Advertisement
E-Paper

শব্দবাজির দাপটে ‘অসহায়’ তারকারা! কেউ আগেই থানায় জানিয়েছেন, কেউ হতাশায় প্রশাসনকে বলা বন্ধ করেছেন

দীপাবলিতে শব্দবাজির উপর রাশ টানতে বলা হলে সমাজমাধ্যমে একটি বিষয় নিয়ে বিতর্ক লক্ষ করা যায়। নেটাগরিকের একাংশ থেকে প্রশ্ন ধেয়ে আসে, কেন অন্য উৎসবে বাজির উপর এমন নিষেধাজ্ঞা টানা হয় না? ভেদাভেদ প্রসঙ্গে উঠে আসে বিতর্ক।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৫ ১৬:০৫
শব্দবাজির দাপট নিয়ে কী বললেন রূপাঞ্জনা, লিলি, দোলন ও রাজ।

শব্দবাজির দাপট নিয়ে কী বললেন রূপাঞ্জনা, লিলি, দোলন ও রাজ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

কালীপুজো ও দীপাবলিতে আলোয় সেজে ওঠে পথঘাট। কিন্তু প্রতি বছর এই সময়টায় ভয় ধরায় শব্দবাজির দাপট। প্রতিবছরই প্রশাসনের তরফ থেকে শব্দবাজির উপর থাকে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু নিয়মের বেড়া ভেঙে চলতেই থাকে শব্দদাপট। এর জেরে নাজেহাল হন প্রবীণ, শিশু, অসুস্থ মানুষ এবং পশুপাখিরাও। গত বছর এমনই দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা হয়েছিল রূপাঞ্জনা মিত্রের। এ বার কি আগে থেকেই নিজের এলাকায় ব্যবস্থা নিয়েছেন অভিনেত্রী?

প্রতি বছরের মতো এ বছরেও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঠিক করে দেওয়া হয়েছে বাজি পোড়ানোর সময় এবং শব্দের মাত্রা। রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বাজি পোড়ানো যাবে। কিন্তু সেই নিয়মের তোয়াক্কা কি করছে কেউ? আনন্দবাজার ডট কমকে রূপাঞ্জনা জানান, প্রতি বছরই মানুষকে সচেতন করে চলেছে প্রশাসন। কিন্তু তাও শব্দবাজি থেকে নিস্তার মেলে না। তাই গত বছর কালীপুজোর সময়ে অতিষ্ঠ হয়ে ফেসবুকে লাইভ করে একটি ঘটনা তুলে ধরেছিলেন তিনি।

দক্ষিণ কলকাতার গাঙ্গুলিবাগান এলাকায় থাকেন রূপাঞ্জনা। তিনি বলেছেন, “পথকুকুরদের তো সমস্যা হয় বটেই। সেই সঙ্গে বহু বয়স্ক মানুষ থাকেন। অনেকের হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা হয়। আমাদের এলাকাতেই রয়েছেন বহু মানুষ, যাঁরা বার্ধক্যের নানা সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। এই সময়টায় তাঁরা ঘরে টিকতে পারেন না।”

অভিনেত্রীর পাশের বাড়িতেই ধুমধাম করে কালীপুজো হয়। তারস্বরে গান চালানো হয় এবং নির্দিষ্ট শব্দমাত্রার উপরে শব্দবাজি ফাটানো হয় বলে অভিযোগ রূপাঞ্জনার। তাই এই বার আগে থেকেই স্থানীয় থানায় বিষয়টি জানিয়ে রেখেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “প্রত্যেকে স্থানীয় থানায় জানিয়ে রাখুন। সেখান থেকে সদুত্তর না মিললে, সেটা নিয়েও কথা বলতে হবে। সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে।”

বর্ষীয়ান অভিনেত্রী লিলি চক্রবর্তী মনে করেন, হাজার বার সচেতন করলেও কেউ শোনে না। তাই কোথাও অভিযোগ জানিয়েও কিছু লাভ হয় না। অভিনেত্রী থাকেন দমদম নাগেরবাজার এলাকায়। কালীপুজোর সময়ে এই এলাকা থাকে সরগরম। বাজি প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, “এখানেও দিন হোক বা রাত, বাজি ফাটতেই থাকে প্রতি বছরই। যদিও এ বার এখনও সেই প্রবল পর্যায় পৌঁছয়নি। তবে কালীপুজোর দিন সব সীমা ছাড়িয়ে যায়। ভাল লাগে না এত শব্দ। কিন্তু কে শোনে কার কথা! সৌভাগ্যবশত আমার বাড়ির একদম সামনে এটা হয় না। একটু দূরে বেশ ভালই শব্দবাজি ফাটানো হয়।”

কখনও প্রশাসনকে জানানোর চেষ্টা করেছেন? উত্তরে লিলির প্রশ্ন, “কাকে বলব? কাউন্সিলরকে জানালে তিনি বলেন, ‘পুজোর সময়ে বাচ্চারা এমন করছে! বললে কি ওরা শুনবে? তাও আমরা বারণ করব।’ অথচ এতে বয়স্ক মানুষ থেকে শুরু করে পশুদেরও কত সমস্যা হয়!” তাই কালীপুজোয় বা়ড়ি থেকে একেবারেই বেরোন না লিলি।

দক্ষিণ কলকাতার আবাসনে থাকেন দীপঙ্কর দে ও দোলন রায়। নিয়মিত চিকিৎসার মধ্যে থাকেন বর্ষীয়ান অভিনেতা। তবে আবাসনের মানুষ সচেতন বলে শব্দবাজির দাপট সইতে হয় না তাঁদের। দোলন বলেন, “এখানে বাজি পোড়ানোর একটা আলাদা জায়গা রয়েছে। তাই খুব অসুবিধা হয় না। কিন্তু কিছু জায়গায় এই শব্দবাজির দাপটে মানুষ থেকে পশু সকলকেই নাজেহাল হতে হয়। বিজয়ার পর থেকে শুরু হয়ে যায় বাজির দাপট।’’

তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশ প্রশাসনও বলে বলে হয়রান। নিজেরা সচেতন না হলে কিচ্ছু করার নেই। পুলিশ তো আর মন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ভয় দেখিয়ে বন্ধ করতে হবে কেন! মানুষকে তো একটু সহানুভূতিশীল হতে হবে।”

কালীপুজোর সময়টা বিশেষ করে কঠিন হয়ে ওঠে পোষ্যদের ক্ষেত্রে। একই অবস্থার কথা জানালেন রাজ চক্রবর্তী। তাঁর বাড়িতেও রয়েছে পোষ্য। পরিচালক বলেন, “আমাদের বাড়িতে একাধিক পোষ্য আছে। শব্দবাজিতে ওদের খুব কষ্ট হয়। বুঝতে পারি। বাইরে বাজি পোড়ে। ওরা জড়োসড়ো হয়ে ঘরের এক কোণে লুকিয়ে থাকে। কিছুতেই সামনে আসতে চায় না। তাই ওদের কথা ভেবেও বিশেষ করে শব্দবাজি পোড়ানো বন্ধ করে দিয়েছি।”

তবে শুধু শব্দবাজি নয়। পোষ্যদের কথা মাথায় রেখে আলোর বাজি পোড়ানোতেও রাশ টেনেছেন তিনি। রাজ বলেন, “এখন আর আমরা কোনও বাজিই পোড়াই না। উৎসবের দিনে আমার আনন্দ যাতে অন্যের নিরানন্দ বা কষ্টের কারণ না হয়ে ওঠে সে দিকটা খেয়াল রাখার চেষ্টা করি।”

দীপাবলিতে শব্দবাজির উপর রাশ টানতে বলা হলে সমাজমাধ্যমে একটি বিষয় নিয়ে বিতর্ক লক্ষ করা যায়। নেটাগরিকের একাংশ থেকে প্রশ্ন ধেয়ে আসে, কেন অন্য উৎসবে বাজির উপর এমন নিষেধাজ্ঞা টানা হয় না? এই প্রশ্নের জেরে ভেদাভেদের প্রসঙ্গ উঠে আসে। এই প্রসঙ্গে রূপাঞ্জনার স্পষ্ট জবাব, “যারা এই বিষয়েও ভেদাভেদ খুঁজে পায়, তারা মূর্খের স্বর্গে বাস করে। আমি শুনিনি, আর কোনও উৎসবে অন্য প্রাণীদের বিরক্ত করে মানুষ নিজে আনন্দ করে কি না। দেবদেবীর পুজো তো করতেই হবে। কিন্তু মনের মধ্যেও তো ঈশ্বরের বাস রয়েছে। মন পরিষ্কার রাখতে হবে। মানুষকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।”

চলতি বছর একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে দেখা গিয়েছিল রূপাঞ্জনাকে। এ বার কি তাই তাঁর কাঁধেও রয়েছে কিছুটা দায়িত্ব? অভিনেত্রী জানান, পাড়ার বহু মানুষ ফোন করে তাঁকে শব্দবাজি নিয়ে সচেতন করতে বলেছেন। তাই এ বার আরও একটু বেশি সতর্ক করার চেষ্টা করছেন তিনি।

Kalipujo 2025 Firecracker Rupanjana Mitra Dolon Roy Raj Chakrabarty Lily Chakraborty
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy