Advertisement
E-Paper

উদয়ের পথে

দলিতদের টানিয়া আনিবার প্রয়াস যদি করিতেই হয়, তবে অমিত শাহের রাজনৈতিক প্রকল্প অপেক্ষা মোহন ভাগবতদের ধর্ম-সামাজিক প্রকল্প অনেক বেশি কার্যকর হইবার কথা। বিজেপি তাহা ভালই জানে।

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৫৬

রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বরাবর বলিয়া থাকে, তাহাদের সহিত বিজেপির দূরত্ব অনেকখানি, কেননা বিজেপি রাজনীতি করে, তাহারা করে না। আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতকে গত ডিসেম্বর মাসেই স্পষ্টোচ্চারণে বলিতে শোনা গিয়াছিল, আরএসএস-এর সহিত রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নাই, তাঁহারা কেবল ‘দেশ গঠন’ করেন। একই কথা গত সপ্তাহান্তে মেরঠেও বলিলেন তিনি, পঁচিশতম স্বয়ংসেবক সমাগম তথা ‘রাষ্ট্রোদয় সভা’য়। সমাবেশটিকে এক অর্থে ঐতিহাসিক বলা চলে— তিন লক্ষ মানুষ নাম রেজিস্ট্রেশন করাইয়াছিলেন একটি অনুষ্ঠানের জন্য। অনুষ্ঠানের নামটিও লক্ষণীয়: রাষ্ট্রোদয়। ভিত পোক্ত হইলে তবেই তো রাষ্ট্রের ‘উদয়’। রাজনীতিই একমাত্র সাধনা নহে, ভিত তৈরিই প্রধান সাধনা। ভাগবতের বক্তব্যটি প্রণিধানযোগ্য। আবারও বুঝিয়া লওয়া সম্ভব, হিটলার-তত্ত্বের সহিত সংঘ-তত্ত্বের সাদৃশ্য কত দূর। অ্যাডলফ হিটলার আত্মজীবনী মেইন কাম্ফ-এ বহু বার সাবধান করিয়াছিলেন: শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্র ও রাজনীতি কাহারও অভীষ্ট হইতে পারে না, প্রকৃত অভীষ্ট হইল জাতি (জার্মান ভাষায় ‘ভোক’) গঠন। অর্থাৎ রাজনীতি নেহাত একটি ‘পথ’, ‘গন্তব্য’ হইল দেশ বা জাতির নির্মাণ। আরএসএস-এর মাহাত্ম্য এখানেই। বিজেপি যদি উপরিতলের ‘পথ’টির দেখভাল করিয়া থাকে, সংঘের কাজ তবে মৌলিকতর, ভিতরের ‘ভিত’টির নির্মাণ। কোন কাজটি মুখ্য, কোন কাজটি গৌণ, বুঝিতে ভুল হইবার কথা নয়। সেই অবস্থান হইতেই ভাগবত এ বার রাষ্ট্রোদয় সভায় ডাক দিলেন— সংঘে যোগ দাও, সংঘই সব।

এই ডাক ধ্বনিত হইল দলিত সম্প্রদায়ের উদ্দেশে। মোহন ভাগবতদের হিসাবে ভুল নাই। হিন্দুত্বের ‘ভিত’-এর মধ্যে যদি দলিত পরিসরটি কোনও ক্রমে গাঁথিয়া দেওয়া যায়, তবে সে ভিত এমন শক্ত হইবে যে তাহা ভাঙিবার সাধ্য কাহারও হইবে না। সংখ্যায় হিন্দুরা অনেক বাড়িবে, ইহাই একমাত্র কথা নহে। হিন্দুত্বের সংগঠনের মধ্যে দুর্বলতার যে অজস্র খাঁজখোঁজ, সেগুলি ভরাট হইবে, ইহা আরও বড় কথা। এই খাঁজখোঁজগুলি চিরকালই সংগঠনের নৈতিক দিকটিকে নড়বড়ে করিয়া দেয়। নৈতিক দুর্বলতাকে সামলাইবার জন্যই দলিতদের প্রতি আলিঙ্গনের এমন উদাত্ত আহ্বান, যাহাতে দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার বাহির হইতে সহজে দেখা না যায়! অনেকগুলি দশক ধরিয়া জাতগত ভেদাভেদ হিন্দুত্ববাদের একটি বড় সংকট হইয়া আছে। রাজনীতির নামে এই দলিত শ্রেণিকে যখনই কাছে টানিবার চেষ্টা হইয়াছে, সেই চেষ্টা সফল হয় নাই। কেবল যখন সামাজিক প্রয়াসের মাধ্যমে, শুদ্ধি বা সংগঠন প্রকল্পের মাধ্যমে চেষ্টা হইয়াছে, কখনও কখনও সাফল্যের মুখ দেখা গিয়াছে।

অর্থাৎ দলিতদের টানিয়া আনিবার প্রয়াস যদি করিতেই হয়, তবে অমিত শাহের রাজনৈতিক প্রকল্প অপেক্ষা মোহন ভাগবতদের ধর্ম-সামাজিক প্রকল্প অনেক বেশি কার্যকর হইবার কথা। বিজেপি তাহা ভালই জানে। সংঘ তো জানেই। এই কারণে ‘প্রকৃত মানবিকতা হইল দুর্বলকে রক্ষা করা’, কিংবা ‘কট্টর হিন্দুত্ব মানে উদারতা’, কিংবা ‘হিন্দু ধর্মের মূল কথা হইল অহিংসা’ — এই সকল বচন অমিত শাহদের শ্রীমুখ হইতে সহসা নিঃসৃত হয় না। এগুলি বলিবার জন্য রহিয়াছেন মোহন ভাগবতরা। তাঁহাদেরই উপর ভার, হিন্দু ধর্মকে ভিতর হইতে পুনর্ব্যাখ্যা করিয়া কোনও মতে দলিতদের কাছে পৌঁছাইয়া দেওয়া, যাহাতে তাহারা গুজরাতের উনায় বা মহারাষ্ট্রের পুণেতে বা উত্তরপ্রদেশের পশ্চিম ভাগে বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত বিদ্রোহে বারবার জাগিয়া না ওঠে, যাহাতে তাহারা বিজেপির রাজনৈতিক কর্মযজ্ঞে ব্যাঘাত না ঘটায়, রাষ্ট্র তথা হিন্দু রাষ্ট্রের ‘উদয়’-এ বাধাস্বরূপ হইয়া না দাঁড়ায়। হিসাব পরিষ্কার। দায়িত্ব ভাগাভাগিটিও স্পষ্ট।

Mohan Bhagwat RSS Hinduism humanity
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy