সৌমিত্র জেঠু চলে যাওয়ার পর থেকে শুধু স্মৃতিগুলো ফিরে ফিরে আসছে।
প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। মেনে নিতে পারিনি, সৌমিত্র জেঠু নেই।
একটা গানের শ্যুটিং চলছিল। ঠিক সেই সময় ফ্লোরে খবর এল। তারপর ফোরাম থেকে যখন বলা হয় ৩টের মধ্যে প্যাক আপ করে ফেলতে হবে, আমি বাড়ি চলে আসি। আমার পরিচালক এবং ডিওপির সঙ্গে তার পর সারাক্ষণ চুপচাপ বসেছিলাম। কোনও কথা বলতে পারিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে নিয়ে লেখার মতো মনের অবস্থা ছিল না তখন। শুধু ভেবে গিয়েছি। মানুষটা নেই, এ কথা বিশ্বাস হচ্ছিল না।
‘ব্রহ্মা জানেন’-এর সময়ও দেখা হয়েছিল ওঁর সঙ্গে। মহিলাদের ঋতুস্রাব, সামাজিক কুসংস্কার আরও কত কিছু নিয়ে কথা হয়েছিল। অনেক কথা বলেছিলেন সৌমিত্র জেঠু। একদম সুস্থ সবল ছিলেন তখন। ওঁকে দেখে মনেই হয়নি, এ ভাবে চলে যেতে পারেন। কাজ-প্রিয় ছিলেন খুব। কোভিডের সময়ও পরমদার ছবির জন্য শ্যুটিং করেছেন। কী ভীষণ প্রাণবন্ত! এ রকম মানুষের কি মৃত্যু হয়? ঠিক জানা নেই! বারে বারে মনে হচ্ছে, তিনি এখনও আমাদের মধ্যে আছেন। গতকাল যখন ওঁকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখছিলাম, মনে হচ্ছিল একজন জীবিত মানুষের অবিচুয়ারি লিখছি। অজস্র কাজের মধ্যে দিয়ে তো তিনি বেঁচে রয়েছেন।
মনে পড়ছে আমার, একটি চ্যানেলের জন্য সৌমিত্র জেঠুর সাক্ষাৎকার নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। আগে একসঙ্গে নাটক করেছি, তবে সেদিনই প্রথম তাঁকে এত কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু সাক্ষাৎকার যে কখন আড্ডা হয়ে গেল বুঝতে পারিনি। প্রায় দু’ঘণ্টা কথা বলেছিলাম। আমরা তাঁকে বলেছিলাম শরীর খারাপ লাগলে আমাদের জানাতে, আমরা শ্যুটিং বন্ধ করে দেব। কিন্তু সৌমিত্র জেঠু খুব আগ্রহ নিয়ে পুরো শ্যুটিং শেষ করেছিলেন। সে দিন শুধু অভিনেতা সৌমিত্রকে নয়, মানুষ সৌমিত্রকে দেখেছিলাম। কী সহজ ভাবে কথা বলতেন! ধৈর্য নিয়ে আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: লাইমলাইট থেকে সরে আলোর উৎসব বাড়ির কর্মচারীদের সঙ্গে কাটালেন রণবীর-আলিয়া
এর পর যত বারই দেখা হয়েছে খুব স্নেহ করে, ভালবেসে কথা বলেছেন। এটা ঠিকই সৌমিত্র জেঠুর সঙ্গে নাটকে পার্ট করিনি। আমাদের একটি নাটকের সূত্রধর ছিলেন তিনি। তবে তাঁর সঙ্গে কাজ করাটা আমার জীবনে সবচেয়ে বড় পাওনা। এত কাজ, এত সম্মান পাওয়ার পরেও অহংকারের লেশটুকুও দেখিনি তাঁর মধ্যে। একেবারেই মাটির মানুষ ছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: দ্বিতীয় বিয়ের পরেও প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন বলিউডে ব্যর্থ অভিষেকের এই নায়িকা
সৌমিত্র জেঠু চলে যাওয়ার পর থেকে শুধু এই স্মৃতিগুলো ফিরে ফিরে আসছে। কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে, খুব কাছের কেউ চলে গেল। কত কিছু শিখিয়েছেন মানুষটা। শেষ নিশ্বাস অবধি কাজ করেছেন। তাঁর এই শিক্ষা সারাজীবন আমার সঙ্গে থাকবে। সহকর্মীদের বলছিলাম, জীবনের শেষদিন পর্যন্ত কাজ করব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy