সারা রাজ্যে প্রায় ৭ হাজার স্কুলে প়ড়ানো হয় উচ্চ মাধ্যমিক। সে সব স্কুলে পড়ুয়াদের জন্য বইয়ের জোগান দেওয়ার কথা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের। কিন্তু অভিযোগ, এই মুহূর্তে বই-সঙ্কটে ভুগছে বহু স্কুল। এ দিকে তৃতীয় সেমেস্টার শুরু হতে চলেছে সেপ্টেম্বরে। পড়ুয়াদের হাতে বই পৌঁছয়নি।
এরই মধ্যে নতুন পুস্তকবিপণি খুলতে চলেছে সংসদ। জানা গিয়েছে, অত্যাধুনিক ‘বুকমার্ট’ গড়ে তোলা হবে সংসদের ভিতরে। ভবিষ্যতে সেখানে পাওয়া যাবে ই-কমার্সের সুবিধাও। সংসদের দাবি, এতে নাকি খানিকটা হলেও সমাধান হবে জেলার পড়ুয়াদের।
আরও পড়ুন:
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের প্রবেশ পথের বাঁ দিকে তৈরি হচ্ছে বিপণি। সেখানে সরকারি বইয়ের পাশাপাশি থাকবে শিক্ষা সংসদ অনুমোদিত বেসরকারি বইও। যে সমস্ত স্কুল এখনও বই হাতে পায়নি, তারা সরাসরি এখান থেকে সরকারি বই সংগ্রহ করতে পারবে। শিক্ষা সংসদ অনুমোদিত বেসরকারি বইগুলির তালিকায় থাকবে চার জন পৃথক লেখকের বই। পড়ুয়ারা চাইলে নিজেদের ইচ্ছা মতো তা সংগ্রহ করতে পারবেন।
আরও পড়ুন:
জানা গিয়েছে, সরস্বতী প্রেস থেকে ছাপানো সরকারি বই জেলায় নিয়ে যান কর্তৃপক্ষ। ডিআই-দের মধ্যস্থতায় তা পৌঁছয় স্কুলে স্কুলে। কিন্তু এই পদ্ধতি বেশ সময় সাপেক্ষ বলে স্কুলে পৌঁছতে অনেক সময় দেরি হয়ে যায়। ছাপানো বইয়ে কিছু সমস্যা থাকলে তা ফেরত দিতে হয়। কিন্তু, সে সব কিছুর জন্য শেষ পর্যন্ত হেনস্থা হতে হয় পড়ুয়াদের।
হিসাব বলছে, শিক্ষা সংসদের অধীনে বর্তমানে স্কুলের সংখ্যা প্রায় সাত হাজার। এখনও প্রায় এক হাজার স্কুলে বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন বই স্কুলে পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ জমা পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, “এখনও বহু জায়গায় বইয়ের সঙ্কট রয়েছে। যে সব স্কুল এই অসুবিধার মধ্যে রয়েছে, তারা সরাসরি এখান থেকে বই সংগ্রহ করতে পারবে।” তবে বই সঙ্কটের দ্রুত সমাধান হবে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সচিব প্রিয়দর্শিনী মল্লিক বলেন, “আন্তর্জাতিক মানের পুস্তকবিপণির ধাঁচে তৈরি হচ্ছে এই ‘বুকমার্ট’। বেশ কিছু স্কুল রয়েছে যাদের ১৭৫টি বইয়ের প্রয়োজন, কিন্তু তারা পেয়েছে ১০০ টি। এই সমস্ত স্কুল এখান থেকে বই সংগ্রহ করে নিয়ে যেতে পারবে। প্রায় ৬ হাজার বই থাকবে এখানে।”
বৃহস্পতিবার ১৪ অগস্ট বিপণি উদ্বোধন করবেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। ভবিষ্যতে ই-কমার্স পদ্ধতিতেও বই সংগ্রহ করতে পারবে স্কুলগুলি। অনলাইনে বইয়ের অর্ডার দিলে তা কুরিয়ার-এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট স্কুলে পৌঁছে দেওয়া হবে, এমনটাই জানাচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ।
উল্লেখ্য, বর্তমানে সংসদের তরফে ৬২টি বিষয় পড়ানো হয়। তার মধ্যে ১৫ টি ভাষাভিত্তিক (ল্যাঙ্গুয়েজ) বই রয়েছে। শিক্ষা সংসদ অনুমোদিত টেক্সট বুক নম্বর (টিবি নম্বর) যুক্ত বই ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে বিভিন্ন স্কুলে ও বইয়ের দোকানে। তবে বাংলা, ইংরেজি-সহ ভাষাভিত্তিক বই এখনও হাতে পায়নি পড়ুয়ারা। অনলাইনে ‘স্টাডি মেটেরিয়াল’-র সাহায্য নিয়ে পড়াশোনা চালাতে হচ্ছে।
শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, “সংসদ কেন সকলের হাতে বই পৌঁছে দিতে পারল না! সে দায় কিন্তু সংসদকেই নিতে হবে। পুস্তকবিপণির থেকে অনেক বেশি জরুরি ছিল সব পড়ুয়ার হাতে বই তুলে দেওয়া।”
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “দ্বাদশের পঠনপাঠন শুরু হয়েছে, গ্রীষ্মাবকাশের আগে, একাদশের জুনে। তিন মাস পরও বই হাতে পায়নি পড়ুয়ারা। এই ব্যর্থতা সংসদের, সরকারের। আখেরে ক্ষতি হচ্ছে পড়ুয়াদের। ক’জন পড়ুয়া কলকাতায় এসে বই কিনে নিয়ে যেতে পারবে?”