পুজোর আগে এই সময়টায় ওজন কমানোর তাড়া পড়ে। ঠিক যখন হাতে আর দেড় থেকে দু’মাস বাকি থাকে, যখন একটা একটা করে শাড়ি, জামা, কাপড় কেনা শুরু হয়, যখন শপিং মলের ট্রায়াল রুমে ঢুকে দেখা যায় জিন্সের পুরনো সাইজ়ে আঁটছে না কোমর। কিংবা পোশাক গায়ে হচ্ছে না। তখনই টনক নড়ে। ইন্টারনেটে ঘেঁটে বার করতে হয় দু’মাসে ৫ কেজি বা ১০ কেজি কমানোর উপায়। তাতে অবশ্য ভুল কিছু নেই!
বরং ফিটনেস প্রশিক্ষকেরা বলেন, দু’মাসে পাঁচ কেজি কমানোর ইচ্ছে ১০ দিনে ৫ কেজি কমানোর চেয়ে ঢের ভাল। প্রথমটি সম্ভব। দ্বিতীয়টিও। কিন্তু দ্বিতীয়টি অস্বাস্থ্যকর। অন্য দিকে মাস দু’য়েক সময় নিয়ে শরীরকে নানা ভাবে সইয়ে ওজন ঝরালে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। এমনকি, চাইলে এই দু’মাসের জন্য খাওয়াদাওয়ার অভ্যাসে বদল আনা যেতে পারে। ওজন ঝরানোর জন্য নানা নিয়মে উপোস করে সুফল পেয়েছেন বলিউডের তারকারা। তেমন কোনও পদ্ধতি নিতে অবলম্বন করতে চাইলে কোনটি বেছে নেবেন? পরামর্শ দিলেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং এমস প্রশিক্ষিত এক গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট সৌরভ শেঠি।
সৌরভ বর্তমানে আমেরিকান সোসাইটি অফ গ্যাস্ট্রোইন্টেসটাইনাল এন্ডোস্কপি এবং ইন্টারনাল মেডিসিনের অনুমোদিত চিকিৎসক। তাঁর অনুরাগীর তালিকায় রয়েছেন বলিউডের স্বাস্থ্যসচেতন নায়ক-নায়িকারাও। ইনস্টাগ্রামে সৌরভ জানিয়েছেন, উপোস করার তিনটি উপযোগী নিয়ম। যা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কার্যকরী।
১। ১২:১২
সৌরভ বলছেন কেউ যদি ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করার কথা ভেবে থাকেন, তবে ১৬:৮ ঘণ্টার নিয়মে না গিয়ে অর্থাৎ ১৬ ঘণ্টা উপোস আর ৮ ঘণ্টা খাওয়ার জন্য বরাদ্দ না করে ১২ ঘণ্টা উপোস এবং ১২ ঘণ্টা খাওয়ার জন্য বরাদ্দ করুন। সৌরভের মতে, উপোস করার এই নিয়মটি শরীরের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। এতে যেমন রাতে ঘুম ভাল হয়, যা ওজন কমানোর জন্য উপকারী, তেমনই এই নিয়মে শরীর খাবার হজম করার যথেষ্ট সময় পাবে। তাতে বিপাকের হার ভাল থাকবে। আর বিপাকের হার ভাল থাকলে শরীরে মেদ ঝরবে দ্রুত। এমনকি, পরের দিন অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ইচ্ছেও হবে কম।
২। উপোসের পানীয়
সৌরভ বলছেন যে সময়টি উপোস করছেন, সেই সময়ে কিছু খাবেন না ঠিকই কিন্তু কী পান করছেন, সে দিকে নজর রাখা জরুরি। তিনি বলছেন, ‘‘উপোসের ১২ ঘণ্টা সম্পূর্ণ ক্যালোরি মুক্ত পানীয় পান করার চেষ্টা করুন। কারণ শরীরে ক্যালোরি গেলেই উপোস ভঙ্গ হবে।’’ ওই সময়ে কী পান করতে পারেন, তার একটি তালিকাও দিয়েছেন সৌরভ। তিনি জানাচ্ছেন, যাঁরা ১২:১২ উপোস করছেন, তাঁরা উপোস চলাকালীন ব্ল্যাক কফি (চিনি ছাড়া), গ্রিন টি, চিনি ছাড়া চা, চিনি ছাড়া আদা চা, জল, অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার, চিনি বা মধু ছাড়া লেবুর জল, মৌরী ভেজানো জল বা তুলসী পাতা ভেজানো জল খেতে পারেন।
৩। খাবারে নজর
যে ১২ ঘণ্টা জুড়ে খাবার খাবেন, তখন কী খাবেন? তার পরামর্শও দিয়েছেন চিকিৎসক। তিনি বলছেন, ‘‘প্রোটিন বেশি আছে, ফাইবার বেশি আছে, এমন খাবার বেশি করে রাখুন ওই ১২ ঘণ্টার খাদ্যতালিকায়। পনির, টোফু, সয়াবড়ি, কাবলি ছোলা, মাছ, ডিম, মুরগির মাংস, ডাল এবং ফাইবার যুক্ত খাবার যেমন ফল, শাক-সব্জি বেশি করে খান।’’