Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Anirban Bhattacharya

ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম সাজাতে অভিনেতারা যে শ্রম দিচ্ছেন, তা অভিনয়ে দিলে পারতেন: অনির্বাণ

নেটদুনিয়ায় আদালত বসছে। কলাকুশলীদের নিশানা করে খোলাখুলি আক্রমণ চলছে। যাতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন অনেকেই। মোকাবিলা আদৌ সম্ভব?

অনির্বাণ ভট্টাচার্য।

অনির্বাণ ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:০৫
Share: Save:

সব কিছু পেশা, আর অভিনয়টা পেশা নয়? যেন রাতারাতি নিজেকে অভিনেতা বলে দিলেই পরের দিন থেকে অভিনয় শুরু করে দেওয়া যায়? আর হচ্ছেও তো তাই। এমনটাই দাবি অনির্বাণ ভট্টাচার্যের। নেটদুনিয়ার মজলিস নিয়ে তর্ক-বিতর্কের মাঝে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল হালের ‘ব্যোমকেশ’-এর সঙ্গে। যদি তাঁর কাছে থাকে সমাধান! কী বললেন মঞ্চ-পর্দা মাতানো অভিনেতা?

ইদানীং নেটদুনিয়ায় কলাকুশলীদের নিশানা করে খোলাখুলি আক্রমণ চলছে। যেন আদালত বসেছে। থিয়েটার ছেড়ে বা থিয়েটারের পাশাপাশি পর্দায় অভিনয় করলে তাকে ‘জাতে ওঠা’, ‘উত্তরণ’ গোছের শব্দবন্ধে বেঁধে ফেলার চেষ্টা চলছে। এ কি উচিত কাজ? প্রশ্ন তুলেছিলেন অভিনেত্রী রায়তী ভট্টাচার্য। মূলত মঞ্চেই কাজ করতে পছন্দ করেন তিনি। পর্দায়ও করছেন না তা নয়, তবে দুটো জায়গা গুলিয়ে ফেলার পক্ষপাতী নন। রায়তীর মতে, ‘‘কে কোথায় অভিনয় করবেন, কোন মঞ্চ ভালবাসবেন সেটা তাঁর উপরই ছেড়ে দিন না! থিয়েটার কর্মী কিংবা বাকিদের থেকে ‘আহা তুই তো বেশ করে দেখালি’ ধরনের মন্তব্য শুনতে ভাল লাগছে না।’’

এই সমস্ত নীতিবাগীশদের নিয়ে কী করা যায়? সমস্যায় রয়েছেন অনেকেই। সাম্প্রতিক কালে হতাশায় ভোগা নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রীর সংখ্যা কম নয়। কিসের প্রতিযোগিতা? কিসের কী? নেটদুনিয়ার মন রাখতে গিয়ে নিজেদের শেষ করে দিচ্ছেন, এমন উদাহরণও কম নয়। তবু এই প্রবণতা বাড়ছে।

এ প্রসঙ্গে অনির্বাণ জানান, এটি অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। এক জন মঞ্চের অভিনেতা ভাল কাজ করলে, জনপ্রিয়তা পেলে, তাঁকে সিনেমায় আনা হয়। সিনেমায় ভাল করলে তিনি আরও বেশি মানুষের ভালবাসা পান। সারা বিশ্বে এত কাল ধরে এমনটাই হয়ে আসছে। এতে কে প্রশংসা করল, আর কে করল না, সে সব ধর্তব্যের মধ্যেই আসে না। ঈর্ষাজনিত কারণে যদি কেউ কোনও মন্তব্য করে থাকেন, সেটাও প্রথাগত ভাবেই আসছে।

কিন্তু যদি খারাপ লাগা বাড়তে থাকে? অনির্বাণের নিদান, নেটদুনিয়া ত্যাগ করতে হবে। না হলে খারাপ লাগা বাড়তেই থাকবে। যদিও একই সঙ্গে জানালেন, তিনি এই নিদান দেওয়ার কেউ নন। তবু, যদি সকালবেলা ঘুম ভেঙে ফেসবুক পোস্ট পড়ে কারও কোনও কিছু খারাপ লাগে, মন ব্যথিত বা ব্যতিব্যস্ত হয়ে যায়, তা হলে মুশকিল।

অনির্বাণের কথায়, ‘‘থিয়েটার, সিনেমা কিংবা অভিনয় শিল্প সব কিছুই এর থেকে অনেক বড়। এই খারাপ লাগাটা যদি একটা ব্যাধি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে কয়েক বছর পরে, তা হলে সেটা সোশ্যাল মিডিয়ার কারণেই। আমি সব জায়গায় একই কথা বলে খারাপ হতে চাই না, তবে এই সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের সমস্ত বুনিয়াদ ধসিয়ে দেবে। ইতিমধ্যেই দিয়েছে। কারণ বহু অভিনেতা-অভিনেত্রী তাঁদের অভিনয়ের পিছনে যে শ্রমটা দিচ্ছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি পরিশ্রম করছেন ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক ইত্যাদি সাজাতে।’’

‘মন্দার’-এর অভিনেতা সাফ জানান, ভার্চুয়াল দুনিয়ার ফলোয়ার দিয়ে কিন্তু কাজ বিচার হবে না। ক্লোজ শটে কে কতটা নিখুঁত অভিনয় করতে পারছেন, দিনের শেষে সেটাই ধরা থাকবে। জোর দিয়ে বললেন, ‘‘আজকেও হবে না, একশো বছর পরেও হবে না। এ সব ব্যথা-বেদনা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে উঠে আসা। দিনের পর দিন আরও বেড়ে যাবে। বরং নিজেকে প্যারামিটার ঠিক করতে হবে কোনটাকে মাপকাঠি ধরব। ‘উত্তরণ’ ভাল শব্দ। কিন্তু এটা নিয়ে গাত্রদাহ হবে কেন? অভিনয় তো একটা পেশা!’’

উদাহরণ হিসাবে অনির্বাণ তুলে আনলেন ডাক্তারির কথা। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও দিন কোনও ডাক্তার যদি এমবিবিএস পাশ করে চেম্বার খোলেন, অন্য কোনও ডাক্তার কি তাঁকে বলেন, ‘আরে তুই তো করে দেখালি!’ শুধু মাত্র পেশা হিসাবে অভিনয় নিয়ে এ সব চলার কোনও যুক্তি খুঁজে পাই না। আসলে অনেক লোক এখন অভিনয় করে। রাতারাতি নিজেকে অভিনেতা বলে দেওয়া যায়। এত লোক তো ডাক্তারি করতে পারবে না। সেখানে পড়তে হবে, খাটতে হবে, ল্যাবওয়ার্ক রয়েছে। লাইব্রেরি যেতে হবে। অভিনয় তো তা নয়, ‘আমি অভিনেতা’ বলে শুরু করে দিলেই হয়ে যাবে, সহজ কাজ হয়ে গেছে। কিচ্ছু করতে হয় না অভিনয় করতে গেলে এই ধারণা তৈরি হয়েছে। বিতর্ক, ব্যথা সব সেখান থেকেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anirban Bhattacharya Actor Social Media
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE