বুড়িয়ে যেতে কে-ই বা চায়? যিনি বাহ্যিক রূপ নিয়ে তত চিন্তিত নন বলে দাবি করেন, তিনিও মানসিক ভাবে সতেজ থাকতে চান। দূরে রাখতে চান অসুখের ভোগান্তিকে। বয়স হলেও ‘বয়স্ক’ হতে চান না।
বয়স ধরে রাখার নানা উপায় তাই নানা জনে, নানা ভাবে বাজারে নিয়ে আসছেন। কেউ বলছেন ওষুধ খেয়ে বয়সকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে। কেউ বলছেন, ভেজালহীন খাবার খেয়ে। কেউ বলছেন, সাত্ত্বিক আহারে শরীরকে সতেজ রাখা যাবে। কেউ বলছেন, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে শরীর থেকে বয়সের ছাপ মুছে ফেলতে। তবে সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে, বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকানোর আসল রাস্তা একটাই। আর তা নির্ভর করে, কে কী ভাবে সামাজিক জীবনযাপন করেন তার উপরে।
আরও পড়ুন:
এক শ্রেণির মানুষ একা থাকতেই ভালবাসেন। সামাজিক মেলামেশায় স্বচ্ছন্দ নন। আবার একটি শ্রেণি আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী, পরিচিতদের নিয়ে হইহই করে বাঁচতে ভালবাসেন। গবেষণা বলছে, এই দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়েন যাঁরা, তাঁরা মানসিক ভাবে তো বটেই, শারীরিক ভাবেও ভাল থাকেন।
গবেষণাটি করেছে আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়, হার্ভার্ড টিএইচ চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেল্থ-সহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং আমেরিকান মেডিক্যাল স্কুল। অন্তত হাজার দু’য়েক প্রাপ্তবয়স্কের জীবনযাপনের উপরে তারা নজর রেখেছিল দীর্ঘ দিন ধরে। পারিবারিক সম্পর্ক, সামাজিক মেলামেশা, আধ্যাত্মিক জীবন, কাছের মানুষজনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, বন্ধুত্ব— সব কিছুই খতিয়ে দেখে তথ্য সংগ্রহ করেন গবেষকেরা।
আরও পড়ুন:
সেই সব তথ্য মিলিয়ে দেখা গিয়েছে, যাঁরা সামাজিক ভাবে সক্রিয় থেকেছেন, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন বেশি, যাঁর বন্ধু-বান্ধব-পরিচিতদের পরিধি অনেক বেশি এবং তাঁদের সঙ্গে আনন্দে সময় কাটিয়েছেন, তাঁদের জৈবিক বয়স বাকিদের তুলনায় বেড়েছে ধীরগতিতে।
কেন এমন হয়েছে, তার একটি কারণও খুঁজে পেয়েছেন গবেষকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, বয়সবৃদ্ধির নেপথ্যে একটা বড় কারণ থাকে অনিয়ন্ত্রিত প্রদাহ এবং বেশ কিছু হরমোন, যেমন কর্টিসল এবং অ্যাড্রেনালিনের আচরণ। দেখা গিয়েছে, যাঁরা সামাজিক ভাবে সক্রিয়, তাঁদের শরীরে সার্বিক প্রদাহের মাত্রা বাকিদের থেকে কম থেকেছে নিয়মিত হারে। সামান্য প্রভাব দেখা গিয়েছে মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত হরমোনেও। গবেষকেরা বলছেন, এই প্রমাণটুকু এই সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর জন্য যথেষ্ট যে, সামাজিক জীবন স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে এবং তা বার্ধক্যকেও দূরে রাখতে কার্যকর।