বাকি। কেন শহরে পর পর অগ্নিকাণ্ড ঘটেই চলেছে?

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২৫ ০৮:১৮

এ-কালের জতুগৃহ। খিদিরপুরের যে বাজারটি সম্প্রতি ভস্মীভূত হয়ে গেল, হাজারেরও বেশি দোকান সম্পূর্ণ ছাই হয়ে বহু ব্যবসায়ী কার্যত পথে বসলেন, তাকে অনায়াসে এই অভিধা দেওয়া যায়। গোটা বাজার প্রায় প্লাস্টিকে ঢাকা। সর্বত্র ছড়িয়ে ত্রিপল, প্লাস্টিক, থার্মোকলের মতো দাহ্য পদার্থ। সেই বাজারেই এত কাল বহু ব্যবসায়ী ব্যবসা চালিয়ে এসেছেন, রাতে থেকেছেন, প্লাস্টিকের ছাউনি ঢাকা জায়গাতেই রান্নার আয়োজন করেছেন, প্রচুর গ্যাস সিলিন্ডার মজুত রেখেছেন, প্রবেশপথটি প্রায় রুদ্ধ। অর্থাৎ, এক বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের আদর্শ জমি প্রস্তুতই ছিল। আগুনও তাই রেয়াত করেনি। দ্রুত ছড়িয়েছে এবং কয়েক মুহূর্তে ব্যবসায়ীদের এত বছরের পরিশ্রম, সঞ্চয়কে গিলে খেয়েছে। স্বস্তি এইটুকুই, কোনও প্রাণহানি ঘটেনি।

কিন্তু সেই স্বস্তি পুর-প্রশাসনের প্রাপ্য নয়। তাদের তরফ থেকে নাগরিকদের বহু উত্তর পাওয়া বাকি। কেন শহরে পর পর অগ্নিকাণ্ড ঘটেই চলেছে? প্রত্যেক ক্ষেত্রেই কেন বিপুল অনিয়মের অভিযোগ? শহরের জনসমাগমের ক্ষেত্রগুলিতে অগ্নিবিধি যথাযথ পালন করা হচ্ছে কি না, সেই নজরদারিতে কেন এমন ভয়াবহ ফাঁক? কেন এই অগ্নিকাণ্ডগুলির জন্য দায়িত্বপালনে ব্যর্থতার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট সরকারি আধিকারিকদেরও যথাযোগ্য শাস্তি হবে না? এই অগ্নিকাণ্ডে ব্যবসায়ীদের চূড়ান্ত অ-সচেতনতা নিঃসন্দেহে দায়ী। কিন্তু তাঁদের আইন মানতে বাধ্য করার কাজটিও পুলিশ-প্রশাসনেরই। যেখানে বহু জনের জীবন-জীবিকার প্রশ্ন জড়িত, সেখানে একাংশের সচেতনতার উপর ভরসা রাখা মূর্খামি। তারই খেসারত দিচ্ছে শহরের বাজার, বহুতল, শপিং মল, হোটেল-রেস্তরাঁগুলি। এবং এই চিত্র শুধুমাত্র কলকাতার নয়, হাওড়ার অধিকাংশ বাজারের অবস্থাও ঠিক এমনই ভয়াবহ। বছরের পর বছর সেখানে ফায়ার অডিট হয় না, চার দিকে অবহেলায় পড়ে থাকে দাহ্য বস্তুসমূহ। বিপজ্জনক ভাবে ঝোলে বিদ্যুৎবাহী তার। কোনওটাই প্রশাসনের অজানা নয়, কিন্তু দায় ঠেলাঠেলির কুচক্র থেকে বেরিয়ে কাজ করার সদিচ্ছা থাকে না। গত কয়েক বছরে একাধিক ভোটের প্রচারে খিদিরপুরের বাজারে পা পড়েছে জনপ্রতিনিধিদের। অথচ, সাদা চোখেই যে বিপদ দেখা যায়, তা নজরে আসেনি তাঁদের। এত বড় বাজারের প্রবেশপথের সামনে ছোট দোকানিরা ডালা সাজিয়ে বসে রাস্তাটিকে এমন সঙ্কীর্ণ করে ফেলেছেন, যা দিয়ে দমকলের গাড়ি প্রবেশ করা অসম্ভব— এই ছবি তাঁরা অগ্রাহ্য করেছেন। নয়তো বুঝতে পারতেন, ২০১৮ সালে বাগড়ি মার্কেটের পরিণতির পথেই পা বাড়িয়েছিল এই বাজারটিও।

সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের পর মুখ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের দু’ধরনের ক্ষতিপূরণের কথা শুনিয়েছেন। তার সঙ্গে জানিয়েছেন বর্তমান বাজারটি তৈরি করে দেওয়ার পরিকল্পনাও। প্রতি বার এমনটিই হয়। অগ্নিকাণ্ড ঘটে, ক্ষতিপূরণের অঙ্ক শোনায় প্রশাসনের শীর্ষ মহল। অতঃপর আগুনের ঝাঁঝ স্তিমিত হলে ফের সেগুলি হারিয়ে যায়। প্রশ্ন হল, বার বার অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে ক্ষতিপূরণের অর্থ তুলে দেওয়ার চেয়ে সমস্ত পক্ষকে কঠোর ভাবে নিয়ম পালনে বাধ্য করা, অ-মান্যে শাস্তিদান এবং নিয়মিত নজরদারি চালানোর কাজটি প্রশাসনিক দিক থেকে অধিক লাভজনক নয় কি? অবশ্য সে ক্ষেত্রে দলীয় এবং ব্যক্তিগত তহবিল ভরানোয় কিঞ্চিৎ বাধা আসতে পারে। তাই কি শহরকে জ্বলতে দেখেও নির্বিকার থাকা?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Khidderpore

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy