Advertisement
E-Paper

বদল নহে, বদলা?

সিবিআই ও অন্যান্য সংস্থাকে যথেচ্ছ ভাবে ব্যবহার করিতে এই শাসকদের বিন্দুমাত্র দ্বিধা তো নাইই, কিছুমাত্র ক্লান্তিও নাই।

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২১ ০৫:০৩

সোমবার প্রভাতবেলায় কলিকাতায় কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার যে বিপুল অভিযান ঘটিয়া গেল তাহার সম্পর্কে প্রশ্ন তুলিলেই সিবিআই, তাহার প্রভুগণ এবং তাঁহাদের ভক্তমণ্ডলী ঊর্ধ্বনেত্র নির্লিপ্তি সহকারে সমস্বরে বলিবেন: আইন আইনের পথে চলিতেছে। আইনের পথ এমন রহস্যময় কেন, সেই প্রশ্নের উত্তর তাঁহাদের জিজ্ঞাসা করিয়া লাভ নাই। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় মামলার দ্রুত ও সুচারু নিষ্পত্তি অবশ্যই জরুরি, কিন্তু বছরের পর বছর সেই কর্তব্য সম্পাদনের প্রয়োজনীয় তৎপরতা নাগরিকরা দেখেন নাই। অথচ, রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় শাসক দলের পরাজয় ও রাজ্যের শাসক দলের অভূতপূর্ব বিজয়ের পরে, নূতন নির্বাচিত সরকার কাজ শুরু করিবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে এবং এই ভয়াবহ অতিমারির পরিস্থিতিতে রাজ্যে যখন সংক্রমণ প্রতিরোধের প্রাণপণ চেষ্টা চলিতেছে, ঠিক তখনই কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে লইয়া কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের ঝাঁপাইয়া পড়িতে হইল এবং ‘ওজনদার’ মন্ত্রী-নেতাদের গ্রেফতারির ধুন্ধুমার লাগাইতে হইল— দৃশ্যত একই অপরাধে অভিযুক্ত এমন একাধিক ওজনদার প্রাক্তন মন্ত্রী ও নেতা অনাঘ্রাত কুসুমবৎ থাকিয়া গেলেন, যাঁহারা ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় শাসক দলের শিবিরে অভিবাসী হইয়াছেন! আইনের পথ রহস্যময়, না কি রহস্য বলিয়া আর কিছুই নাই? কার্য এবং কারণ সূত্রগুলি জলবত্তরলম্?

আদালত আপন বিচার করিবে। মহামান্য বিচারপতিদের সিদ্ধান্ত অবশ্যই শিরোধার্য— এমনকি, রাত গড়াইবার পরও অনলাইনে নিম্ন আদালতের রায় হাই কোর্ট নাকচ করিয়া দিলেও। কিন্তু দিল্লিতে বসিয়া যাঁহারা রাষ্ট্রযন্ত্রটি চালনা করিতেছেন, তাঁহারা কি ভারতীয় গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকিতে বদ্ধপরিকর? রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ইতিহাস এই দেশে নূতন নহে। বিরোধী দল শাসিত রাজ্যে অস্থিরতা সৃষ্টিতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিপুল ক্ষমতার অপপ্রয়োগ, বিশেষত সেই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বশংবদ রাজ্যপালকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করিবার তৎপরতা— সকলই নাগরিকদের পরিচিত। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর জমানায় সেই অভিযান যে মাত্রায় পৌঁছাইয়াছে তাহা আক্ষরিক অর্থে অভূতপূর্ব। বিরোধীদের উপর নিপীড়ন চালাইতে এবং প্রতিবাদীদের ভয় দেখাইতে বিভিন্ন দমনমূলক আইনের পাশাপাশি সিবিআই ও অন্যান্য সংস্থাকে যথেচ্ছ ভাবে ব্যবহার করিতে এই শাসকদের বিন্দুমাত্র দ্বিধা তো নাইই, কিছুমাত্র ক্লান্তিও নাই।

পশ্চিমবঙ্গের ঘটনাক্রমে মনে হইতে পারে, প্রতিশোধস্পৃহার তাড়নায় দিল্লীশ্বররা আপন দলের প্রকৃত রাজনৈতিক স্বার্থকেও জলাঞ্জলি দিতে পারেন। ভোটে হারিবার জ্বালায় রাজ্যে ক্রমাগত বিধ্বংসী রাজনীতি করিবার তৎপরতা, তাহার ভরকেন্দ্র হিসাবে রাজভবনের ভয়াবহ অপব্যবহার, নিজের পদমর্যাদাকে সম্পূর্ণ বিসর্জন দিয়া রাজ্যপালের লজ্জাকর দৌড়াদৌড়ি, সর্বোপরি সিবিআই অভিযানের ফলে প্রবল অস্থিরতা উৎপাদন এবং এই সমস্ত কারণেই কোভিড মোকাবিলার কাজে বড় রকমের গোলযোগ সৃষ্টি— এই অভিজ্ঞতা বহু নাগরিকের মনে কেবল ক্রোধ এবং ক্ষোভ নহে, বিবমিষার উদ্রেক করিতেছে। তাহা নিশ্চয়ই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করিবে না। লক্ষণীয়, রাজ্যের নানা মাপের বিজেপি নেতা সোমবারের কীর্তিকলাপে ‘দলের কোনও ভূমিকা নাই’ বলিয়া পাশ কাটাইতে ব্যস্ত। তাঁহাদের মুখের কথায় এবং কাহারও কাহারও মেঘাচ্ছন্ন মুখমণ্ডলে কি গভীর দুশ্চিন্তার ছাপ পড়িতেছে? তাঁহারা অবশ্য নিমিত্তমাত্র। হস্তিনাপুরের রাজাধিরাজদের বুঝিতে হইবে, সাধের দলটিকে যদি পশ্চিমবঙ্গে দায়িত্বশীল বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করিতে হয়, তবে অবিলম্বে প্রতিহিংসার পথ ছাড়িতে হইবে। তাহা কেবল গণতন্ত্রের দাবি নহে, সভ্য হইবার প্রাথমিক শর্ত।

BJP TMC COVID-19
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy