ছোটবেলার গল্পের বইয়ে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের নিঃস্বার্থ সেবার গল্প অনেকেই পড়েছেন। এর পর স্বপ্ন দেখেছেন, মানুষের সেবা কাজে নিজেকে নিয়োজিত করারও। একজন নার্স প্রকৃত অর্থেই একজন শুশ্রূষাকারীর কাজ করেন। এ ছাড়াও তাঁদের মানুষের শরীর সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকে। এ জন্য চিকিৎসাক্ষেত্রে কোনও আপৎকালীন পরিস্থিতিতে নার্সদের একেবারে সামনের সারিতে থেকে রোগীদের শুশ্রূষা করতে হয়। বর্তমানে যে ভাবে সংক্রামক রোগব্যধির পরিমাণ বাড়ছে, তাতে হাসপাতালগুলিতে নার্সের চাহিদাও ক্রমবর্ধমান। তাই সব মিলিয়ে নার্সিংকেই অনেকে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন।
প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা
পড়ুয়াদের উচ্চমাধ্যমিক স্তরে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিদ্যা নিয়ে ন্যূনতম ৪৫ শতাংশ নম্বর-সহ উত্তীর্ণ হতে হবে। পাশাপাশি, আবশ্যিক বিষয় হিসাবে পড়তে হবে ইংরেজি।
উচ্চমাধ্যমিক বা দ্বাদশের পরীক্ষায় উত্তীর্ণেরা নার্সিং নিয়ে পড়ার জন্য যে সমস্ত পরীক্ষা দিতে পারেন, সেগুলি হল—
১) ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (এনটিএ) আয়োজিত ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট ওরফে নিট।
২) পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, চণ্ডীগড় আয়োজিত পিজিআইএমইআর নার্সিং পরীক্ষা।
৩) জওহরলাল ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, পণ্ডিচেরি আয়োজিত জেপিএমইআর নার্সিং পরীক্ষা।
৪) অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস,দিল্লি দ্বারা আয়োজিত এমস নার্সিং পরীক্ষা।
৫) ইন্ডিয়ান আর্মির ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ মেডিক্যাল সার্ভিসেস আয়োজিত ইন্ডিয়ান আর্মি বিএসসি নার্সিং পরীক্ষা।
৬) ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট এন্ট্রান্স এগজ়ামিনেশন বোর্ড (ডব্লিউবিজেইইবি) আয়োজিত জেনপাস ইউজি পরীক্ষা।
৭. বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি আয়োজিত বিএইচইউ নার্সিং পরীক্ষা।
৮) খ্রিস্টান মেডিক্যাল কলেজ, ভেলোর আয়োজিত সিএমসি ভেলোর নার্সিং পরীক্ষা
এ ছাড়া, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, কোর্স এবং রাজ্যের তরফে নিজস্ব প্রবেশিকা পরীক্ষার আয়োজন করা হয়।
আরও পড়ুন:
ভারতবর্ষে নার্সিং ডিগ্রি কোর্সগুলি ইন্ডিয়ান নার্সিং কাউন্সিল (আইএনসি) দ্বারা স্বীকৃত। নার্সিংয়ের প্রচলিত ডিগ্রি ও ডিপ্লোমা কোর্স ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিং হোম থেকে ৬ মাস থেকে এক বছরের কিছু সার্টিফিকেট কোর্সও করা যায়। ইন্ডিয়ান নার্সিং কাউন্সিলের তরফে যে সমস্ত কোর্স করানো হয়, সেগুলি হল—
১) এএনএম এবং জিএনএম কোর্স। দু’টিই ডিপ্লোমা কোর্স। এএনএম কোর্সের মেয়াদ দু’বছর। অন্য দিকে, জিএনএম কোর্সটি তিন বছরের।
২) স্নাতক স্তরে পড়ানো হয় বিএসসি নার্সিং বেসিক এবং বিএসসি নার্সিং পোস্ট বেসিক কোর্স। বিএসসি নার্সিং বেসিক কোর্সটি চার বছরের। বিএসসি পোস্ট বেসিক কোর্স প্রথাগত মাধ্যমে করলে দু’বছরের মধ্যে শেষ করতে হয়। দূরশিক্ষা মাধ্যমে এই কোর্সের মেয়াদ তিন বছর।
৩) স্নাতকোত্তরের এমএসসি নার্সিং কোর্সটি দু’বছরের।
৪) নার্সিংয়ে এমফিল করতে চাইলে প্রথাগত মাধ্যমে এক বছরের মধ্যে কোর্স শেষ করতে হয়। আংশিক সময়ে এই কোর্স করতে চাইলে তা সম্পূর্ণ করতে হবে দু’বছরের মধ্যে।
৫) নার্সিংয়ে পিএইচডি সম্পূর্ণ করতে হয় তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে।
৬) পোস্ট বেসিক ডিপ্লোমা করানো হয় একাধিক বিষয়ে। সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি হল— অপারেশন রুম নার্সিং, কার্ডিয়োথোরাসিক নার্সিং, নিউরোলজি নার্সিং, মিডওয়াইফারি নার্সিং, সাইকিয়াট্রিক নার্সিং, ক্রিটিক্যাল কেয়ার নার্সিং, এমার্জেন্সি অ্যান্ড ডিজ়আস্টার নার্সিং, অনকোলজি নার্সিং, অর্থো অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন নার্সিং, জেরিয়াট্রিক নার্সিং, নিওনেটাল নার্সিং, ফরেন্সিক নার্সিং, হেমাটোলজি নার্সিং, বার্ন অ্যান্ড রিকনস্ট্রাক্টিভ নার্সিং। সমস্ত কোর্সের মেয়াদ এক বছর।
৭) এ ছাড়া, নার্স প্র্যাকটিশনার ইন ক্রিটিকাল নার্সিং বিষয়েও দু’বছরের কোর্স করায় আইএনসি।
নার্সিং নিয়ে পড়ার জন্য দেশের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হল-
১) অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এমস), দিল্লি
২) খ্রিস্টান মেডিক্যাল কলেজ, ভেলোর
৩) জিপমার, পণ্ডিচেরি
৪) পিজিআইইএমআর, চণ্ডীগড়
৫) বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়।
পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে নার্সিং-এ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হল—
১) কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ
২) আইপিজিএমই অ্যান্ড আর ও এসএসকেএম হাসপাতাল
৩) নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ।
৪) আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ।
৫) কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ।
নার্সিং নিয়ে পড়ার পর হাসপাতালে নার্স হিসাবে কাজ করা ছাড়াও অন্যান্য যে চাকরির সুযোগ রয়েছে, সেগুলির মধ্যে অন্যতম—
১) নার্সিং শিক্ষক।
২) নার্সিং ম্যানেজার।
৩) লিগ্যাল নার্স কনসালট্যান্ট।
৪) নার্স অ্যানাস্থেসিস্ট।
৫) মিডওয়াইফ।