টানা তিন বছর বাংলাদেশে ছিলেন। সম্প্রতি, দেশে ফিরেছেন চরকি ওয়েব প্ল্যাটফর্মের ‘কনটেন্ট হেড’ অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি পরিচালনার অভিজ্ঞতা তাঁর অনেক বছরের। তিনি ও পার বাংলা থেকে ফিরে নাকি একরাশ ‘ভয়’ নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন! কেন?
নিজের শহর তাঁকে কেমন অভ্যর্থনা জানাল? অনিন্দ্য কি নতুন কোনও কাজ শুরু করেছেন?
প্রশ্ন নিয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার ডট কম। অনিন্দ্যের কথায়, “গত তিন বছরে যেমন বদল ঘটেছে বাংলাদেশের বিনোদন দুনিয়ায়, একই ভাবে বদল ঘটেছে টলিউডেও। এই পরিবর্তনের দরকার ছিল। দেশে ফেরার পর থেকে সেই দিকগুলো নিয়েই আলোচনা চলছে অনেকের সঙ্গে।” তার পরেই রসিকতা জুড়েছেন, “ভয় পেয়ে বাংলাদেশ থেকে চলে এসেছি তা কিন্তু নয়। পরিচালনা থেকে অনেক দিন দূরে। তাই পুরনো কাজেই আবার ফিরতে চাই।” কথাপ্রসঙ্গে জানিয়েছেন, তিনি জি৫-এর জন্য মাইক্রো ড্রামা ‘ভয়’ বানিয়েছেন। ছেলে-বৌমা আর শাশুড়ির গল্প নিয়ে তৈরি ছোট নাটিকাটি। মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন শোলাঙ্কি রায়, লাবণী সরকার, প্রতীক দত্ত। এই মুহূর্তে বিশ্বে ‘মাইক্রো ড্রামা’ রমরমিয়ে চলছে। সেই ভাবনা থেকেই রহস্য-রোমাঞ্চ নাটিকার জন্ম।
লাবণী সরকার এবং প্রতীক দত্ত। ছবি: সংগৃহীত।
বাংলাদেশের ছোটপর্দায় ‘নাটক’ খুবই জনপ্রিয়। সেই জনপ্রিয়তাই কি এখানে ছড়িয়ে দিতে চাইছেন অনিন্দ্য? এককথায় সেই সম্ভাবনা যদিও নাকচ করে দিয়েছেন পরিচালক। তাঁর কথায়, “বাংলাদেশের ‘নাটক’-এ খুব ঘরোয়া, ছিমছাম গল্প থাকে। আমার গল্পে ‘ডার্ক থ্রিল’ রয়েছে। যেমন, বৌমা বিয়ে করে এসে জানতে পারবে, তার স্বামীর আগেও বিয়ে হয়েছিল। সেই স্ত্রীকে নাকি স্বামী আর শাশুড়ি মিলে মেরে ফেলেছে! শোনার পর থেকেই তার মনে ভয় জাঁকিয়ে বসে। এই গা ছমছমে অনুভূতি নিয়ে গল্প এগিয়েছে।” অনেক দিনের ব্যবধানে টলিউডে। তাই কাজ শুরুর আগে একটু দ্বিধায় ছিলেন অনিন্দ্য। “সেই দ্বিধা কাটিয়ে দিয়েছেন লাবণীদি, শোলাঙ্কি। প্রত্যেকে হইহই করে উঠলেন, আমরা তোর সঙ্গে কাজ করতে চাই। ফলে, সবাই মিলে হয়ে গেল কাজটা”, কাজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন পরিচালক।
দুই দেশে সমানতালে কাজ করার সুবিধা অনেক। দুই দেশের বিনোদন দুনিয়ার উন্নতি, দর্শকের পছন্দ-অপছন্দ, বাণিজ্য— ইত্যাদি জানা থাকে। ভারত-বাংলাদেশের বিনোদন দুনিয়ায় অনিন্দ্য কি অনেক ফারাক দেখলেন? দুই দেশের শিল্প-সংস্কৃতির মধ্যে যে ফারাক রয়েছে কথার শুরুতেই সেটা স্বীকার করে নিয়েছেন পরিচালক। তাঁর মতে, “বাংলাদেশে এখন অনেক ভাল কাজ হচ্ছে। একটা সময় বাংলাদেশের কাজ নিয়ে হাসিঠাট্টা হত। এই প্রজন্ম কিন্তু সেই ধারাকে আমূল বদলে দিয়েছে, যা দেখে নড়ে বসতে বাধ্য হয়েছে টলিউডও। তবে নাটকের দাপট আগের তুলনায় একটু হলেও কমেছে।” তার মানে ভারতের থেকে বাংলাদেশ ‘শিখেছে’ এমনও নয়। তারা নিজেদের মতো করে নিজেদের বদল ঘটিয়েছে। তা ছাড়া, দুই দেশের ভাষা, ব্যবসা-ও আলাদা। যেমন, ওখানকার পরিচালকেরা প্রচুর বিজ্ঞাপনী ছবি বানান। পাশাপাশি, তাঁরা বছরে একটি ভাল ছবি করেন। টলিউডে সেই উপায় নেই। ফলে, এখানকার পরিচালকেরা বছরে তিন-চারটি ছবি বানাতে বাধ্য।
আরও পড়ুন:
দুই দেশের যতই ফারাক থাক, যৌথ প্রযোজনায় একাধিক ছবি তার মধ্যেও তৈরি হচ্ছে। অনিন্দ্যও কি দুই দেশের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে বড়পর্দার ছবি বানাবেন? পরিচালকের পাল্টা প্রশ্ন, “কেন নয়?” অনিন্দ্য জানিয়েছেন, সাময়িক খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে হয়তো বাংলাদেশ গিয়েছে। এখন কিন্তু সেই পরিস্থিতি আর নেই। সেই জন্যই জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরী, তসনিয়া ফারিণ-সহ বাংলাদেশের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা এ দেশে এসে কাজ করে যাচ্ছেন। এই ভাবনা থেকে খুব তাড়াতাড়ি তিনিও বড় ছবিতে হাত রাখতে চলেছেন।