Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Tahsan Rahman Khan

সৃজিত আমার খুব প্রিয়, মিথিলা ও আয়রার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হয়: তাহসান

সত্যজিৎ রায়ের মতো ‘পলিম্যাথ’ হতে চাওয়া তাহসান রহমান খান নাকি বড্ড মুখচোরা। নিন্দুকেরা বলেন, ইচ্ছে করেই তিনি গুটিয়ে রাখেন নিজেকে। আসলে কি তাই? আনন্দবাজার ডিজিটালের কাছে এই প্রথম মুখ খুললেন তাহসান।

তাহসান রহমান খান।

তাহসান রহমান খান।

সঞ্চারী কর
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২১ ১৬:৪২
Share: Save:

নিত্যনতুন বিতর্ক আর গসিপে মোড়া পেজ থ্রি থেকে বেশ খানিকটা ‘দূরে দাঁড়িয়ে’ তিনি। ২০১৭ সালে স্ত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলার সঙ্গে ১১ বছরের দাম্পত্য ভাঙার পরেও কখনও শোনা যায়নি নতুন সম্পর্কের গুঞ্জন। গান, নাটক, ছবিকে ঘিরেই আবর্তিত তাঁর জীবন। নিজের গল্প বলতে এ বার ধরেছেন কলম। সত্যজিৎ রায়ের মতো ‘পলিম্যাথ’ হতে চাওয়া তাহসান রহমান খান নাকি বড্ড মুখচোরা। নিন্দুকেরা বলেন, ইচ্ছে করেই তিনি গুটিয়ে রাখেন নিজেকে। আসলে কি তাই? আনন্দবাজার ডিজিটালের কাছে এই প্রথম মুখ খুললেন তাহসান।

প্রশ্ন: ভারতের সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলার কারণ কী?

(মৃদু হেসে) আসলে আমি একটু কম সোশ্যাল। তাই সাংবাদিক বন্ধুদের সঙ্গে সে রকম যোগাযোগ রাখতে পারি না। এ ছাড়া এখনও পর্যন্ত ভারতে গিয়ে কোনও কাজ করা হয়নি। ফলে সেখানকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও ইন্ডাস্ট্রির কারও সঙ্গে আলাপ নেই। তাই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ আসেনি।

প্রশ্ন: ভারতে আপনার এত অনুরাগী, কাজের সুযোগও এসেছে নিশ্চয়ই…

আসলে আমি যে ধরনের কাজ করতে চাই, সে ধরনের কাজের জন্য এখনও ডাক পাইনি। তাই কনসার্ট বা অভিনয়ের জন্যও যাওয়া হয়নি কখনও। তবে এখন কলকাতায় যাওয়ার একটা বড় কারণ পেয়েছি। আমার মেয়ে আয়রা সেখানে তার মায়ের সঙ্গে থাকে। তাই কলকাতা আসার জন্য আমার মন এখন উড়ছে! জীবনের এমন একটা জায়গায় আছি, কলকাতায় যে কাজই পাব, লুফে নিয়ে চলে যাব।

প্রশ্ন:কাজ ছাড়া কলকাতায় আসা যায় না?

আমার জীবনটা এতটাই কাজের মধ্যে দিয়ে কাটে যে বাইরে ঘুরতে যাওয়াটাও কাজের মাধ্যমেই হয়। গান, অভিনয়, ব্র্যান্ড এন্ডরসমেন্ট, এ সব কিছু নিয়ে এমন ভাবে সময় কেটে যায় যে কাজ ছাড়া ঘুরতে যাওয়া হয় না।

আরও পড়ুন: তারকার আলোকবৃত্ত থেকে দূরে কাটে শৈশব, স্কুল থেকেই বহিষ্কৃত হওয়ার অবস্থা হয়েছিল সারা আলি খানের

প্রশ্ন: এত কাজ নিয়ে থাকেন, কিন্তু প্রচারে তো খুব একটা দেখা যায় না?

অনেকেই আমাকে বলেন ‘স্টারডম’ ধরে রাখার জন্য আমার প্রচারে থাকা উচিত, মিডিয়ার সঙ্গেও কথা বলা উচিত। কিন্তু আমি মনে করি, কাজের মাধ্যমে ভক্তদের সঙ্গে সব চেয়ে বেশি কানেক্ট করা যায়। শুধুমাত্র খবরে থাকার জন্য কোনও কাজ করতে বা কথা বলতে আমি বিশ্বাসী নই। এ ছাড়াও, বিগত কয়েক বছরে বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম আমাকে নিয়ে এমন কিছু কথা লিখেছে, যেগুলো হয় তো আদৌ সত্যি নয়। সেই কারণে আমি আরও একটু প্রচারবিমুখ হয়ে পড়েছি।

প্রশ্ন: ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’-এ নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগল?

গত বছরই পরিচালক মোস্তফা সারওয়ার ফারুকির মনে হয়েছিল বর্তমানে পৃথিবীর যা অবস্থা, এই গল্পটা বলার শ্রেষ্ঠ সময় এখনই। ছবিটিকে সব প্রান্তে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ইংরেজি ল্যাঙ্গুয়েজ ফিল্ম হিসাবে রিলিজ করানো হচ্ছে। নওয়াজউদ্দিনের সঙ্গে কাজ করেও খুব ভাল লেগেছে। আমাদের সৌভাগ্য, এ আর রহমান এই ছবির মিউজিক করেছেন। কিন্তু অতিমারির জন্য সব হল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা আপাতত অপেক্ষা করছি। পরিস্থিতি একটু ঠিক হলে সারা পৃথিবীতে যখন হলগুলি খুলবে, তখনই ছবি রিলিজ করা হবে। আশা করি, ২০২১-এই তা সম্ভব হবে।

নওয়াজউদ্দিনের সঙ্গে কাজ করে উচ্ছ্বসিত তাহসান।

প্রশ্ন: চেনা পরিসরের বাইরে গিয়ে তো এই প্রথম কাজ?

ফারুকির সঙ্গে সেই কবে থেকে পরিচয়! বহু দিন ধরে ওঁর কাজেরও ভক্ত। এই ছবিতে অবশেষে ওঁর সঙ্গে কাজের সুযোগ আসে। আর নওয়াজউদ্দিন এক জন অসামান্য অভিনেতা। ছবিতে আমার বেশির ভাগ দৃশ্যই ওঁর সঙ্গে। কিন্তু ছবির গল্পটাই আমাকে সব থেকে বেশি আকর্ষণ করেছে।

প্রশ্ন: ভারতের আর কোন অভিনেতাকে ভাল লাগে?

ছোটবেলা থেকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে দেখে বড় হয়েছি। এ ছাড়াও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কাজ দেখেছি। খুব ভাল লাগে।

প্রশ্ন: আর পরিচালক?

আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষই সত্যজিৎ রায়ের ভক্ত। আমিও ছোটবেলা থেকে তাঁর ছবি দেখে বড় হয়েছি। আমি একটু বেশিই ভক্ত তাই। তাঁর মতো আমিও ‘পলিম্যাথ’ কনসেপ্টে বিশ্বাসী এবং নিজেও সেটাই হওয়ার চেষ্টা করি।

প্রশ্ন: আপনি সুযোগ পেলে ভারতের কোন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে চাইবেন?

আমি এ রকম রিজিড চিন্তাভাবনা করি না। আগে দেখি গল্পটা কেমন। তবে এখন সৃজিত আমার খুবই প্রিয়, কারণ আমার মেয়েরও খুব ভাল লাগে ওঁকে। যদিও আগে থেকেই ওঁর কাজ বেশ পছন্দ করতাম। এ ছাড়াও রাজ চক্রবর্তীর কাজ দেখে বেশ ভাল লেগেছে।

আরও পড়ুন: একটি ছবিতেই রাতারাতি জনপ্রিয়, মাধুরীর ঘুম কেড়ে নেওয়া সেই ফারহিন আজ বিস্মৃত

প্রশ্ন: আপনার প্রথম ছবি ‘যদি একদিন’ কিন্তু ভারতীয় নায়িকার সঙ্গেই…

হ্যাঁ। শ্রাবন্তী খুব মিষ্টি মেয়ে। শ্যুটিংয়ের প্রথম দিক থেকেই খুব ভাল বন্ধুত্ব হয়েছিল ওর সঙ্গে। এখন হয় তো যোগাযোগ রাখা হয় না। কিন্তু খুব ভাল কাজ করছে সে।

প্রশ্ন: ওঁকে নিয়ে বা অন্য তারকাদের নিয়েও তো সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ট্রোলিং হয়, আপনার ক্ষেত্রে তো উল্টো?

না না, আমিও মানুষ। আমার সব কাজ সবার ভাল লাগে না। সেটা নিয়ে নিশ্চয়ই সমালোচনা হয়। কিন্তু আমি আমার ভক্তদের ভাল লাগা-মন্দ লাগা মাথায় রেখে চলি। চেষ্টা করি তাঁদের পছন্দমতো কাজ উপহার দেওয়ার। এ ছাড়াও অনেকে বিতর্ক সৃষ্টি করে প্রচারে থাকতে ভালবাসেন। কিন্তু বিনোদন জগতের কর্মী হিসাবে মানুষকে আনন্দ দেওয়াই আমার মূল লক্ষ্য। তাই হয় তো এত বছর পরেও ‘দূরে তুমি দাঁড়িয়ে’, ‘আলো’-কে মানুষ মনে রেখেছেন এবং আমি এত ভালবাসা পাচ্ছি।

প্রশ্ন: নাটকের সংখ্যা একশো পেরলেও ছবি মাত্র একটা!

বড় পর্দার চুলচেরা বিশ্লেষণটা এমন হয় যে পারফেক্ট টিম না পেলে কাজ করতে চাই না। আমি আসলে এখনও কমার্শিয়াল ফিল্মের জন্য নিজেকে পুরোপুরি তৈরি বলে মনে করি না। তবে বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বদলাচ্ছে। আশা করি, আগামী দিনে কাজের পরিধি আরও বাড়বে।

প্রশ্ন: গায়ক তাহসান না অভিনেতা তাহসান?

আমি কাউকেই এগিয়ে রাখব না। সেটা মানুষ ঠিক করবে। আমি তাঁদের এন্টারটেন করার চেষ্টা করি। এই যেমন ধরুন লকডাউনে কাজ ছিল না সে রকম, তাই বাড়িতে বসে নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লিখে ফেললাম। আমার অভিজ্ঞতার কথা পড়ে হয় তো আমার সঙ্গে তাঁদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা আরও দৃঢ় হবে।

মেয়ে আয়রার সঙ্গে তাহসান।

প্রশ্ন: মিথিলার সঙ্গে বন্ধুত্বটা কী ভাবে বজায় রেখেছেন?

(কিছুটা ভেবে) এটা আসলে খুব কঠিন একটা প্রশ্ন। আমাদের প্রত্যেকেরই তো কিছু দোষ-গুণ আছে। আমাদের একটা সম্পর্ক ফেল করেছে মানে এই নয় যে বন্ধুত্ব থাকবে না। আমাদের মেয়েকে আমরা দু’জনেই খুব ভালবাসি। আমার মেয়ের মায়ের নামে তাই একটি শব্দও খারাপ বলব না। আমি মনে করি, আমরা দু’জন আলাদা থেকেও আয়রাকে সুন্দর ভাবে বড় হওয়ার সুযোগ করে দিতে পারি। এ ছাড়াও বিচ্ছেদের তিন বছর পেরিয়ে গিয়েছে। তখন আমার জীবনের কঠিন সময় ছিল। কিন্তু আমরা কেউই বাইরের মানুষের কথায় আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট করিনি। তাই বোধ হয় আমাদের সম্পর্কটা এতটা সহজ।

প্রশ্ন: কথা হয় মিথিলার সঙ্গে?

আমাদের প্রতিনিয়ত যোগাযোগ আছে। ওরা তো এখন সিকিমে। আয়রা বরফ দেখে ওখান থেকেই আমাকে ভিডিয়ো কল করেছিল।

প্রশ্ন: ভিডিয়ো কল তো হল, এ বার মেয়েকে দেখতে নিজে আসবেন তো?

হ্যাঁ। এই অতিমারির জন্য ভিসার সমস্যা কাটলেই যাব। তা ছাড়া আমি নতুন বছরে কলকাতায় গিয়ে কাজ করার রেজোলিউশন নিয়েছি।

প্রশ্ন: বেশির ভাগ মানুষই কিন্তু রেজোলিউশন রাখতে পারেন না…

না না। আমি রাখব। ২০২১ কলকাতার সঙ্গে আমার প্রেমের বছর (মৃদু হাসি)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tahsan Rahman Khan Singer Actor Bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE