E-Paper

বিতর্কিত

নীতীশ কুমারের পদারোহণের জন্য পথ প্রস্তুত হচ্ছে, না কি বিচারপতি যশবন্ত বর্মার অপসারণের আবেদনের অবকাশ করে দেওয়ার জন্য প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতির উপর শাস্তি বর্ষিত হচ্ছে: বহু বক্তব্য বিকশিত এই মুহূর্তে।

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৫ ০৫:৩০

রাজনীতিতে জল্পনা বস্তুটি বিপজ্জনক, অস্বাস্থ্যকরও বটে। বাস্তব থেকে অনেক দূরে তার পথ বেঁকে যেতে পারে, এবং জনমানসকে ভুল ভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এবং যে রাজনীতির বৈশিষ্ট্যই জল্পনাযোগ্য পরিস্থিতি তৈরি করা, তা আরও বিপজ্জনক। বুঝতে অসুবিধা হয় না যে তার নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা বিষয়ে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজনও সে বোধ করে না। ভারতের কেন্দ্রীয় শাসক দলের রাজনীতি এখন এই পর্যায়ে পৌঁছেছে। রাতারাতি দেশের উপরাষ্ট্রপতি নিজের পদ থেকে অবরোহণ করলেন— কিংবা তাঁর অপসারণ ঘটল। এতই আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত এই ঘটনা, এবং ঘটনার হেতু হিসাবে যা জানানো হয়েছে তা এতই অবিশ্বাসযোগ্য যে এক বিরাট জল্পনাযোগ্য পরিস্থিতি তৈরি হল। চুয়াত্তর বছর বর্ষীয় শ্রীজগদীপ ধনখড় তাঁর সমাপনী বার্তায় জানিয়েছেন যে স্বাস্থ্যের অবনতি-হেতু তিনি সরে গেলেন। অথচ গত কয়েক মাসে তাঁর কার্যপদ্ধতির দিকে তাকালেই বোঝা যায় এই অবনতির দৃশ্যমানতা ছিল না, কোনও সুদূর ইঙ্গিতও ছিল না। কংগ্রেসের দলীয় মত, এই ঘটনার পিছনে এমন কিছু আছে যা এখনও গোচর নয়। কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ এই ঘটনাকে ভারতের ইতিহাসে অভূতপূর্ব বলে অভিহিত করেছেন। অন্য বিরোধী নেতারাও সকলে বিস্ময় প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে ‘সম্ভাব্য’ কারণ দর্শাতে শুরু করেছেন, প্রকৃত তথ্যের বদলে আপাতত জল্পিত তত্ত্বে ভরে গিয়েছে বিরোধী পরিসর। নীতীশ কুমারের পদারোহণের জন্য পথ প্রস্তুত হচ্ছে, না কি বিচারপতি যশবন্ত বর্মার অপসারণের আবেদনের অবকাশ করে দেওয়ার জন্য প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতির উপর শাস্তি বর্ষিত হচ্ছে: বহু বক্তব্য বিকশিত এই মুহূর্তে।

বাস্তবিক, ক্ষমতাসীন শাসকের হাতে এমত অপসারণের ক্ষমতা আছে, তারা সেই ক্ষমতার ব্যবহার করতেই পারে। কিন্তু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দস্তুর, ক্ষমতা থাকলেই তার যথেচ্ছ ব্যবহার না করা। ফলে পূর্ব দৃষ্টান্ত বা ‘হোয়াটঅ্যাবাউটারি’র পরিসর থাক না থাক, এটুকু বলাই যায় যে, স্বাস্থ্যের অজুহাত দেখিয়ে রাতারাতি তাঁর অপসারণের যে দৃষ্টান্ত তৈরি হল, তা গণতন্ত্রের স্বাস্থ্যের সহায়ক নয়। উপরাষ্ট্রপতির পদ একটি সাংবিধানিক উচ্চাসন ঠিকই, তবু জননির্বাচিত শাসক দল তাঁকে মনোনীত করার ফলে এই পদের এবং এই পদাধিকারীর সমগ্র তন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই যায়, তিনি কেবল শাসক দলের অনুচর বা অনুসারী হয়ে থাকতে পারেন না। সুষ্ঠুতা ও স্বচ্ছতার অভাবে এই ঘটনা ভারতীয় গণতন্ত্রের অসম্মানের সূচক হয়ে রইল।

শ্রীযুক্ত জগদীপ ধনখড়ও হয়ে রইলেন এক ঐতিহাসিক মাপের বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব, যাঁর কর্মকাল থেকে প্রস্থানকাল, প্রায় সবটুকু জুড়েই ভারতীয় গণতন্ত্রের অসম্মান ব্যাপৃত। তিনিই রাজ্যসভার প্রথম চেয়ার, যাঁর বিরুদ্ধে বিরোধী সাংসদরা অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন। উচ্চ মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্রীয় আসনে আসীন হয়েও তিনি স্পষ্টত ও ক্রমাগত পক্ষপাতিত্বের রাজনীতি করে গিয়েছেন। একের পর এক ক্ষেত্রে সঙ্কীর্ণ দলীয় স্বার্থ দ্বারা চালিত হয়ে সংসদের কার্যাবলি পরিচালনা করেছেন। বিচার বিভাগের সম্পর্কে তাঁর অসম্মানসূচক মন্তব্যগুলিও ভোলা যাবে না, সরাসরি সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধেও তিনি ধারাবাহিক বিরূপতা ও বিরোধিতা দেখিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালে অগণতন্ত্র ও দলীয় কর্তৃত্ববাদের উপর সওয়ার হয়ে নতুন ভারত যাত্রা শুরু করেছে, এবং ধনখড় এই নতুন ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুখ। ভারতীয় রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক রীতিপদ্ধতি তিনি একা হাতে বহুল পরিমাণ বিনষ্ট করেছেন। তাঁর যে উত্তরসূরিই মনোনীত হোন না কেন, উপরাষ্ট্রপতির যে আসনটি সেই নতুন ব্যক্তি অলঙ্কৃত করতে চলেছেন, তা ইতিমধ্যেই তার মহিমা হারিয়েছে, নিরপেক্ষতা বিনষ্ট করেছে। এই ক্ষতি অপূরণীয়। এবং এই ক্ষতির ভবিষ্যৎ ফলাফল হয়তো এখনও অভাবনীয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Vice President Narendra Modi

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy