নির্বাসনের গানে অনুপম, অনিন্দ্য, চন্দ্রিল, শ্রীজাত।
শিল্প অতিমারি বোঝে না। শিল্পীর অনুভব শারীরিক দিক থেকে লকডাউন মানলেও মন থেকে একেবারেই মানতে পারে না। তারই প্রতিফলন আরও একবার অনুপম রায়ের গানে। লকডাউনের প্রথমদিকে তিনি স্ত্রী পিয়া চক্রবর্তীকে নিয়ে ‘মাটির রং’ ভিডিয়ো মিউজিক উপহার দিয়েছিলেন। ‘আনলক ১’ চালু হতেই তিন বন্ধু চন্দ্রিল ভট্টাচার্য, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে তাঁর দ্বিতীয় নিবেদন, ‘নিবার্সনের গান’।
গান পোস্টের দিন দুই আগে শিল্পী তিন গীতিকারের আড্ডার ছবি সোশ্যালে পোস্ট করে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ‘তিন ইয়ারি কথা’র বদলে খুব শিগগিরি ‘চতুষ্কোণ’ দেখতে পাবেন অনুরাগীরা।
সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে গিয়ে দূরে থেকেও এত কাছে হলেন কী করে চারমাথা? প্রশ্ন করতেই নরম গলায় প্রত্যুত্তরে অনুপম, ‘‘পুরো কৃতিত্ব লকডাউনের (হাসি)। করোনার সৌজন্যে দুম করে সব কনসার্ট ক্যান্সেল। ছ’টি ছবির কাজ বন্ধ। বদ্ধ হয়ে শুধুই ফোনাফুনি বন্ধুমহলে। সেই থেকেই এক রাতে শ্রীজাতদাকে বললাম, আমরা সারাক্ষণ যে যার মতো। এই লকডাউনে এক হয়েও তো কিছু সৃষ্টি করতে পারি!” সেই থেকেই কাজ শুরু।
আরও পড়ুন: কাশ্মীরে জঙ্গিদের অস্ত্র দিতে আসা পাকিস্তানি ড্রোন গুলি করে নামাল বিএসএফ
শ্রীজাত রাজি হতেই অনুপম চার লাইন হোয়াটসঅ্যাপ করে পাঠালেন। শ্রীজাত চার লাইন লিখে পাঠান চন্দ্রিলকে। সেখান থেকে গান পৌঁছোয় অনিন্দ্যর হাতে।
একটি গানে চারজনের ভাবনা, অনুভূতি মেলানো যায়? ‘‘লকডাউনের বন্দি জীবনে শুধু আমরা চারজন নই, সবাই তেতো। শরীর-মন অবসন্ন। সবসময়েই অলস ভাব, কাজের প্রতি যেন অনীহা। সেই অনুভূতিগুলোই একাকার গানের ছত্রে ছত্রে। তাই মিলতে কোনও অসুবিধে হয়নি’’, এক হওয়ার রহস্য ফাঁস করলেন সুরকার-শিল্পী।
মানতেই হবে, সংক্রমণ থেকে দূরে থাকতে গিয়ে ক্রমশ একা হয়ে যাওয়া, নিজের মনে ভাঙন ধরার অনুভূতি, সেই ভাবনা তিন সেরা চন্দ্রিল, অনিন্দ্য, শ্রীজাত-র কলমে মিলতেই তাতে সুর এবং কণ্ঠ দিলেন অনুপম। গানের হারমোনির যোগ্য দোসর অনুপম-জায়া পিয়া। স্টুডিও বন্ধ থাকায় গিটারে সঙ্গত করেছেন শিল্পীর এক ব্রাজিলীয় বন্ধু।
অনুপমের নতুন গান বলছে, পরতে পরতে, ‘বিকেলের এক প্রান্তে তুমি দাঁড়িয়ে/ আমার ছায়া একদিন ছোঁবে তোমায়... নির্বাসনে চুবিয়ে নিয়ে মাথা/ক্রমশ যেন যাচ্ছি চলে কোমায়...’ এমন অনুভূতি শিল্পী মনে কতটা ছাপ ফেলেছিল?শিল্পীর কৈফিয়ৎ, “হাতে কাজ নেই। সারাক্ষণ বিষণ্ণ অনুভূতি। কাজের প্রতি আগ্রহও নেই। নিজের মতো করে গুছিয়ে বাজার করতে বেরতাম, সেটাও বন্ধ। বলে বোঝাতে পারব না একেক সময় কী মারাত্মক অসহায় লাগত। মনে হত, দম যেন আটকে গেছে।”
আরও পড়ুন: লাদাখে সীমান্ত পেরিয়ে ঢোকেইনি কেউ, সর্বদল বৈঠকে মোদী
লকডাউনে লেখা গান আনলকে মুক্তি পেল। শিল্পীর ঝুলি থেকে আর কী কী ক্রমশ প্রকাশ্য আগামী দিনে? হাসিমাখা জবাব, “নানা লেখকের বই পড়েছি। দুটো ইংরেজি গান প্রকাশ করেছি। আর খান কুড়ি গান তৈরি করে রেখেছি আগাম। আগামী ছবিতে বিক্রি করতে পারব। এমনিতেই গান সবসময় ব্যাঙ্কিংয়ে থাকে। সেটা আরও জোরালো হল। এমনিতেই তিনমাস ধরে কোনও উইথড্রল নেই। আপাতত তাই পুরোটাই ডিপোজিট।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy