Advertisement
E-Paper

কেন গেলেন সঙ্ঘে? এবার প্রশ্নটা করতেই হচ্ছে

প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণ জানানোর স্বাধীনতা সঙ্ঘের রয়েছে এবং প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিরও তা গ্রহণ করার স্বাধীনতা রয়েছে— এমন মতামতও শোনা যেতে শুরু করে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৮ ০০:১৯
কেশব বলিরাম হেডগেওয়ারের বাড়িতে প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং মোহন ভাগবত।

কেশব বলিরাম হেডগেওয়ারের বাড়িতে প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং মোহন ভাগবত।

কী কারণে নাগপুর গেলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়? কেন যোগ দিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সভায়? সভা হয়ে যাওয়ার পরেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এই দুটিই।

নব্য স্বয়ংসেবকদের প্রশিক্ষণ সমাপ্তি অনুষ্ঠানে সঙ্ঘ আমন্ত্রণ জানিয়েছে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে— এইটুকু খবর যে মুহূর্তে প্রকাশ্যে এসেছিল, সেই মুহূর্ত থেকেই রাজনীতির জল ঘোলা হতে শুরু করেছিল। প্রণববাবু আমন্ত্রণ গ্রহন করার পরে হইচই আরও বেড়ে যায়। আজীবন যে সংগঠনের ক্রিয়াকলাপের তুমুল বিরোধিতা করে এসেছেন তিনি, সেই সংগঠনের ডাকে কেন সাড়া দিলেন? প্রশ্ন উঠেছিল। অনুষ্ঠানের তারিখ যত কাছে এসেছে, বিতর্ক ততই বাড়তে থেকেছে। এ বিতর্কে সব কণ্ঠস্বর প্রণবের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই ছিল, এমন নয়। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণ জানানোর স্বাধীনতা সঙ্ঘের রয়েছে এবং প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিরও তা গ্রহণ করার স্বাধীনতা রয়েছে— এমন মতামতও শোনা যেতে শুরু করে।

প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি শেষ পর্যন্ত নাগপুরে পা রাখলেন, সঙ্ঘের প্রায় সমস্ত প্রথা মেনে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলেন। ভাষণ দিলেন। কিন্তু এই অনুষ্ঠানে তাঁর যোগদান নিয়ে যাঁদের মনে প্রশ্নচিহ্ন ছিল না, তাঁদেরও প্রণববাবু বেশ অবাক করে দিলেন।

আরও পড়ুন: ভাষণে ‘জাত’ রক্ষা, তবু কংগ্রেসের হাসি মুছলেন প্রণব, খুশির হাওয়া সঙ্ঘে

যেন অত্যন্ত সরু একটি সুতোর উপর হাঁটলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। নিজের ভাষণে তিনি নিজের রাজনৈতিক গোত্র রক্ষার চেষ্টা করলেন। ভারতীয় সমাজের বৈচিত্র, বহুত্ব, বিবিধতা নিয়ে সারা জীবন যে সব কথা বলে এসেছেন, সুযোগ মতো সেগুলো ফের আওড়ালেন সঙ্ঘের মঞ্চে দাঁড়িয়ে। সহিষ্ণুতাই ভারতের সবচেয়ে বড় শক্তি বলে মন্তব্য করলেন। দেশে অসহিষ্ণুতা ও হিংসা বাড়ছে, ভারতকে সে সবের বিপরীতে যেতে হবে— এমন পরামর্শ দিলেন। এই সব কথায় তাঁর রাজনৈতিক ঘরানা সুরক্ষিত রইল কিন্তু এ সবের পাশাপাশি এমন অনেক কথাও প্রণব মুখোপাধ্যায় বললেন যাতে সঙ্ঘের খুশি হওয়ার এবং কংগ্রেসের অসন্তুষ্ট হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

আরএসএস প্রতিষ্ঠাতা কেশব বলিরাম হেডগেওয়ারের সমালোচনায় সব সময়ই সরব থাকে কংগ্রেস। হেডগেওয়ারের নীতি-আদর্শেই আরএসএস নির্মিত ও সিঞ্চিত। তাই সঙ্ঘকে আক্রমণ করতে গিয়ে সর্বাগ্রে হেডগেওয়ারকেই আক্রমণ করে কংগ্রেস। সেই হেডগেওয়ারের বাসভবনে প্রণব মুখোপাধ্যায় গেলেন, প্রণব শ্রদ্ধার্পণ করলেন, প্রণব মুখোপাধ্যায় ভিজিটরস বুকে হেডগেওয়ারকে ‘ভারতমাতার মহান সন্তান’ বলে ব্যাখ্যাও করলেন। এর অর্থ কী? প্রশ্ন জাগল বিভিন্ন শিবিরেই।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ভাষণে বিস্ময়ের আরও উপাদান ছিল। আজীবন গাঁধীবাদী হিসেবে পরিচিত যে নেতা, তাঁর ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস এলেও, তাতে গাঁধীর ভূমিকা নিয়ে খুব বিশেষ আলোচনা শোনা গেল না। স্বাধীনতা উত্তর ভারত গঠনের প্রসঙ্গে সর্দার পটেলের প্রশংসা শোনা গেল প্রণবের মুখে, নেহরু সে প্রসঙ্গে ব্রাত্য রইলেন। প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার গৌরব গাঁথা শোনালেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, কিন্তু মুসলিম রাজত্বকাল সম্পর্কে খুব ইতিবাচক কোনও মন্তব্য করলেন না। সঙ্ঘের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যই ভাষণে এই মারপ্যাঁচ— এমনটা ধরে নেওয়া হবে না কেন? নিজের কংগ্রেসি চরিত্র বহাল রেখেও কংগ্রেস নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেলার চেষ্টা করলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়— এমন ব্যাখ্যাতেই বা যাব না কেন?

ব্যাখ্যা যাই হোক, বিশ্লেষণে যা কিছুই উঠে আসুক, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির বার্তা খুব স্পষ্ট হল না সম্ভবত। সঙ্ঘের অনুষ্ঠানে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতিই অত্যন্ত বার্তাবহ একটি ঘটনা। নিজের আজীবনের রাজনৈতিক বিশ্বাস থেকে বা মতাদর্শ থেকে প্রণববাবু সরে আসার ইঙ্গিত দেবেন এই অনুষ্ঠান থেকে, তেমন কোনও সম্ভাবনা বোধ হয় ছিল না। ওই অনুষ্ঠানের সামিল হতে রাজি হওয়ার মধ্যেই বোধ হয় সবচেয়ে বড় বার্তাটা নিহিত ছিল। কিন্তু সম্ভাব্য বার্তা ঘিরে ধন্দও বিস্তর ছিল। তাই প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ভাষণ থেকে তাঁর এই পদক্ষেপের একটা সুসংহত ব্যাখ্যা মিলবে বলে আশা করা গিয়েছিল। কিন্তু তা মিলল না। শব্দের মারপ্যাঁচ মিলল। সুদীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, অসামান্য রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বিপুল রাজনৈতিক পরিপক্কতা— এই সব কিছুর প্রয়োগ দেখা গেল প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ভাষণে। তাঁর দিকে আঙুল তোলার অবকাশ না রেখেও তিনি কংগ্রেসকে অস্বস্তিতে ফেললেন এবং খোলাখুলি সঙ্ঘের পক্ষে সওয়াল না করেও তিনি সঙ্ঘের মুখে হাসি ফোটালেন— এমনটাই প্রতীত হল। শুধু কারণটাই স্পষ্ট হল না। কোন মহৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এত বিতর্ক ঠেলেও প্রণব মুখোপাধ্যায় সঙ্ঘের সভায় হাজির হলেন, স্পষ্ট বোঝা গেল না।

কেন যাচ্ছেন সঙ্ঘের সভায়, তা সভায় গিয়েই বলবেন, অনেকটা এমনই বয়ান মিলেছিল প্রণববাবুর কাছ থেকে। সভায় গেলেন, নিজের উপলব্ধিও ব্যক্ত করলেন। কিন্তু কেন গেলেন, সে ব্যাখ্যা অধরাই রয়ে গেল।

Pranab Mukherjee RSS Anjan Bandyopadhyay Newsletter প্রণব মুখোপাধ্যায় আরএসএস অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Mohan Bhagwat Congress Rashtriya Swayamsevak Sangh K. B. Hedgewar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy