পড়াশোনায় মন দিতে চাইছেন চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষক-শিক্ষিকারা। সুপ্রিম কোর্টে পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ হওয়ার পর তাঁরা রাস্তায় নেমে আন্দোলনের পথ থেকে সরে আসতেই চাইছেন।
চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শেষ ভরসা ছিল পুনর্বিবেচনার আর্জি (রিভিউ পিটিশন)। ১৯ অগস্ট প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মীর সমস্ত আর্জি খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তার পরই রাজপথের আন্দোলন থেকে সরে সংগঠনগত ভাবে আইনি লড়াইয়ের পথে চলতে চাইছেন। পাশাপাশি পরীক্ষার প্রস্তুতিতেও জোর দিচ্ছেন।
আরও পড়ুন:
প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির কারণে চাকরি চলে যাওয়ার পর বাড়ি ছেড়ে রাজপথে পড়ে থেকে ন্যায় বিচারের দাবি তুলেছে বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা। একটানা অনশন করে অসুস্থ হয়েছেন পড়েছেন অনেকে। আন্দোলন করতে গিয়ে ও পুলিশের লাথি থেকে লাঠি— সবই খেতে হয়েছে তাঁদের। একটাই দাবি ছিল তাঁদের, তাঁরা ‘যোগ্য’, দ্বিতীয়বার আর পরীক্ষা দেবেন না। সুপ্রিম কোর্টের রায় তাঁদের হতাশ করেছে। তাই ‘যোগ্য’-রা দ্বিতীয়বার নিজেদের ‘যোগ্যতা’ প্রমাণের লড়াইয়ে সামিল হচ্ছেন।
আরও পড়ুন:
কামারপুকুরের বাসিন্দা, জয়ন্ত কুণ্ডু ভৌতবিজ্ঞানের শিক্ষক হিসাবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। চাকরিহারা অবস্থায় তিনি ফের মন দিয়েছেন পড়াশোনায়।
তিনি বলেন, "পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ হওয়ায় আমরা আশাহত। এত অল্প সময়ের মধ্যে এত বড় সিলেবাস শেষ করব কী করে জানি না! যথেষ্ট মানসিক চাপে রয়েছি।" তাঁর দাবি, ইতিমধ্যে সরকার যে শূন্যপদ ঘোষণা করেছে তাতে ৩২২টি আসন কম রয়েছে। পাশ না করলে কী হবে তা ভেবেই শিউরে উঠছেন।
‘যোগ্য’ চাকরি হারাদের আন্দোলনের অন্যতম মুখ হিসেবে পরিচিত সঙ্গীতা সাহা বলেন, “আমাদের আর্জি বাতিল হয়ে গিয়েছে। এখন পরীক্ষায় বসা ছাড়া উপায় নেই। ২০১৬-র পরীক্ষায় নিজের যোগ্যতায় পাশ করেছিলাম। দ্বিতীয় বারও নিজের শক্তিতেই পরীক্ষায় বসব, নিজের যোগ্যতায় পাশ করব।”
পুনর্বিবেচনার আর্জি বাতিল হওয়ার পর চাকরিহারাদের কাছে আইনি লড়াইয়ের পথ অনেকটাই সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়েছে। হাতে রয়েছে সংশোধনের আর্জি (কিউরিটিভ পিটিশন)। যা সময় সাপেক্ষ বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। চাকরিহারাদের অনেকেরই বক্তব্য, পড়াশোনায় মন দেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। তা-ও পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। আন্দোলনকারী ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের নেতা মৃন্ময় মণ্ডল বলেন, “সামনেই পরীক্ষা। হাতে সময় খুব কম। আইনি লড়াইয়ে আরও সময় চলে যাবে। পরীক্ষায় পাশ না করলে আর কোনও উপায়ই থাকবে না। তাই রাজপথে আন্দোলন নয়। লড়াই হবে খাতায়-কলমে।”
শিক্ষকতার চাকরি হারিয়েছেন রূপা কর্মকারও, “বাধ্য হয়েই পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে, পড়াশোনা শুরু করেছি। তবে, আন্দোলনের পথ থেকে সরছি না, তেমন প্রয়োজনে ফের পথে নামব।”