বর্তমানে টলিউডে দুটো পরিচালক গিল্ড। একটি, পরিচালকদের পুরোনো গিল্ড ইআইএমপিডিএ (ইস্ট ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন)। অন্যটি, সেই গিল্ড ভেঙে বেরিয়ে আসা পরিচালকদের নিয়ে তৈরি নতুন গিল্ড ডিএইআই (ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া)। পুরনো পরিচালক গিল্ডের কোষাধ্যক্ষ শুভম দাস এর আগে আনন্দবাজার ডট কমকে বলেছিলেন, “আমাদের এই সংগঠন শতাব্দীপ্রাচীন। সত্যজিৎ রায়, তরুণ মজুমদার, অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়, তপন সিংহের মতো পরিচালকেরা এই সংগঠনের সদস্য ছিলেন। বছর পাঁচেক আগে সম্ভবত কোনও মতানৈক্য থেকেই নতুন পরিচালক সংগঠনের জন্ম। যেখানে যোগ দেন বহু পরিচালক।”
সম্প্রতি, ইআইএমপিডিএ নতুন করে যেন জেগে উঠেছে। সদ্য সংগঠনের সম্মাননীয় সভাপতি, কার্যকরী সভাপতি, উপদেষ্টা প্রধান পদে বেছে নেওয়া হয়েছে যথাক্রমে স্বপন সাহা, অনুপ সেনগুপ্ত, স্বরূপ বিশ্বাসকে। প্রসঙ্গত, স্বরূপ ফেডারেশন সভাপতিও। পরিচালক সংগঠনের বিশেষ পদে আসীন হয়েই তিনি নাকি জানিয়েছেন, ফেডারেশন আগামী দিনে পুরনো গিল্ড-এর সদস্যদের সমর্থন জানাবে। তাঁদের সব রকম সুবিধা দেবে, যা নাকি নতুন সংগঠনের সদস্যেরা পাবেন না। তাঁদের পরিচয়পত্রকে মান্যতা দেবে না ফেডারেশন। খবর, তার পর থেকেই নাকি নতুন গিল্ড ছেড়ে পুরনো গিল্ড-এ ফিরেছেন বেশ কিছু পরিচালক। এঁদের মধ্যে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, অরিন্দম শীল, রাহুল মুখোপাধ্যায় অন্যতম।
টলিউডে এই দ্বিধাবিভক্ত পরিচালক গিল্ড-এর ফলাফল কী? ভবিষ্যৎই বা কী?
জানতে আনন্দবাজার ডট কম যোগাযোগ করেছিল বিধায়ক-পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে। তিনি তখন মালদহের পথে রওনা দিয়েছেন। রাজ নতুন পরিচালক গিল্ডের অন্যতম সদস্য। যেতে যেতেই ফোনে বললেন, “যাঁরা মনে করেছেন ভাগ করলে সুবিধা হবে তাঁরা ভাগ করেছেন। পুরনো সংগঠনে ফিরলে সুবিধে হবে ভেবে যাঁরা নতুন গিল্ড ছাড়ছেন সেটাও একান্তই তাঁদের ব্যক্তিগত ভাবনা। প্রত্যেকের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাতে হবে। কোনও সমস্যা নেই তাতে।” এ দিকে যে শোনা যাচ্ছে, ফেডারেশন নাকি নতুন গিল্ডের সঙ্গে কোনও রকম সহযোগিতা, কাজ কিছুই করবে না।
সত্যিই এ রকম কিছু হলে ডিএইআই-এর সদস্য পরিচালকদের ভবিষ্যৎ কী?
এই প্রশ্নে কিন্তু রাজ বিন্দুমাত্র বিচলিত নন। তাঁর পাল্টা মত, ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা উচিত। দেখা উচিত আগামী দিনে বিষয়টি কী দাঁড়াচ্ছে। পুরোটাই সময়ের উপর ছেড়ে দেওয়া বরং বুদ্ধিমানের কাজ। একটু থেমে আত্মবিশ্বাসী পরিচালকের দাবি, “কেউ কাজ করবে কি না করবে সেটা সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখানে কেউ কাউকে কাজ এনে দেয় না। বরং টিকে থাকতে নিজেকেই নিজের কাজ জোগাড় করে নিতে হয়।” এই প্রসঙ্গে তিনি নিজের উদাহরণ দিলেন। বললেন, “এই যে আমি রাজ চক্রবর্তী হয়ে উঠেছি, সেটা কিন্তু কেউ বানায়নি। দর্শকের আমার ছবি ভাল লাগে বলেই হয়েছি। এর পিছনে আমার অক্লান্ত পরিশ্রম, একাগ্রতা, চেষ্টা রয়েছে। আজও আমি সেটাই প্রতি মুহূর্তে করে চলেছি।”
এই জায়গা থেকেই বিধায়ক-পরিচালকের দৃঢ় বিশ্বাস, “আমার মনে হয় না, কোনও ব্যক্তি কারও কাজ কেড়ে নিতে পারবে। টলিউডে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের যোগ্যতায় কাজ করেন। কেউ যদি মনে করেন কারও কাজ বন্ধ করে দেবেন বা কেড়ে নেবেন তা হলে তিনি খুব ভুল করছেন।” তাঁর মতে, সাময়িক ভাবে কারও পেশাজীবনে সমস্যা তৈরি করা হয়তো সম্ভব, কিন্তু বরাবরের জন্য নয়। সেই ব্যক্তি ঠিক দ্বিতীয় পথ খুঁজে নেবেন। ঠিক যে ভাবে বহমান নদীর পথে বাধা সৃষ্টি হলে সে চলার পথ বদলে ফেলে। তিনি এ-ও বলেন, “কেউ কারও ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে না। অন্য কারও নয়, নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে সকলের আগে ভাবতে হবে।”
আরও পড়ুন:
পৃথিবী বৃত্তাকার। তার মধ্যে একটি ছোট্ট জায়গায় বাংলা বিনোদন দুনিয়ার অবস্থান। এই স্বল্প পরিসরের মধ্যেও ভাগাভাগি! কতটা কাম্য সেটা?
রাজ কিন্তু এর থেকেও ইতিবাচকতা খুঁজে নিয়েছেন। তাঁর যুক্তি বলছে, “ভাগাভাগি থাকতেই পারে, মতবিরোধও থাকে। সংসারেও এ সব দেখা যায়। কিন্তু সব কিছুরই গঠনমূলক দিক থাকলে ভাল হয়।” উদাহরণ হিসাবে বলেন, “সংসারে মা-বাবা দু’জনেরই সমান গুরুত্ব। কোনও একজনের প্রাধান্য কাম্য নয়। মা-বাবা উভয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে যদি সংসার চলে তা হলেই সেটি সর্বাঙ্গীন সুন্দর হয়। তাই ১০টা গিল্ড থাকলেও কোনও সমস্যা নেই। ভাল কাজ করাটাই যেন সকলের লক্ষ্য হয়”, পরামর্শ রাজের। আগামী দিনে কি দুটো গিল্ড মিলেমিশে ফের একটিতে পরিণত হবে? এ বার রাজের মুখে কুলুপ। জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।