Advertisement
E-Paper

মানসিক চাপ থেকেও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে! কী কী করলে ঝুঁকি কমবে, পাবেন সুস্থ জীবন?

হার্ট অ্যাটাককে বলা হয় ‘সাইলেন্ট কিলার’। কারণ, বহু ক্ষেত্রেই হার্ট অ্যাটাক জানান দিয়ে আসে না। নিঃশব্দে বাড়তে থাকে হৃদ্‌রোগ। হঠাৎ একদিন আঘাত হানে। অনেকে চিকিৎসার সময়টুকু পান না, আবার কখনও সময় পেলেও বাঁচানো যায় না রোগীকে।

ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২৫ ১৪:০০
Share
Save

মনখারাপ কথাটি হালকা মনে হতে পারে। তবে এর প্রভাব আর যা-ই হোক, হালকা নয়। মনখারাপ থেকে হওয়া মানসিক যন্ত্রণা, মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের ফল শুধু মনে আটকে থাকে না। তার প্রভাবে প্রাণঘাতী অসুখও হতে পারে!

চিকিৎসকেরা আকছার বলেন, মন আর শরীর পরস্পরের সঙ্গে জুড়ে থাকে। মনখারাপ হলে শরীরও খারাপ হয়। বহু গবেষণাতেও দেখা গিয়েছে, মনের অসুখ অসুস্থ করে তুলেছে রোগীর শরীরকেও। এ বার চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মনের অসুখ থেকে হৃদ্‌রোগের মতো অসুখও হতে পারে, যা বাড়িয়ে দিতে পারে মারণ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি।

হার্ট অ্যাটাককে বলা হয় ‘সাইলেন্ট কিলার’। কারণ, বহু ক্ষেত্রেই হার্ট অ্যাটাক জানান দিয়ে আসে না। নিঃশব্দে বাড়তে থাকে হৃদ্‌রোগ। হঠাৎ একদিন আঘাত হানে। অনেকে চিকিৎসার সময়টুকু পান না। আবার কখনও সময় পেলেও বাঁচানো যায় না রোগীকে।

রোগের নাম স্ট্রেস কার্ডিয়ো মায়োপ্যাথি!

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি জার্নাল হার্ভার্ড হেল্থ পাবলিশিংয়ে বলা হচ্ছে, মানসিক চাপের জন্য হার্ট অ্যাটাকের সমস্যা হতে পারে। তাকে বলা হয় স্ট্রেস কার্ডিয়ো মায়োপ্যাথি বা টাকোসুবো কার্ডিয়ো মায়োপ্যাথি। ওই জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‘‘সাধারণ ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক হয় ধমনীতে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে হার্টের পেশি নষ্ট হয়ে গেলে। কিন্তু স্ট্রেস কার্ডিয়ো মায়োপ্যাথিতে সব ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ওই রকম নিয়ম মেনে হয় না। অনেক সময় সন্তানের মৃত্যু বা ওই ধরনের কোনও গুরুতর মানসিক চাপেও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। টাকোসুবো নামের এক জাপানি চিকিৎসক প্রথম এই ধরনের হার্ট অ্যাটাকের ব্যাখ্যা দেন। তার পর থেকে তাঁর নামেই স্ট্রেস কার্ডিয়ো মায়োপ্যাথির নামকরণ করা হয়।’’ নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনের ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত সংস্করণেও স্ট্রেস কার্ডিয়ো মায়োপ্যাথির কথা বলা হয়েছে। জানানো হয়েছে, তারা আমেরিকা এবং ইউরোপের ১৭৫০ জন স্ট্রেস কার্ডিয়ো মায়োপ্যাথিতে আক্রান্ত রোগীর কেস রিপোর্ট দেখেছেন। দেখা গিয়েছে, এঁদের মধ্যে ৯০ শতাংশই মহিলা। এবং অধিকাংশেরই হার্ট অ্যাটাক হয়েছে হঠাৎ পাওয়া কোনও মানসিক যন্ত্রণার কারণে।

মানসিক চাপ থেকে নানা ধরনের হার্টের রোগ

মানসিক চাপ থেকে হওয়া হার্টের রোগ সব সময় স্ট্রেস কার্ডিয়ো মায়োপ্যাথি না-ও হতে পারে। চিকিৎসকেরা বলছেন, অনেক সময় মানসিক চাপ থেকে অলক্ষ্যে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়তে শুরু করে, যা সহজে বোঝা যায় না। ভারতে এবং গোটা পৃথিবীতেও হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, হার্ট অ্যাটাকের আগে হার্টের রোগ ধরা পড়েনি রোগীর। চিকিৎসকেরা বলছেন, এই যে নিঃসারে শরীরে হৃদ্‌রোগের বাসা বাঁধা, দেখা যাবে এর শুরুটা অনেক ক্ষেত্রেই হয়েছে মানসিক চাপ থেকে।

পাহাড়প্রমাণ চাপেই হার্ট অ্যাটাকের বীজ বপন!

হৃদ্‌রোগের চিকিৎসক এম সুধাকর ইনস্টাগ্রামের এক ভিডিয়ো সাক্ষাৎকারে বলছেন, ‘‘এ যুগে অধিকাংশই নানা রকম মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন। কারও কর্মক্ষেত্রের সমস্যা থেকে মানসিক চাপ, কারও পারিবারিক নানা সমস্যা থেকে মানসিক সমস্যা, সমাজের কারণেও মানসিক যন্ত্রণায় কষ্ট পাওয়ার ঘটনা দেখা যায় আকছার। আর এঁদের অনেকেই জানেন না সেই চাপ সামলাতে হয় কী করে। অফিসে ডেডলাইন মিট করতে না পারা, ব্যক্তিগত জীবনে অশান্তি, বসের দুর্ব্যবহার— এই সব কিছুই ধীরে ধীরে একসঙ্গে জুড়তে জুড়তে তৈরি হয় পাহাড়প্রমাণ মানসিক চাপ, যা ক্রমে মনের সীমা পেরিয়ে শরীরে প্রভাব ফেলে। হৃদ্‌রোগের বীজ বপন করে শরীরে। বাড়িয়ে দেয় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি।’’

প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভেবে ভয় পেলে ক্ষতি বেশি!

চিকিৎসকেরা মাঝেমধ্যেই মানসিক চাপ মুক্ত হওয়ার কথা বলে থাকেন। মনকে হালকা রাখতে বলেন। কিন্তু বলা যত সহজ, কাজে করা ততটা সহজ নয়। কারণ, দৈনন্দিন যে সমস্ত বিষয়ের জন্য মানসিক যন্ত্রণার সূত্রপাত, তা হঠাৎ বদলে যাবে কী করে! হৃদ্‌রোগের আরও এক চিকিৎসক মৌলানা আজ়াদ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মোহিত গুপ্ত জানাচ্ছেন, মানসিক চাপে থাকা কিছু কিছু মানুষ যে কোনও পরিস্থিতি নিয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভেবে, নিজে থেকেই ভয় পেয়ে মানসিক যন্ত্রণা আরও বাড়িয়ে তোলেন। তাতেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় হার্ট। তিনি বলছেন, ‘‘নিজের এই দুর্বলতা বা সমস্যার কথা জানলে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। এ ছাড়াও দৈনন্দিন যাপনের যে রুটিন, তাতে কিছু পরিবর্তন এনেও মানসিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।’’

কী কী করতে পারেন?

১। হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন

শরীরকে সক্রিয় রাখাই হল সবচেয়ে বড় ওষুধ। এক জায়গায় বসে থাকলে শরীরে রোগের বৃদ্ধি দ্রুত হয়। তাই প্রতি দিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন। এতে মাথা পরিষ্কার হবে। মস্তিষ্ক থেকে সুখী হরমোন নিঃসৃত হবে। তবে হাঁটার বদলে আপনি এক ঘণ্টা বাড়িতে থেকে পছন্দের গানে নাচতে পারেন। যে কোনও শরীরচর্চা করতে পারেন।

২। শ্বাস নিন

নাহ্, শ্বাস নিতে আপনি ভুলছেন না! কিন্তু মন স্থির করে শুধু শ্বাস নেওয়াতেই মনোনিবেশ করা? সেটি হয়তো করেন না। আপাতদৃষ্টিতে বড় কিছু মনে না হলেও এর প্রভাব অনেক বেশি। চেষ্টা করে দেখতে পারেন। প্রথমে গভীর শ্বাস নিন। কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখুন। তার পরে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। আবার একই ভাবে শ্বাস নিন এবং ছাড়ুন। একে বলে ব্রিদিং এক্সারসাইজ়। মনোনিবেশ করে শ্বাসচর্চাও বলতে পারেন। তবে মানসিক উদ্বেগ, রাগ কমানোর জন্য এর জুড়ি নেই। মনোবিদেরাও আকছার এটি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বিনামূল্যে মানসিক থেকে চাপ মুক্ত হওয়ার এমন শক্তিশালী সমাধান সহজে পাবেন না।

৩। ধ্যান করুন

ধ্যান করা মানে মুনি-ঋষির মতো পদ্মাসনে বসা নয়। ধ্যান করা হল স্থির হয়ে নির্জনে এক জায়গায় নিজের মনের ভিতরে প্রবেশ করা। দিনে ১০ মিনিটের জন্য এক বার চোখ বন্ধ করে নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসে মন দিলে বা নিজের ভাবনাকে একটি বিন্দুতে এনে স্থির করতে পারলে দেখবেন, জীবনটা বদলে যাচ্ছে।

৪। কথা বলুন

মানুষের সঙ্গে কথা বলুন। যে কোনও মানুষ হতে পারেন। চেনা-অচেনা সবার সঙ্গে কথা বলুন। নিজেকে গুটিয়ে না রেখে ছড়িয়ে দিন। মোবাইলে কথা বলার পাশাপাশি সামনাসামনি কথা বলুন। পুরনো বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিন। ভাইবোনের সঙ্গে দেখা করুন। মানুষের সঙ্গে ভাব বিনিময়েও মন শান্ত হতে পারে।

৫। ছুটি নিন

অতি পরিশ্রমে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে ক্লান্তি বোধ করা অপরাধ নয়। সেই সমস্যাকে এড়িয়ে গেলে সমাধান হবে না। উল্টে কাজেও তার প্রভাব পড়বে। দরকার হলে ছুটি নিন। কোথাও বেড়িয়ে আসুন। কিংবা বাড়িতে বসে বই পড়ুন, সিনেমা দেখুন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা করুন। শুধু দৈনন্দিন একঘেয়েমি থেকে কয়েক দিনের মুক্তিও শরীরের ‘ব্যাটারি’কে আবার ‘রিচার্জ’ করতে পারে।

সোজা কথা, নিজের যত্ন নিন। নিজেকে ভাল রাখার চেষ্টা করুন। মানসিক চাপ কাটানোর জন্য দারুণ কিছু ভাবতে হবে তা নয়। অনেক সময় সামান্য উদাসীনতা, একটু বেড়ানো, একটু আনন্দের মুহূর্ত, একটু হাসিঠাট্টাও ম্যাজিক দেখাতে পারে।

Heart Attack Risk Mental Stress

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}