ভীত চোখে। জাবালিয়ায় আশ্রয় শিবিরে আবু হুসেন স্কুলে। ছবি: এপি।
মানবিকতার খাতিরে মাত্র চার ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করেছিল ইজরায়েল। গাজার শাজাইয়া-র একটি বাজারে তাই জড়ো হয়েছিলেন সাধারণ নাগরিকরা। তখনই মুহুর্মুহু বিস্ফোরণ। কালো ধোঁয়ায় কিছুই দেখা যাচ্ছে না। শুধু আর্তচিৎকার। এ ভাবেই বৃহস্পতিবার গাজায় মৃত্যুর তালিকাটি আরও দীর্ঘ হল, জুড়ল আরও ১৫টি নাম। ঘটনাটি নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও গাজার যে সব জায়গায় সেনা অভিযান চলছিল সেখানে যুদ্ধবিরতি ছিল না বলে ইজরায়েল জানিয়েছে। পাশাপাশি, বুধবার জাবালিয়ায় আশ্রয় শিবিরের আবু হুসেন স্কুলে হামলার বিষটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে ইজরায়েল জানিয়েছে। গাজায় মৃতের সংখ্যা বাড়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আমেরিকা। কিন্তু ইজরায়েলে থাকা নিজেদের অস্ত্রাগার ইজরায়েলের জন্য খুলে দিল পেন্টাগন।
বৃহস্পতিবার গাজার সংঘর্ষ ২৪ দিনে পড়ল। ২০০৫-এ গাজা ছেড়ে চলে আসে ইজরায়েল। এর পরে এই নিয়ে মোট তিনটি সংঘর্ষ বাধল দুই ভূখণ্ডের মধ্যে। ২০০৮-এর সংঘর্ষ চলেছিল ২২ দিন। ২০১২-য় আট দিনে শান্তি ফিরেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিকতম এই সংঘর্ষ থামার কোনও লক্ষণ এখনও পর্যন্ত নেই। বুধবার ইজরায়েলের সিকিউরিটি ক্যাবিনেট আক্রমণ আরও জোরদার করার অনুমতি দিয়েছে। বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে সুড়ঙ্গগুলি ধ্বংস করার উপরে। বৃহস্পতিবার এমনই এক সুড়ঙ্গ ধ্বংস করতে গিয়ে হামাসের পাতা ‘বুবি ট্র্যাপ’-এ তিন ইজরায়েলি সেনা প্রাণ হারিয়েছেন।
এ দিকে আরও ১৬ হাজার রিজার্ভ সেনাকে কাজে ডেকেছে ইজরায়েল। সব মিলিয়ে গাজার অভিযানে তাদের ৮৬ হাজার সেনা অংশ নিচ্ছে। হামাসকে ধ্বংস করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ৫৬ জন ইজরায়েলি সেনার মৃত্যু হয়েছে। প্রাণ হারিয়েছেন তিন জন সাধারণ ইজরায়েলিও। অন্য দিকে, বুধবারই আরও ১০০ জন প্যালেস্তিনীয়র মৃত্যু হয়েছে। ফলে গাজায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল প্রায় ১৩৬১। দুঃখপ্রকাশ করলেও ইজরায়েল এর জন্য হামাসের নীতিকেই দায়ী করেছে। স্কুল, মসজিদ, হাসপাতাল এবং অন্যান্য জনবহুল এলাকায় হামাস অস্ত্র লুকিয়ে রাখছে। এই সব জায়গা থেকে রকেট উৎপেক্ষণও করা হচ্ছে বলে ইজরায়েলের অভিযোগ। ইজরায়েলি সেনা তাদের ট্যুইটার অ্যাকাউন্টে জানিয়েছে, গাজার হাসপাতালে হামাসের নেতারা আত্মগোপন করেছেন। বুধবার রাতে ১৯টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে ইজরায়েল। কিন্তু এর পরেও হামাসের রকেট ছোড়া বন্ধ করা যায়নি। তিন সপ্তাহ ধরে চলা এই সংঘর্ষে হামাস মোট ২৮৩৫টি রকেট ছুড়েছে। বৃহস্পতিবারই ১০টি রকেট ছোড়ে তারা। এতে অবশ্য হতাহতের কোনও খবর নেই।
চিরবিদায়। ছাড়তেই হবে কন্যাসন্তানকে। গাজা, ৩১ জুলাই। ছবি: এএফপি।
জাবালিয়ার আশ্রয় শিবিরে হামলার তদন্ত চালাচ্ছে ইজরায়েল। তিন হাজার বাসিন্দার এই আশ্রয় শিবিরটি সম্পর্কে ১৭ বার ইজরায়েলকে জানান হয়েছিল বলে রাষ্ট্রপুঞ্জ সূত্রে খবর। ইজরায়েলি সেনা জানিয়েছে, শিবিরটি তাদের আক্রমণের লক্ষ্য ছিল না। কিন্তু কাছেই হামাসের একটি প্রশিক্ষণ শিবিরে আক্রমণ চালানো হচ্ছিল। রাষ্ট্রপুঞ্জের রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্ক এজেন্সি সূত্রে খবর, ৮৬টি আশ্রয় শিবিরে ২ লক্ষ ২৫ হাজার ১৭৫ জন নাগরিক রয়েছেন। সব মিলিয়ে গাজার ১৮ লক্ষ বাসিন্দার ২৫ শতাংশই এখন ঘরছাড়া।
হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার চিলি ও পেরুর মতো ইকুয়েডরও ইজরায়েল থেকে রাষ্ট্রদূত সরিয়ে নিয়েছে। পেন্টাগন সূত্রে খবর, ইজরায়েলের সঙ্গে আমেরিকার পূর্ব-চুক্তি অনুসারে প্রয়োজনে আমেরিকা অস্ত্রাগারটি ইজরায়েলকে খুলে দিতে বাধ্য। এখানে থেকে আপাতত ইজরায়েলকে ১২০ মিলিমিটারে মর্টার ও ৪০ মিলিমিটারে গ্রেনেড দেওয়া হচ্ছে। এই অস্ত্রাগারে ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র মজুত আছে বলে জানা গিয়েছে। প্যালেস্তাইন কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। ইজরায়েল প্রশাসন সূত্রে খবর, খাদ্য ও ওষুধ মিলিয়ে গাজায় ৭৫০ টনের ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হয়েছে। পাঠানো হয়েছে জ্বালানিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy