জীবন বহমান এবং ঘটনাবহুল। কখনও ভাল কিছু ঘটলে যেমন মন আনন্দে উদ্বেল হয়ে যায়। তেমনি কিছু ঘটনা মনকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়। কেড়ে নেয় রাতের ঘুম বা ঘুম ভাঙতেই চায় না। দুশ্চিন্তায় বুক ধড়ফড়, হাত পা ঠান্ডা হতে থাকে। মন তোলপাড় হয়ে সুস্থ শরীরে অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন-এর মতো একাধিক রোগব্যাধি চেপে বসে। শুধু পরিণত বয়সে নয়, শিশু-কিশোর মনেও এই উদ্বেগ, বিষণ্ণতার ছায়া পড়ে।
শিশুদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হতে পারে জিনগত বা পরিবেশগত কারণেও। সে ক্ষেত্রে তাদের পড়াশোনা, সামাজিক মেলামেশা ব্যাহত হয়। সব দিকে পিছিয়ে পড়তে শুরু করে শিশু। আবার এডিএইচডি বা অটিজ়ম স্পেকট্রাম ডিজ়িজ়-এর মতো বৌদ্ধিক সমস্যা তাদের ব্যতিক্রমী করে তোলে।
এ সব সমস্যায় সুরাহার পথ বাতলে দিতে পারেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং মনোবিদরা। ওষুধ ছাড়াও কগনিটিভি বিহেভিয়ারাল থেরাপি, সাইকোডায়নামিক থেরাপি, ডায়লেকটিক্যাল বিহেভিয়ার থেরাপি-র মতো একাধিক উপায়ে নিরাময় বা উপশম সম্ভব।
আরও পড়ুন:
এরই পাশাপাশি আর এক ধরনের থেরাপি মনের ক্ষত সারানোর ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ইদানীং। শিল্পের হাত ধরে মনোরোগ নিরাময়ের পোশাকি নাম— আর্ট থেরাপি। ব্রিটিশ শিল্পী আড্রিয়ান হিল ১৯৪২ সালে প্রথম আর্ট থেরাপি শব্দবন্ধের ব্যবহার করেন। কী ভাবে অঙ্কন শিল্পের হাত ধরে তিনি যক্ষ্মা রোগ দ্রুত সারিয়ে তোলেন, তা তাঁর লেখায় ফুটে ওঠে। এর পর ইংল্যান্ড এবং আমেরিকার একাধিক প্রথিতযশা লেখক এবং শিল্পীও শিল্পকে মনের শুশ্রূষার কাজে লাগানোর কথা বার বার উল্লেখ করেন। ধীরে ধীরে এই মাধ্যমের গুরুত্ব বাড়তে থাকে।
কিন্তু কী ভাবে আর্ট থেরাপিকে ব্যবহার করা যায়? কী ভাবেই তা অসুস্থতার প্রতিকারের হাতিয়ার হতে পারে?
আর্ট থেরাপি আদতে সাইকোথেরাপিরই অন্যতম অঙ্গ। যেখানে শিল্পকলার মাধ্যমে মনের ইতিবাচক আবেগগুলি ফুটিয়ে তোলা হয়। গান, আঁকা, নাচ, হাতের কাজ, নাটকের মাধ্যমে মস্তিষ্কের নানা আনন্দের অনুভূতি উদ্দীপক হরমোন ডোপামিন, সেরেটোনিন ক্ষরণকে বাড়িয়ে তোলা যায়। সৃষ্টিশীল কাজের মধ্যে মনকে নিয়োজিত রাখতে পারলে এক দিকে যেমন মনের বিকাশ ঘটানো সম্ভব, অন্য দিকে বাড়ানো সম্ভব মনঃসংযোগ। সৃজনশীল কাজই এক লহমায় কমিয়ে দিতে পারে দুশ্চিন্তার ভার। ফলে শান্ত হয় মন। যা ধীরে ধীরে মনের দরজা খুলে দিয়ে সামাজিক মেলামেশার পরিসর বৃদ্ধি করে এবং জীবনকে অন্য ভাবে দেখতে সাহায্য করে।
গত কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে বাড়ছে পড়ুয়াদের আত্মহননের প্রবণতা। এই পরস্থিতি ঠেকাতে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট ১৫ দফা নির্দেশিকা জারি করেছে। পড়ুয়াদের মধ্যে মানসিক চাপ, উদ্বেগ দূর করতে রাজ্যের আইআইটি খড়্গপুরও তাই আর্ট থেরাপিকে হাতিয়ার হিসাবে বেছে নিয়েছে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানে তিন দিনের এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে। সেখানে রঙতুলি, হাত-পায়ের মুভমেন্ট, পেসড ওয়াকিং, বেলুন ব্যালেন্সিং, সেফ স্পেস ভিস্যুয়ালাইজ়েশনের মাধ্যমে নানা ভাবে মনের ভাব প্রকাশের সুযোগ পান পড়ুয়ারা।