দর্শকের প্রশংসা পাচ্ছে অনীক দত্তের ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’, শুভ্রজিৎ মিত্রের ‘দেবী চৌধুরাণী’। প্রেক্ষাগৃহের মালিক এবং পরিবেশকদের বক্তব্য অনুযায়ী, পুজোর ছবিমুক্তির প্রতিযোগিতায় না থেকেও ছবি দু’টির ব্যবসায়িক সাফল্য বাড়ছে। স্বাভাবিক ভাবেই খুশির আমেজ ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’, ‘দেবী চৌধুরাণী’র সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকের মনে।
এই সাফল্যের বড় অংশের দাবিদার রোজা পারমিতা দে, ফিরদৌসি বসু। সে কথা ক’জন জানেন?
দর্শক জানেন না, অনীকের ছবির নায়িকা কাজী নওসাবা আহমেদের হয়ে পর্দায় কণ্ঠ দিয়েছেন অভিনেত্রী রোজা পারমিতা দে। শুভ্রজিতের ছবিতে বিবৃতি চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ‘নিশি’ চরিত্রে শোনা গিয়েছে মঞ্চ এবং পর্দার অভিনেত্রী ফিরদৌসি বসুর কণ্ঠ! কোনওমতে শুটিং শেষ করলেও ভিসা সমস্যার কারণে আর ডাবিং করতে এ দেশে আসতে পারেননি বাংলাদেশের নওসাবা। বিবৃতির মুখে স্পষ্ট বাঙাল উচ্চারণের জন্য পরিচালক বেছে নেন ফিরদৌসিকে।
অনীকের ছবিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন রোজা। নায়িকার ‘ঠাকুমা’ তিনি। একই সঙ্গে ছবির ডাবিং আর্টিস্টও। কী ভাবে দুটো দায়িত্বপালনের ডাক পেলেন? আনন্দবাজার ডট কম প্রশ্ন করেছিল তাঁকে। রোজার কথায়, “নওসাবা যখন আসতে পারলেন না তখন মাথায় হাত পড়েছিল অনীকদার। এ দিকে, আমি পূর্ববঙ্গীয়। ফলে, ওখানকার অঞ্চলভেদে বাঙাল উচ্চারণ মোটমুটি জানা আছে। সে কথা জানার পর পরিচালক আমায় অনুরোধ জানান।” ঢাকা শহরের মানুষজন পুরোপুরি বাঙাল ভাষা বলেন না। তাঁদের কথা বলার মধ্যে কিছুটা বাঙাল টান থাকে। রোজাকে সে ভাবেই সংলাপ বলার কথা জানিয়েছিলেন অনীক।
দুই নেপথ্য নায়িকা রোজা পারমিতা দে, ফিরদৌসি বসু। ছবি: ফেসবুক।
দর্শক ধরতেও পারেননি, নায়িকার কণ্ঠবদল হয়ে গিয়েছে!
ফিরদৌসিরও শুভ্রজিতের ছবিতে অভিনয়ের কথা ছিল। শেষ মুহূর্তে শারীরিক অসুস্থতার কারণে সেটি হয়নি। আচমকাই একদিন পরিচালকের ফোন। ফিরদৌসিকে বিবৃতির হয়ে পর্দায় কণ্ঠ দিতে হবে। “শুভ্রজিৎদার অনুরোধ, ছোট্ট সংলাপ রেকর্ড করে পাঠাতে হবে। পরিচালক শুনবেন। পছন্দ হলে আমার কাঁধে বড় দায়িত্ব আসতে চলেছে। রেকর্ডিং পাঠানোর কিছু ক্ষণের মধ্যে পরিচালক আমায় বেছে নেন।” শুভ্রজিতের তত্ত্বাবধানে এর পর বিবৃতির সমস্ত সংলাপ ডাবিং করেন অভিনেত্রী। “বিবৃতির তুলনায় আমার কণ্ঠস্বর ভারী। ফলে, সংলাপ উচ্চারণের সময় সে দিকে খেয়াল রাখতে হয়েছিল”, বক্তব্য ফিরদৌসির। কণ্ঠস্বরে অভিনয় ফোটাতে গিয়ে পরিশ্রম করতে হয়েছে তাঁকেও। তবে কাজ সম্পূর্ণ করে তৃপ্তি পেয়েছেন তিনি।
একজন নায়িকার, অন্য জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের কণ্ঠস্বর। দুটো ছবিতে দুই অভিনেত্রীই দর্শকের প্রশংসা কুড়োচ্ছেন। ঠিক যেমন, ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘বাড়িওয়ালি’ ছবিতে কিরণ খেরের হয়ে কণ্ঠ দিয়েছিলেন প্রয়াত অভিনেত্রী রীতা কয়রাল। অথচ, জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিলেন কিরণ খের! এখন কি আফসোসে ভুগছেন রোজা, ফিরদৌসি? তাঁরাও তো এই চরিত্র পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে পারতেন!
ফিরদৌসির কণ্ঠে কোনও আফসোস ধরা পড়েনি। মৃদু হেসে তাঁর যুক্তি, “আমার পেশাজীবন শুরুই করেছিলাম ডাবিং আর্টিস্ট হিসাবে। স্বীকৃতি না পাওয়া তাই অভ্যাস করে নিয়েছি।” রোজা পারমিতার দাবি, “কাজটা খুব মন দিয়ে করেছি। আলাদা উত্তেজনা কাজ করছিল তখন। আমার জন্য নওসাবার অভিনয় যেন নিন্দা না কুড়োয়, শুধু এটাই মনে হচ্ছিল তখন।” তবে অনীক নাকি রোজার কণ্ঠ শুনে আফসোস করেছেন, “নওসাবাকে না নিয়ে কেন আগে তোকে নিলাম না!”