দেহের আকার পরিবর্তনের জন্য অনেকেই জীবনে নানাবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন। কখনও সাফল্য এসেছে, কখনও বা ব্যর্থতা। তারকাদের তো হামেশাই রোগা হওয়া বা ‘টোনড বডি’ পাওয়ার জন্য কসরত করে চলতে হয়। অনুরাগীদের সামনে খুব সহজেই ‘পরিবর্তনের আগে’র ও ‘পরিবর্তনের পরে’র ছবি তুলে ধরা হয়। কিন্তু তার আড়ালের বাস্তব লড়াইয়ের কথা ক’জনই বা জানতে পারে? অভিনেত্রী আলায়া এফ-এর সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা সেই আড়ালের গল্পটাই নতুন করে প্রকাশ্যে এনেছেন। পূজা বেদীর কন্যা সম্প্রতি ৭৫ দিনের কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন। তার ৭৪-তম দিনে এই যাত্রার কথা তুলে ধরলেন আলায়া।
ফিটনেস প্রোগ্রামে আলায়া। ছবি: সংগৃহীত।
কী এই ৭৫ দিনের ‘হার্ড চ্যালেঞ্জ’?
এটি মানসিক দৃঢ়তা বাড়ানোর এক প্রকার কর্মসূচি। এটি জনপ্রিয় এক ফিটনেস প্রোগ্রাম, যা ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করছে বিশ্ব জুড়ে। এতে কঠোর নিয়ম রোজ মেনে চলতে হয়। চিট ডে, অ্যালকোহল ছাড়া নির্দিষ্ট ডায়েট মনে চলতে হয়। দিনে দু’ বার একটানা ৪৫ মিনিটের শরীরচর্চা করতে হয়। প্রচুর পরিমাণে জল পান করতে হয়। রোজ অন্তত ১০ পাতা করে প্রবন্ধের বই পড়তে হয়। শরীরে কেমন বদল ঘটছে, তা বোঝার জন্য প্রতি দিন নিজের শরীরের ছবি তুলে রাখতে হয়। এমন ফিটনেস যাত্রায় দ্বিতীয় বার পথ হাঁটলেন অভিনেত্রী। প্রথম বার ৭৫ দিনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে খুবই সহজ মনে হয়েছিল। ব্যায়াম, খাদ্যাভ্যাস, শৃঙ্খলা— সবই যেন তাল মিলিয়ে এগোচ্ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় বার মাঠে নামতেই বুঝলেন, অতখানি সহজও নয়। শরীর কতটা বদলে গিয়েছে, মানসিক ভাবে কী কী পরিবর্তন এসেছে, এ সমস্ত উন্নতি এবং এগিয়ে যাওয়ার গল্প বললেন না আলায়া। বরং দ্বিতীয় বার এই যাত্রায় কী অভিজ্ঞতা হল, সেটি বলার জন্যই ভিডিয়ো করেন নায়িকা।
সাধারণত সব সময়েই টোনড বডিতেই দেখা যায় আলায়াকে। সরু কোমর, মেদহীন, চর্বিহীন পেট। কিন্তু আশ্চর্যজনক ঘটনা, এই চ্যালেঞ্জের পথে হাঁটতে গিয়ে বেশ খানিকটা ফুলে গিয়েছিল পেট। যাকে ভুঁড়ি বলেও ভুল বলা হয় না। আলায়ার কথায়, ‘‘এই ৭৫ দিনে আমার দেহ, শরীরের আকার মোটেও দেখার মতো ছিল না।’’ কারণটি খুঁজে বার করতে সময় লেগেছিল প্রায় তিনটি মাস। একের পর এক পরীক্ষানিরীক্ষা করেও রোগ শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। শেষে জানা যায়, ‘এসআইবিও’ বা ‘স্মল ইনটেস্টাইনাল ব্যাক্টেরিয়াল ওভারগ্রোথ’-এ ভুগছেন তিনি। যেখানে বড় অন্ত্রের জীবাণু ছোট অন্ত্রে চলে এলে পেটফাঁপার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। পাশাপাশি শরীর জুড়ে ক্লান্তি, প্রদাহ, পেশির দুর্বলতা, পুষ্টি শোষণে সমস্যা, শক্তি কমে যাওয়া আর মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দেয়। ৫০ দিনের বেশি সময় ধরে তাঁকে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হচ্ছে। ৭৫ দিনের চ্যালেঞ্জের মাঝে এমন রোগ ধরা পড়ার ফলে আরও বিপাকে পড়তে হয়েছিল আলায়াকে।
অভিনেত্রী জানাচ্ছেন, প্রথম বার ৭৫ দিনের চ্যালেঞ্জের মাঝে নিজের শরীরকে গড়ে উঠত, বদলাতে দেখেছিলেন আলায়া। এ বার কোনও রকম অগ্রগতি লক্ষ করা যায়নি। ছিল কেবল ‘এসআইবিও’-র উপসর্গ। আগের বার অনেক বেশি পরিশ্রম করেছিলেন আলায়া। তাঁর কথায়, ‘‘জীবনে সব ঠিকঠাক চললে নিজের প্রতি গর্ব করা সহজ হয়, কিন্তু কিছুই যখন ঠিক নেই, তখন নিজেকে নিয়ে গর্ব করতে পারাটাই বড় শিক্ষা। এটা শিখে যেতে পারলে জীবনটাই বদলে যেতে পারে।’’ আর এই অভিজ্ঞতা তাঁকে স্পষ্ট বুঝিয়েছে, শৃঙ্খলার আসল শক্তি ধারাবাহিকতায়, নিয়মানুবর্তিতায়।