Advertisement
E-Paper

ভোট, শুধু ভোট

গণতন্ত্রের প্রতি, প্রকৃত রাজনীতির প্রতি, স্বাভাবিক ন্যায়ের প্রতি কী বিপুল অবজ্ঞা পোষণ করিলে এবং শুধুমাত্র সঙ্কীর্ণ নির্বাচনী রাজনীতিকে কতখানি গুরুত্ব দিলে কোনও প্রধানমন্ত্রী উচ্চবর্ণের জন্য সংরক্ষণের ‘দাবি’ মঞ্জুর করিতে পারেন, তাহা ভাবিলে স্তব্ধ হওয়া ভিন্ন উপায় নাই।

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৫০
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

গণতন্ত্রের প্রতি, প্রকৃত রাজনীতির প্রতি, স্বাভাবিক ন্যায়ের প্রতি কী বিপুল অবজ্ঞা পোষণ করিলে এবং শুধুমাত্র সঙ্কীর্ণ নির্বাচনী রাজনীতিকে কতখানি গুরুত্ব দিলে কোনও প্রধানমন্ত্রী উচ্চবর্ণের জন্য সংরক্ষণের ‘দাবি’ মঞ্জুর করিতে পারেন, তাহা ভাবিলে স্তব্ধ হওয়া ভিন্ন উপায় নাই। কেন্দ্রীয় সরকার ‘সাধারণ বর্গ’ অর্থাৎ কার্যত উচ্চবর্ণের (কারণ তফসিলি জাতি ও জনজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির জন্য সংরক্ষণ ইতিমধ্যেই বহাল) ‘অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল’ জনগোষ্ঠীর জন্য দশ শতাংশ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত করিল। এবং, বুঝাইয়া দিল, ভারতীয় সংবিধানের মূলগত বিশ্বাসগুলির কোনও গুরুত্ব তাহাদের নিকট নাই। তাহাদের নির্বাচন আছে। এই বাড়তি দশ শতাংশ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত শীর্ষ আদালতের ধোপে টিকিবে কি না, অন্তত দুইটি কারণে সেই প্রশ্ন উঠিতেছে। প্রথমত, সংরক্ষণের জন্য আদালত যে ৫০ শতাংশের ঊর্ধ্বসীমা বাঁধিয়া দিয়াছে, বর্তমান সিদ্ধান্ত সেই সীমা অতিক্রম করিবে। দ্বিতীয়ত, আদালতের ঘোষিত অবস্থান: ভারতীয় সংবিধানে সংরক্ষণ শুধু্ ঐতিহাসিক ভাবে বঞ্চিত বর্গের জন্য। ‘উচ্চবর্ণ’-এর অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল শ্রেণির পিছাইয়া থাকিবার কারণটি ঐতিহাসিক নহে। ভারতীয় সংবিধান এই সংরক্ষণের দাবি মানিতে পারে কি?

আইনের ঊর্ধ্বেও অবশ্য আপত্তি আছে— নৈতিকতার আপত্তি। উচ্চবর্ণের জন্য সংরক্ষণ অনুচিত তো বটেই, ঐতিহাসিক ভাবে বঞ্চিতদের জন্যও চাকুরির ক্ষেত্রে সংরক্ষণ না থাকাই বিধেয়। রাষ্ট্র তাঁহাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করুক, সেই ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিক। যুগের পর যুগ তাঁহারা যে বঞ্চনার শিকার হইয়াছেন, যে ভাবে প্রান্তিক থাকিতে বাধ্য হইয়াছেন, এই অগ্রাধিকার তাহার প্রায়শ্চিত্ত ও ক্ষতিপূরণ। কিন্তু, চাকুরির ক্ষেত্রে দক্ষতা তথা মেধাই বিচার্য। আর, উচ্চবর্ণের জন্য কোনও বাড়তি সুবিধা বরাদ্দ করা দ্বিগুণ অন্যায়, কারণ ঐতিহাসিক ভাবে সব সুবিধাই এই শ্রেণির কুক্ষিগত ছিল, এখনও বহুলাংশে আছে। সরকারি স্কুলে নিখরচায় পড়া যায়, সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা পাওয়া যায়। অর্থাৎ, সুস্থ শরীরে শিক্ষিত হইয়া চাকুরির চেষ্টা করিবার উপায় তাঁহাদের জন্য বিলক্ষণ আছে। উচ্চবর্ণ হইবার কারণেই আর কোনও সুবিধায় তাঁহাদের অধিকার থাকিতে পারে না। বস্তুত, ভারতীয় রাজনীতিতে উচ্চবর্ণের সংরক্ষণের দাবি পেশ করিবার পরিসর তৈরি হইয়াছে, তাহাই অতি লজ্জার।

কেন্দ্রীয় সরকারের হিসাবে ঠিক কত শতাংশ ভারতীয় ‘অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল?’ প্রায় গোটা দেশই। গত বাজেটে অর্থমন্ত্রী জানাইয়াছিলেন, পঞ্চাশ লক্ষেরও কম আয়করদাতার বার্ষিক আয় পাঁচ লক্ষ টাকা বা ততোধিক। কাজেই, পারিবারিক আয় বার্ষিক আট লক্ষ টাকার বেশি, এমন পরিবারের সংখ্যা আরও কম। কৃষি-শুমারি অনুযায়ী, ভারতে প্রায় সত্তর শতাংশ কৃষকই প্রান্তিক, অর্থাৎ জমির মালিকানা আড়াই একরের কম। পাঁচ একর জমি আরও কম লোকের আছে। হাজার বর্গফুটের অধিক আয়তনের বসতবাড়িই বা কয় জনের? যে দেশে এখনও গ্রামাঞ্চলে দারিদ্রসীমা দৈনিক মাথাপিছু ৩২ টাকা, ‘এনরেগা’য় মজুরি অনূর্ধ্ব ২০০ টাকা, চাষের খরচ তুলিতে না পারিয়া কৃষকরা আত্মঘাতী হন, সেই দেশে বৎসরে আট লক্ষ টাকা আয়ের পরিবারকে ‘অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল’ ঘোষণায় রাজনীতি অশ্লীল রকমের প্রকট। রাজনীতির তাড়নায় প্রধানমন্ত্রী ভুলিয়াছেন, এই সংরক্ষণের ঘোষণাটি প্রকৃত প্রস্তাবে নিজের ব্যর্থতার চরমতম স্বীকারোক্তি। তিনি মানিয়া লইলেন, গত সাড়ে চার বৎসরে তিনি দেশের সিংহভাগ মানুষের জন্য কিছুই করিয়া উঠিতে পারেন নাই। তবে, রাজনীতির খাতায় ইহাই একমাত্র ভুল নহে। তথাকথিত উচ্চবর্ণের জন্য সংরক্ষণের সিদ্ধান্তে পিছড়েবর্গের প্রতিক্রিয়ার কথাটি তিনি সম্ভবত হিসাব করেন নাই।

Politics Vote Election Lok Sabha Election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy