ডায়াবিটিস মানেই খাওয়াদাওয়ায় বিধিনিষেধ। সাধের ভাত বা মিষ্টি বাদই দিয়ে দিতে হয়। রক্তে শর্করার মাত্রা যদি অনেকখানি বেশি হয়, তা হলে ভাত খেতে বারণ করে দেন চিকিৎসকেরা। বাঙালি বাড়িতে দুপুরের খাওয়া মানেই ভাত অথবা রুটি। তাই সেটি বন্ধ হয়ে গেলে খাওয়াদাওয়া আর ভাল লাগে না। ভাতের বিকল্প হিসেবে রাগি বা ওট্সও যে সব সময়ে ভাল লাগে, তা নয়। তাই যদি ভাত খেতে না পারেন,তা হলে এর বিকল্প হিসেবে ভুট্টা খাওয়া যেতে পারে।
ডায়াবিটিসে ভুট্টা খাওয়া যায় কি না, সে নিয়ে প্রশ্ন অনেকেরই। ভুট্টায় গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, কাজেই ভুট্টা ডায়াবেটিকদের জন্য স্বাস্থ্যকর। শুধু পুড়িয়েই নয়, ভুট্টাকে নানা ভাবে রান্নায় ব্যবহার করা যায়। কখনও সুইট কর্ন হিসেবে, বেবি কর্ন হিসেবে, আবার কখনও কর্ন ফ্লাওয়ার বা কর্ন অয়েল হিসেবেও ভুট্টার গুণ কাজে লাগানো যায়।
ভুট্টা কি ভাতের বিকল্প হতে পারে?
ভুট্টার মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন আছে। যদিও এগুলি প্রথম শ্রেণির প্রোটিন নয়। অর্থাৎ মাছ, মাংসে যে পরিমাণ প্রোটিন পাওয়া যায়, তেমন এতে নেই। তবে ভাতের চেয়ে ভুট্টায় প্রোটিনের পরিমাণ বেশি। এসেনশিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিডের মধ্যে লাইসিন আর ট্রিপটোফ্যান আছে এতে। আর আছে বিটা ক্যারোটিন অর্থাৎ, ভিটামিন এ আর থায়ামিন অর্থাৎ, ভিটামিন বি। ভুট্টায় ভিটামিন সি-র পাশাপাশি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টও আছে। ফলে, রোগ প্রতিরোধের জন্যও তা উপকারী। এতে ফাইবারের মাত্রা বেশি, কাজেই ডায়াবিটিসের রোগীদের জন্য ভুট্টা ভাল। আবার যাঁরা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন, তাঁরাও ভুট্টা খেলে উপকৃত হবেন।
ডায়াবিটিসে ভুট্টা কী ভাবে খেলে উপকার হবে?
গ্রিল্ড কর্ন
ভুট্টা গ্রিল করে বা পুড়িয়ে তাতে লেবুর রস ও বিটনুন মিশিয়ে খেতে পারেন। গ্রিল্ড কর্ন খেলে হজমের সমস্যা দূর হবে।
সেদ্ধ ভুট্টা
ভুট্টা খাওয়ার সবচেয়ে সহজ এবং স্বাস্থ্যকর উপায় হল সেদ্ধ করে খাওয়া। এতে কোনো অতিরিক্ত তেল বা মশলা যোগ হয় না। ভুট্টার দানা বা আস্ত ভুট্টা সেদ্ধ করে নিন। এটিকে সামান্য লবণ এবং এক চিমটে গোলমরিচ দিয়ে খেতে পারেন। অথবা আদার রস, লেবুর রস, পুদিনা পাতা দিয়েও দিব্যি খাওয়া যায়। সেদ্ধ ভুট্টায় ফাইবার অক্ষত থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে দেয় না।
ভুট্টা ও ছোলার স্যালাড
ছোলা প্রোটিন ও ফাইবারের ভাল উৎস। ভুট্টার সঙ্গে খেলে উপকার হবে। সেদ্ধ ভুট্টার দানার সঙ্গে সেদ্ধ ছোলা, শসা, টম্যাটো, পেঁয়াজ, লেবুর রস এবং সামান্য নুন মিশিয়ে পুষ্টিকর স্যালাড তৈরি করে খেতে পারেন।
ভুট্টা দিয়ে স্যুপ
কম ক্যালরির সব্জি, যেমন ব্রকোলি, পালং শাক, গাজর ইত্যাদির সঙ্গে ভুট্টার দানা মিশিয়ে স্যুপ তৈরি করতে পারেন। এই স্যুপ খুবই পুষ্টিকর হয়। তবে এতে অতিরিক্ত ক্রিম বা তেল না মেশানোই ভাল।
বেবি কর্নের স্যালাড
বেবি কর্নে ভিটামিন এ, সি, বি, ই প্রচুর থাকে। সবচেয়ে বড় কথা, পরিণত হওয়ার আগেই যেহেতু এটি ব্যবহার করা হয়, সে কারণে এতে কোনও ফ্যাট নেই। ক্যালরিও কম এবং লো-কার্ব। ফলে, ওজন কমাতে চাইলে সুইট কর্নের বদলে বেবি কর্ন খেতে পারেন। এর সঙ্গে শসা, পেঁয়াজ মিশিয়ে স্যালাডও বানানো যেতে পারে।