Advertisement
E-Paper

জয়ের স্মৃতি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে, কী করে এখনই দ্বিতীয় বিয়ের কথা ভাবব? মুখ খুললেন অঙ্কিতা

“অনন্যাদি আমার বড় দিদির মতো। কাল পাশে ছিলেন বলে সমস্ত কাজ নির্বিঘ্নে মিটেছে। আমার তো মা নেই। গত কাল দিদি সেই জায়গা নিয়েছিলেন।”

অঙ্কিতা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২৫ ২০:০৭
জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দ্বিতীয় স্ত্রী অঙ্কিতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দ্বিতীয় স্ত্রী অঙ্কিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটা মানুষ যেন কর্পূরের মতো উবে গেল! নেই, নেই, কোথাও নেই! হাজার চাইলেও তাকে দেখতে পাব না, স্পর্শ করতে পারব না! কণ্ঠস্বরটাও আর কানে বাজবে না। বিরাট বাড়ি আমাদের। সেখানে মানুষ বলতে এখন আমি আর অসুস্থ শাশুড়ি মা। আপনাদের জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা। বাড়িটা খাঁ খাঁ করছে। অদ্ভুত শূন্যতা ক্রমশ গ্রাস করছে যেন আমায়...।

হাসপাতালে যখন ভর্তি করলাম, তখনও আমাদের সকলের আশা, জয় ঠিক ফিরে আসবে। ও তো বাঁচতে ভালবাসত! কিন্তু অবস্থা ক্রমশই খারাপ হচ্ছিল। সোমবার সকালে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানালেন, অবস্থা ভাল নয়। আমরা গিয়ে দেখি ওঁরা পেসমেকার বসানোর চেষ্টা করছেন! সে সবই ব্যর্থ। চলে গেল জয়।

আমি যখন স্কুলে পড়ি জয় তখন অভিনেতা। মায়ের কাছে গল্প শুনেছি। পরে বড় হয়ে ওর ছবি দেখেছি। আমাদের যখন বিয়ে হয় তখন ও শুধুই নেতা, জনদরদি নেতা। স্পষ্ট কথা বলতে পছন্দ করা এক মানুষ, যার কথায় অনেক সময়েই বিতর্ক দানা বেঁধেছে। কিন্তু মানুষটা খারাপ নন! আদ্যোপান্ত মানবিক চেহারা দেখে এসেছি ওর। লোকের ভাল করার জন্য পাগল। কিন্তু নিজের ভাল বুঝত কই?

বিয়ের আগে থেকে আমরা পরস্পরকে চিনতাম, জানতাম। যখনই বিপদে পড়েছি, জয় ঢাল হয়ে এসে আগলেছে আমাদের। খুব নির্ভর করতাম ওর উপরে। এ বার আমি কার উপরে নির্ভর করব?

বিয়ের পর জয় এবং তাঁর বাবার সঙ্গে অঙ্কিতা।

বিয়ের পর জয় এবং তাঁর বাবার সঙ্গে অঙ্কিতা। ছবি: সংগৃহীত।

একা জয় নয়, ওর বাবা মানে আমার শ্বশুরমশাই যেন সাক্ষাৎ আমার নিজের বাবা। আমাদের বয়সের অনেকটা পার্থক্য। ওর এখন ৬২। আমার এখন ৩৩। শ্বশুরমশাই কোনও দিন এই ব্যবধান বুঝতে দেননি। যেমন বুঝতে দেয়নি জয়। অনেক ছোট আমি। কিন্তু খুব সম্মান দেখাত। আমিও সেটাও ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করেছি। হয়তো ওর আন্তরিক ব্যবহার কোনও দিন বুঝতে দেয়নি, আমি ওর দ্বিতীয় স্ত্রী। অথচ আমার এটাই প্রথম বিয়ে।

অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর জয় খুব একা হয়ে পড়েছিল। সে সময় ওর পাশে থাকার চেষ্টা করেছিলাম। মনের আদানপ্রদানের সেই শুরু। ২০১৯-এ বিয়ে। ২০২৫-এর ২৫ অগস্ট পর্যন্ত আমরা দম্পতি ছিলাম, সত্যিকারের সুখী দম্পতি। অনন্যাদি মাঝেমধ্যে জয়ের সঙ্গে কথা বলতেন। খোঁজ নিতেন। এমনও হয়েছে, আমরা তিন জনে একসঙ্গে গল্প করেছি। যেন তিন বন্ধু। জয় কোনও দিন অনন্যাদির কথা লুকোননি বলেই হয়তো আমারও কোনও অস্বস্তি কাজ করেনি। আর গত কাল দিদি যা করলেন, আজীবন মনে রাখব। উনি ‘বড় দিদি’র মতো সারা ক্ষণ পাশে থেকেছেন, আমায় আগলেছেন। আমার মা থাকলে এ ভাবেই আগলাত। অনন্যাদি না থাকলে সব কাজ আদৌ কি এত নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হত?

এত দিন জয়কে নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। শ্বশুরমশাই বড় ভরসা করে তাঁর ছেলেকে আমার কাছে রেখে গিয়েছিলেন। তার উপরে আমার ননদ বিদেশে থাকেন। ফলে, স্বামী-সংসার, শাশুড়ি, শ্বশুরমশাইয়ের গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্ব— সব আমার কাঁধে। মঙ্গলবার হঠাৎ করে একটি দায়িত্ব যেন কমে গেল! এখন আমার সঙ্গী জয়ের স্মৃতি, শাশুড়ি মা আর গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্ব। অনেকেই দ্বিতীয় বিয়ের কথা বলছেন। আমি দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারছি না। মাত্র একদিন আগে চলে গিয়েছে জয়। ওর স্মৃতি আমায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে। এখনই কী করে দ্বিতীয় বিয়ের কথা ভাবব? যতই স্বামী না থাকুন, সংসার তো সেই রয়েই গেল।

Joy Banerjee Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy