আদালতগুলির বেহাল পরিকাঠামোগত অবস্থা নিয়ে রাজ্য সরকারের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করতে হল কলকাতা উচ্চ আদালতকে। একটি রাজ্যের সামগ্রিক ভাবমূর্তির পক্ষে এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী-ই বা হতে পারে। অবশেষে প্রশ্ন ও সমালোচনার মুখে পড়ে রাজ্য সরকারের তরফে ঘোষণা, উন্নয়নের স্বার্থে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ হল। কিন্তু বহু বিলম্বিত এই পদক্ষেপে লজ্জা মেটার নয়। হুড়ো না দেওয়া হলে যে অতি প্রয়োজনীয় সংস্কারেও তাড়া বোধ হয় না, এ অতীব দুর্ভাগ্যের কথা। এত কাল ধরে হাই কোর্ট চত্বরে মেডিক্যাল ইউনিটের কাজ আটকে রয়েছে, নিম্ন আদালতের সংস্কার, পরিকাঠামোগত উন্নতি, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য অর্থ নেই। অ-প্রাপ্তির তালিকায় রয়েছে পর্যাপ্ত ইন্টারনেট পরিকাঠামো গড়ে তোলা এবং নিম্ন আদালতগুলির প্রিন্টারের কালি, কাগজ, পেন ইত্যাদি কেনার অর্থের অভাবও, যেগুলি শুনতে সামান্য মনে হলেও আদালতের দৈনন্দিন কাজ চালাতে অত্যাবশ্যক। ২০২৪ সাল থেকেই অর্থ বরাদ্দের আবেদন জানানো হয়েছিল রাজ্যের কাছে। সদুত্তর মেলেনি। অতঃপর এল উচ্চ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ— মুখ্যসচিবকে পরিকাঠামো বিষয়ে সাত দিনের মধ্যে তথ্য খতিয়ে দেখতে হবে এবং পরিকাঠামোগত উন্নয়নে টাকা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও করতে হবে। অতঃপর মুখ্যসচিবের ঘোষণা।
প্রসঙ্গত, বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত উন্নয়নের প্রাথমিক দায়িত্বটি বর্তায় রাজ্য সরকারের উপর। তবে এই ক্ষেত্রে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সরকারগুলির সঙ্গতি বৃদ্ধির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৯৩-৯৪ সাল থেকেই যে ‘সেন্ট্রালি স্পনসর্ড স্কিম’ (সিএসএস) চালু করেছে, তার মাধ্যমে জেলা ও নিম্ন আদালতগুলিকে অর্থ সহায়তা করা হয় তাদের পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে। আদালতের সভাকক্ষ, আবাসিক ক্ষেত্র, আইনজীবীদের সভাকক্ষ, শৌচালয়, এবং আইনজীবী ও মামলাকারীদের সুবিধার্থে ডিজিটাল কম্পিউটার কক্ষ— প্রধানত এই ক্ষেত্রগুলি এই প্রকল্পের মূল দায়িত্ব। কিন্তু এর বাইরে আদালতের দৈনন্দিন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রাজ্যেরই। অথচ, গত বছরের ডিসেম্বরে হাই কোর্টের বিচারপতিদের কক্ষে সিসিটিভি বসানোর জন্য অর্থ বরাদ্দের আবেদন জানানো হলেও এখনও তা পুরোপুরি মেলেনি। এই বছরের গোড়াতেই রাজ্য সরকারের ঠিকঠাক টাকা না দেওয়া, কর্মচারীর অভাব প্রসঙ্গে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি টি এস শিবগণনম। জানা গিয়েছিল, অন্তত ১১টি জেলার আদালতে বার অ্যাসোসিয়েশনের জন্য ঘর নেই, বিচারকদের বসার জায়গাটুকুও নেই।
দুর্ভাগ্য, ডিজিটাল ভারতে যেখানে নিম্ন আদালতে ভার্চুয়াল শুনানির উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলার কথা শোনা যায়, সেখানে পশ্চিমবঙ্গের আদালতগুলিতে প্রিন্টারের কালি, কাগজ, পেনের অর্থ বরাদ্দের জন্য রাজ্যের কাছে বার বার দরবার করতে হল। এ রাজ্যে সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে সময়মতো কম্পোজ়িট গ্রান্টের টাকা আসে না। এলেও প্রাপ্যের তুলনায় যথেষ্ট কম। সরকারি চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ন্যূনতম পরিকাঠামোটুকু থাকে না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিচার বিভাগ— অবহেলিত রেখে কোন জনমোহিনী নীতির সাধনা চলছে?
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)